views

আলোচিত চরিত্র-২০১১ : ম্যানেজ মাস্টার আবুল 

Abul Hossain Wrote Letter to Mr. Zhang Chun

২০১১- সারা বছরজুড়েই নানান ঘটনা এবং ব্যক্তি আলোচনার প্রাণকেন্দ্র হয়ে ওঠে দেশজুড়ে। কিছু কিছু ঘটনা দেশের সীমানা ছাড়িয়েও যায়। এসব আলোচনা দেশের রাজনীতি এবং জনজীবনে নানান প্রভাবও ফেলে। ঘটনা হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাস, আদালতে কর্নেল তাহের হত্যার বিষয়ে রায় প্রদান, বাংলাদেশের মাটিতে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সফল আয়োজন, হরতালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ব্যবহার, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কাজ শুরু, গুপ্ত হত্যা, ভারতের টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ ও সরকারের নমনীয়তা, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন বিভক্তি, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি না হওয়াÑ সারা বছরজুড়েই আলোচনার উল্লেখযোগ্য বিষয় হয়েছিল। এসব ঘটনার পাশাপাশি ড. মুহম্মদ ইউনূস, ড. সেলিনা হায়াত আইভী ব্যক্তি হিসেবে বছরের প্রথম ও শেষার্ধে তুমুল আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। ড. মুহম্মদ ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে অপসারণ করা, নোবেল বিজয়ী একমাত্র বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদকে সরকার কর্তৃক নাস্তানাবুদ করার ঘটনা শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বিশেষ তোলপাড় তোলে।
বছরের শেষার্ধে এসে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দল প্রধানের ইচ্ছের বিপরীতে দাঁড়িয়ে জনতার শক্তির ওপর ভর করে ড. সেলিনা হায়াত আইভীর নাটকীয় বিজয়, প্রথম মহিলা সিটি মেয়র হিসেবে তাকেও আলোচনায় নিয়ে আসে।
এর বাইরে সারা বছরজুড়েই আলোচিত হতে থাকেন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন। বাস্তব পরিস্থিতি আর তার কথাÑ দুইয়ের মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধানের বিষয় বিবেচনায় নিলে সাহারা খাতুন সারা বছরজুড়েই আলোচিত ব্যক্তিত্ব। তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি পরিবর্তিত মন্ত্রী ফারুক খান। অর্থমন্ত্রী এমএ মুহিত, আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামের নামও সারা বছরজুড়ে আলোচিত হতে থাকে তাদের বালখিল্য এবং হাস্যকর কথা বলার জন্য। আলোচনায় উঠে আসে দেশের একমাত্র পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানও। কিন্তু এসব ব্যক্তিকে ছাপিয়ে যান আরেকজন মানুষ। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, উড়াল সেতু, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পÑ যোগাযোগ খাতের এই মেগাপ্রজেক্ট বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। একক এবং অদ্বিতীয় হয়ে উঠেন তার আকণ্ঠ হাসি আর নির্লিপ্ত আচরণে। সারা দেশজুড়ে সড়কের বেহাল দশা, সড়ক দুর্ঘটনায় একের পর এক মৃত্যুর ঘটনাকে উপেক্ষা করে, হাসি আর বেসুরো কথা দিয়ে তিনি যখন মন্ত্রিত্ব আঁকড়ে থাকতে বদ্ধপরিকর, অনড়Ñ ঠিক তখনই পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের বিষয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ আসে খোদ বিশ্বব্যাংক থেকে। বিশ্বব্যাংক বনাম বাংলাদেশ সরকার, পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বনাম সৈয়দ আবুল হোসেনের মন্ত্রিত্বÑ এই লড়াইয়ে সরকার, প্রধানমন্ত্রী দাঁড়িয়ে যান সৈয়দ আবুলের পক্ষে। চলে জোর বাহাস এবং পাল্টা লড়াই। শেষাবধি পরাভূত হয় ক্ষমতা কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রী বাধ্য হন সৈয়দ আবুলকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দিতে। কিন্তু মন্ত্রিসভার সদস্য থেকেই যান তিনি।
ক্ষমতাধর, রহস্যময়, সবাইকে ম্যানেজ করতে পটু, দেশের বড় প্রকল্পের কাজ শুরু করতে ব্যর্থ, দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে নিস্পৃহ, নিজেকে শতভাগ সৎ দাবি করা, সরকারের প্রিয় ব্যক্তিত্ব সৈয়দ আবুল হোসেনকে নিয়ে আলোচনা যেন শেষ হয়েও শেষ হয় না। সারা বছরজুড়ে দেশি ও বিদেশি মিডিয়াতেও আলোচিত হতে থাকেন তিনি বছরের শেষাবধি জুড়েও। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে সাম্প্রতিক সরিয়ে নেয়া মন্ত্রী, হালে বিজ্ঞান ও তথ্য যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন সাপ্তাহিক-এর সম্পাদকীয় বিভাগের বিবেচনায় বছরের আলোচিত চরিত্র। ম্যানেজ মাস্টার সৈয়দ আবুল হোসেন, ক্রিটিসাইজড পারসন অব দ্য ইয়ার ২০১১।
২.
মহাজোট সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলোর অন্যতম অগ্রাধিকার প্রকল্প ছিল পদ্মা সেতু। ক্ষমতা গ্রহণের শুরুতেই ২২ দিনের মাথায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের নকশা প্রণয়নে পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়। কথা ছিল ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে এই সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হবে। কিন্তু এই সেপ্টেম্বরেই বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ করে। তাদের অভিযোগ প্রকল্পের তদারকি ও ব্যবস্থাপনা পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি হয়। এ নিয়ে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির তদন্ত শুরু করে। তদারকি প্রতিষ্ঠান হিসেবে টেন্ডারে অংশ নেয়া কানাডীয় কোম্পানি এসএনসি-লাভালিনকে নিয়ে কানাডা পুলিশও তদন্ত শুরু করে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে দেয়া প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক জানায়, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বকালীন তৎকালীন মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সাকো ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের পক্ষে ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেয়ার বিনিময়ে কমিশন চাওয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত তথ্যপ্রমাণ বিশ্বব্যাংকের কাছে আছে। এর পরই বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সঙ্গে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক, জাপানি সাহায্য সংস্থা (জাইকা) পদ্মা সেতু প্রকল্পে সব ঋণ সহায়তা বন্ধ করে।
এ নিয়ে সরকার বিশেষত প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের পক্ষে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে নানান দেনদরবার চালালেও তা ব্যর্থ হয়। অনড় থাকে বিশ্বব্যাংক। পরবর্তীতে সৈয়দ আবুল হোসেনকে সরিয়ে দেয়া হয় যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে। দৃশ্যত বিশ্বব্যাংকের চাপের মুখে পরাভূত হয় বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু পরাভূত হয় না সৈয়দ আবুল হোসেন। মেগা প্রজেক্টের (পদ্মা সেতু, উড়াল সেতু, মেট্রোরেল, চার লেন প্রকল্প) স্বপ্ন বাস্তবায়নের ব্যর্থতা সত্ত্বেও, দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক সম্পাদক, সৈয়দ আবুল হোসেন মন্ত্রিসভায় থেকেই যান নতুন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে নানা গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ কেটে এনে তার হাতে তুলে দেবার প্রক্রিয়াও চলছে জোরেশোরে। যদিও এখন দেশে দুর্নীতি দমন কমিশন বিশ্বব্যাংকের তোলা দুর্নীতির বিষয়ে সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে।

৩.
বাংলাদেশের ইতিহাসে শুধু নয়, উপমহাদেশের ইতিহাসে সৈয়দ আবুল হোসেন একমাত্র মন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে যার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠান সরাসরি দুর্নীতির অভিযোগ আনে। উপমহাদেশে তিনিই একমাত্র সৌভাগ্যবান মন্ত্রী, যার দুর্নীতির কারণে পদ্মা সেতুর মতো একটি মেগাপ্রজেক্ট বন্ধ হয়ে গেলেও তার মন্ত্রিত্ব বহাল থাকে। সৈয়দ আবুল হোসেন বর্তমান মেয়াদে বাংলাদেশ সরকারের ক্ষমতাকেন্দ্রের আশীর্বাদপুষ্ট ব্যক্তিত্বের সেই সৌভাগ্যবান ব্যক্তি যাকে অপসারণের জন্য নাগরিক সমাজের পক্ষে আন্দোলন গড়ে উঠলেও সরকার তাকে স্বপদে বহাল রাখতে অনড়। সৈয়দ আবুল হোসেন সম্ভবত পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র মন্ত্রী, মন্ত্রিত্ব পাবার জন্য যাকে একটি দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রথম হতে হয় (গোলাম মাওলা রনি এমপির বরাতে পাওয়া গল্প, যেটি সমর্থন করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী)। তিনিই সম্ভবত সেই অদ্বিতীয় মানুষ, যখন তার বিরুদ্ধে দেশব্যাপী পদত্যাগের দাবি উঠছে, খোদ বিশ্বব্যাংক তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলছে, তখনও তিনি নির্বিকার থেকে বলছেন, তার যে দক্ষতা তাতে তাকে আরও ক’টি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে।

৪.
সৈয়দ আবুল হোসেন যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে শুধু ব্যর্থই নন, জনগণের সঙ্গে প্রতারণাও করেছেন। তার অযোগ্যতা আর দুর্নীতির কারণে পদ্মা সেতু প্রকল্পের মতো জনস্বার্থমূলক প্রকল্পই শুধু নয়, অন্যান্য বড় প্রকল্পগুলোও এ সরকারের মেয়াদে আর আলোর মুখ দেখবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। মহাজোট সরকারের নির্বাচনী এই প্রতিশ্রুতিসমূহ বাস্তবায়নে ব্যর্থ হবার জন্য এই একটি মানুষ দারুণতর ভাবে দায়ী। অথচ দেশের ক্ষমতাকেন্দ্র তার ওপর খুশি। বিশ্বব্যাংক, দেশের মানুষ, খোদ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার ওপর বিরক্ত, অখুশি অথচ বিগপাওয়ার হাউজ তার প্রতি সদয়। এর কারণ কি?
তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে এর উত্তর হচ্ছে, প্রচলিত রাজনীতিতে জেঁকে বসেছে গণতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র এবং স্বৈরতন্ত্রের ফাঁক গলে গড়ে ওঠা দুর্নীতিপরায়ণ রাজনৈতিক কর্তৃত্ব। এই দুর্নীতি চক্রের শক্তিমান অংশকে যারা হাতে রাখতে পারেন, যারা ছলেবলে কৌশলে, আর্থিক লেনদেনে এই চক্রকে খুশি রাখতে পারেন, তারাই গুড ম্যানেজার হয়ে রাজনীতিতে বড় অবস্থান পাকা করে নেন। হালে আফ্রিকার দেশে দেশে, একসময় ল্যাটিন আমেরিকার দেশে দেশে এই রাজনৈতিক ক্ষমতায়িত চক্রের উপস্থিতি দেখা গেছে। হালের বাংলাদেশের রাজনীতিও সেই দুষ্টচক্রে আটকা পড়ে গেছে। দুর্নীতি এবং ক্ষমতাকেন্দ্রের গাঁটছড়া এমন নিগড়ে বাঁধা, যে এদের কাছে দেশ, জনস্বার্থ, জনগণ, ভোটের বিচার কোনোটাই মুখ্য নয়। তারা ভেবে নেয় হাতে টাকা থাকলে সবাইকে, সব কিছুকে কেনা যাবে। এই ‘ক্রেতা রাজনীতি’ বাংলাদেশকে এখন ঘিরে ফেলেছে। দুর্নীতি আর ক্ষমতা একাকার হয়ে এখানকার রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে মিশে গেছে। বাংলাদেশের রাজনীতির এই সমাজ বাস্তবতার সাম্প্রতিক সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছেন সৈয়দ আবুল হোসেন। তিনি শুধু একজন ব্যক্তি নন, এই দুর্নীতিপরায়ণ ক্রেতা রাজনীতির একটি বৈশিষ্ট্যময় শক্তিমান চরিত্রও বটে।

৫.
সৈয়দ আবুল হোসেন। পিতা- সৈয়দ আতাহার আলী, মাতা- সৈয়দা সুফিয়া আলী। গ্রাম ও পোস্ট- ডাসার, উপজেলা- কালকিনী, জেলা- মাদারীপুর। আদিনিবাস মাদারীপুর থেকে ঢাকার গুলশান-২ এর ৯৬ নম্বর সড়কের ১৮ নম্বর বাসার বাসিন্দা এখন। জাতীয় সংসদের ২২০, মাদারীপুর-৩ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা এম.কম (ব্যবস্থাপনা)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭২ সালে অনুষ্ঠিত এম.কম (প্রিলিমিনারি) পরীক্ষায় এবং ১৯৭৪ সালে অনুষ্ঠিত এম.কম (চূড়ান্ত) পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ। পরবর্তীতে কর্মজীবন শুরু। এই কর্মজীবন কোথায় কি করেছেন তার বর্ণনা কোথাও তেমন পাওয়া যায় না। এমনকি তার মন্ত্রিসভার ওয়েবসাইটেও না। তবে ১৯৭৫ সালে ঢাকা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। এই মামলার বিষয়ে অনেক ধরনের গল্প চালু থাকলেও মামলার কাগজপত্তরের কোনো হদিস নেই।
তবে এরপর একে একে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে থাকেন তিনি। অর্থনৈতিক সাফল্য তার জীবনকে জড়িয়ে ধরে। অগাধ ধনসম্পত্তির মালিক হন। সাকো ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, ডিলিসিয়াস ফুড, রেইলিং কারস, পাওয়ার লিংক, হামরাই প্রেসÑ নামের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে তার সৌভাগ্যের পরশ দুয়ার খুলতে থাকে। পরবর্তীতে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের পরিচালক, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্চের সদস্য এবং মিডিয়াসিন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হন আলোচিত-সমালোচিত এই মানুষটি।
অগাধ ধন সম্পত্তির মালিক সৈয়দ আবুল হোসেন তার নির্বাচনী হলফনামায় (২০০৯) তথ্য দিয়েছেন, তিনি স্ত্রীর বাড়িতে বাস করেন। তার আবাসিক বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল, গ্যাস বিল বহন করেন স্ত্রী। বিদেশে পড়াশোনারত জ্যেষ্ঠ কন্যা সন্তানের পড়াশোনার খরচ বহন করে সে নিজে এবং তার প্রবাসী কাজিন ব্রাদার আত্মীয়স্বজন।
সদা মিষ্টি হাসির এই আবুল হোসেন একদিন এমপি থেকে প্রতিমন্ত্রী হয়ে বসেন। সেটা ১৯৯৬ সাল। ক্ষমতায় তখন শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ। প্রতিমন্ত্রীর লাল পাসপোর্ট গোপন করে ব্যবসার কাজে নিজের সবুজ পাসপোর্ট নিয়ে সিঙ্গাপুর গেলে মিডিয়া তা ফাঁস করে দেয়। হৈ হৈ রৈ রৈ শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী তাকে মন্ত্রিসভা থেকে অব্যাহতি দিতে বাধ্য হন।
১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভা থেকে পতিত সৈয়দ আবুল ২০০৯ সালে উঠে আসেন যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে। আওয়ামী লীগের বাঘা বাঘা নেতাদের পেছনে ফেলে মন্ত্রী হবার দৌড়ে এগিয়ে যান আবুল। অনেক পরে হলেও তরুণ এমপি গোলাম মাওলা রনির বরাতে জাতি জেনে যায়, দলীয় নেত্রীর নির্দেশে সত্যি সত্যিই এক দৌড় প্রতিযোগিতায় জিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার এই পুরস্কার পাওয়া।

৬.
২০০৭-২০০৮ সাল, দেশে তখন সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সৈয়দ আবুল হোসেন তখন সাকো ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ঐ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক তার স্ত্রী খাজা নার্গিস হোসেন, কন্যা সৈয়দা রুবাইয়াৎ হোসেন, সৈয়দা ইফফাত হোসেন। ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত সাকো ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডে ইতোমধ্যে বিদেশি নানা প্রতিষ্ঠানের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশের বৃহৎ বিদ্যুৎ প্রকল্প, খনিজ সম্পদ প্রকল্প, শিল্প প্রতিষ্ঠান, অবকাঠামো উন্নয়ন, ভূমি ও পানি ব্যবস্থাপনা, ট্রেডিং, তথ্য প্রযুক্তি ও টেলিকমিউনিকেশন সেক্টরে কাজ করছে। সাকো ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ঐ প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে সৈয়দ আবুল হোসেনের ভাষ্য, ‘ও ধস যধঢ়ঢ়ু ঃড় হড়ঃব ঃযধঃ রহ ঃযরং ংযড়ৎঃ ঢ়বৎরড়ফ ড়ভ ঃরসব, ড়ঁৎ ধংংরফঁড়ঁং (অধ্যবসায়ী) বভভড়ৎঃং ধহফ ফবঃবৎসরহধঃরড়হ যবষঢ়বফ ঝঐঅঈঙ ঃড় নবপড়সব ড়হব ড়ভ ঃযব ষবধফরহম নঁংরহবংং যড়ঁংবং রহ ইধহমষধফবংয. (১৬.১.২০০৯)
সৈয়দ আবুল হোসেনের প্রতিষ্ঠানের মূলমন্ত্র ‘ঞযব ঝশু রং ড়ঁৎ ষরসরঃ’ (আকাশ হচ্ছে আমাদের সীমানা)। সৈয়দ আবুল তাই হয়ত সব সময় আকাশ ছুতে চান। উচ্চসীমার এই আকাক্সক্ষা তাকে হয়ত তাই ক্ষমতাবানও করেছে। নইলে ২০০৭-২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতাকর্মীরা যখন জেলে, অথবা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, তখন সৈয়দ আবুল হোসেন সেনা কর্মকর্তাদের কাছে মুচলেকা দিয়ে শেখ হাসিনাকে স্বৈরতন্ত্র ও পরিবারতন্ত্র কায়েমকারী হিসেবে চিহ্নিত করে রাজনীতি থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। ৩০ ডিসেম্বর ২০০৭ সালে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা বরাবর তিনি লিখছেন,
‘শ্রদ্ধেয়া সভানেত্রী,
আমি বহুদিন ধরে গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের নামে স্বৈরতন্ত্র ও পরিবারতন্ত্র কায়েম করা হচ্ছে। আমি গণতন্ত্রের আদর্শে বিশ্বাসী বলে গণতন্ত্রের স্বার্থে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদকের পদ হতে এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সদস্য পদ হতে এই মুহূর্তে পদত্যাগ করলাম।’
স্বৈরতন্ত্র ও পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে শতভাগ সততায় গণতান্ত্রিক ভাবাপন্ন সৈয়দ আবুল দলীয় নেত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে ঐ চিঠিতে আরও লিখছেন,
‘আমার আদর্শ ও নীতির সঙ্গে আপনার ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নীতি ও আদর্শের বিরাট ফারাক হবার কারণে, আমি আপনার সংগঠন আওয়ামী লীগের সকল দায়িত্ব ও পদ থেকে এই মুহূর্তে পদত্যাগ করলাম।’
পরবর্তীতে মাত্র বছর দুয়েকের মাথায় শেখ হাসিনার সঙ্গে আবার নীতি আদর্শের মিল ঘটে সৈয়দ আবুলের। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার কেবিনেটে যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে যোগ দেন তিনি।

৭.
১০০% আবুল
১০০% শব্দটি সৈয়দ আবুলের খুব প্রিয় শব্দ। তিনি দাবি করেন তিনি শতভাগ সৎ মানুষ। ১০০% অনেস্ট। শতভাগ দক্ষ মানুষ তিনি এই আত্মবিশ্বাসও তার প্রবল। যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে তার বিরুদ্ধে যখন প্রবল সমালোচনা দেশজুড়ে এবং দেশের বাইরে তখনও তিনি বলছেন আরও অনেক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেবার যোগ্যতা, শক্তি ও সময় তার আছে। সহকর্মী গোলাম মাওলা রনি এমপির সঙ্গে কথাচ্ছলে তিনি বলছেন, ‘এতদিন ধরে এই যে কাজগুলো করছি এত দক্ষতার সঙ্গে, এই কাজ করার পরও আমার হাতে প্রচুর সময় থাকে। বিমান মন্ত্রণালয় চালাতে পারছে না তো আমাকে দিয়ে দিক, যদি নৌপরিবহনমন্ত্রী চালাতে না পারে তো আমাকে দিয়ে দিক। আমি সব চালাতে পারব। আমি দেখিয়ে দিতে চাই কীভাবে কাজ করতে হয়।’
যখন পদ্মাসেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংক তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলছে, তখন তিনি সাংবাদিকদের বলছেন, ‘ট্রুলি আমি ১০০% অনেস্ট মানুষ।’ এই ১০০% বিষয়ে তার এক ধরনের আসক্তি আছে। তার সংসদীয় এলাকায় নির্বাচনের পূর্বে ভোটারদের প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি এবং তার কি পরিমাণ অর্জন সম্ভব হয়েছিল এ প্রশ্নের বিবরণে তিনি হলফনামায় লিখছেনÑ এলাকার নিরক্ষরতা দূরীকরণ ও শিক্ষা বিস্তারে সহায়তা, অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তা, শান্তি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসনকে সহায়তা দান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায়Ñ প্রতিটি ক্ষেত্রে তার অর্জন ১০০%।
শুধু তাই নয়, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে থাকাকালীন তিনি সেখানকার আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিয়েছেন শতভাগ সততায়। আবার রাত-বিরাতে নিজের বাসায় বসে অফিস করেছেন তাদের নিয়েই। এ ক্ষেত্রেও ১০০% কার্যকর সৈয়দ আবুল।

৮.
চিঠির রাজা আবুল
১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফরকালে চীন সরকারের সঙ্গে খুলনায় ২১০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেন। সাপ্লায়ার্স ক্রেডিটে টার্ন কি ভিত্তিতে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ১৮/৪/২০০১ তারিখে পাওয়া একমাত্র দরপত্র দাখিল করে চীনের মেসার্স সিএমইসি (ঈযরহধ ঘধঃরড়হধষ গধপযরহবৎু ধহফ ঊয়ঁরঢ়সবহঃ ওসঢ়ড়ৎঃ ধহফ ঊীঢ়ড়ৎঃ ঈড়ৎঢ়ড়ৎধঃরড়হ-ঈগঊঈ)। এই কোম্পানি ইতোপূর্বে রাউজানে ১ ও ২ নং ইউনিটে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে নির্মাণ করে। রাউজান বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ ত্রুটি নিয়ে নানান অভিযোগ ওঠে। এ প্রেক্ষিতে সিএমইসির সঙ্গে পিডিবির কর্মকর্তারা নানারকম দেনদরবারে বসে। প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট উন্নততর যন্ত্রপাতি বসানোর প্রস্তাব দেয় পিডিবি। ঋণ প্রস্তাবের শর্তাদি নিয়ে দু’পক্ষে আলোচনা চলতে থাকে। সিএমইসির স্থানীয় এজেন্ট হিসেবে কাজ পান মেসার্স পাওয়ার রিসোর্সেস লিমিটেড। সাকো ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের কর্ণধার সৈয়দ আবুল হোসেন তখন আওয়ামী লীগের একজন এমপি। প্রতিমন্ত্রী হিসেবে পদচ্যুত। সরকারের উচ্চ মহলের সঙ্গে তার দারুণ দহরম মহরম। সিএমইসির লোকাল এজেন্ট হবার জন্য তিনি উঠে পড়ে লাগেন। সিএমইসি কর্তৃপক্ষকে তিনি চিঠি লিখে জানান এই কাজ পেতে গেলে সরকারের উপর মহলসহ সর্বত্র ম্যানেজ করার জন্য তিনিই সর্বোত্তম ব্যক্তি।
৯ মে ২০১১, সিএমইসির বাংলাদেশস্থ চিফ রিপ্রেজেনটেটিভ গৎ. তযধহম ঈযঁহ-কে সৈয়দ আবুল হোসেন লিখছেনÑ ঘড়ি ধ ফধুং, রঃ যধং নবপড়সব ড়হ ড়ঢ়বহ ংবপৎবঃ ঃযধঃ রিঃযড়ঁঃ পষড়ংব পড়হঃধপঃং ধঃ ধষষ ষবাবষং ড়ভ ঃযব ঊসঢ়ষড়ুবৎ, ংঃৎড়হম ঢ়বৎংঁধংরড়হ ধহফ ঢ়ড়ষরঃরপধষ রহভষঁবহপব ড়ভ ঃযব ষড়পধষ ধমবহঃ, রঃ রং য়ঁরঃব রস ঢ়ড়ংংরনষব ঃড় সধঃবৎরধষরুব ধ নঁংরহবংং ড়ভ ংঁপয ধ নরম ঢ়ৎড়লবপঃ ষরশব কযঁষহধ ২১০গড চড়বিৎ চষধহঃ চৎড়লবপঃ.
(আজকের দিনে এটা কে না জানে, স্থানীয় এজেন্টের রাজনৈতিক ক্ষমতা, উপর মহলের সঙ্গে যোগাযোগ, দহরম মহরম না থাকলে খুলনা ২১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের মতো বড় প্রজেক্ট বাস্তবায়ন নেয়া প্রায় অসম্ভব।)
এটা দিয়ে শুরু করে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে গেলে কি কি সমস্যা আছে, সেগুলো কত বড় এসব বিস্তারিত জানিয়ে তিনি লিখছেনÑ
‘ও ধস পড়হভরফবহঃ ঃযধঃ রভ ুড়ঁ পড়হভরৎস ঃযধঃ ুড়ঁ ধৎব ধমৎববধনষব ঃড় ঁঃরষরুব ড়ঁৎ ংবৎারপবং বাবহ ধঃ ঃযরং ড়িৎংঃ ংরঃঁধঃরড়হ. ও রিষষ নব ধনষব ঃড় সধহধমব ঃযব মড়াবৎহসবহঃ ধহফ ঃযব রসঢ়ষবসবহঃরহম ধঁঃযড়ৎরঃু ঃড় ৎবপড়সসবহফ ভড়ৎ ধপপবঢ়ঃধহপব ড়ভ ুড়ঁৎ নরফ, রহ ংঢ়রঃব ড়ভ যধারহম ংড় সধহু ড়নংঃধপষবং ৎবমধৎফরহম নধফ ৎবঢ়ঁঃধঃরড়হ ড়ভ ুড়ঁৎ জধড়ুধহ চড়বিৎ চষধহঃং ধং বিষষ ধং ংরহমষব নরফ.’
(পরিস্থিতি তোমাদের যত প্রতিকূলেই থাকুক না কেন, রাউজানের কাজে তোমাদের যত বদনামই থাকুক না কেন, তুমি যদি আমার সার্ভিস নিতে রাজি থাক, আমি সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সবাইকে ম্যানেজ করে কাজটি যাতে তোমাদের প্রতিষ্ঠান পায় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারব, সেই আত্মবিশ্বাস আমার আছে।)

৯.
এই চিঠিতে সৈয়দ আবুল অভিযোগ তুলে বলছেন, আগের চিঠিতে আমার ক্ষমতা সম্পর্কে তোমাকে জানিয়েছি। তোমার লোকাল এজেন্ট যে এরকম একটি কাজ তোমাকে পাইয়ে দেবার ক্ষমতা রাখে না তা জানিয়েছি। এত কিছুর পর তোমাদের পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া মিলছে না। এমনকি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী আমার কোম্পানির সার্ভিস নেবার জন্য  তোমাদের সুপারিশ করেছে। তাতেও তোমরা কর্ণপাত করছ না। ইংরেজিতে সৈয়দ আবুলের ভাষ্য হচ্ছেÑ
‘ইঁঃ ও ফরফ হড়ঃ ৎবপবরাব ধহু ঢ়ড়ংরঃরাব ৎবংঢ়ড়হংব ভৎড়স ুড়ঁৎ ংরফব. গধু ও ৎবয়ঁবংঃ ুড়ঁ ঃড় ৎবপধষষ ঃযধঃ ঃযব পড়হপবৎহবফ গরহরংঃবৎ ধফারংবফ ুড়ঁ ভড়ৎ ঃধশরহম ঃযব ংঁঢ়ঢ়ড়ৎঃ ্ ংবৎারপবং ভড়ৎ ঝঅঐঈঙ ভড়ৎ ঃযরং ঢ়ৎড়লবপঃ নবভড়ৎব ংঁনসরংংরড়হ ড়ভ ঃযব ঃবহফবৎ. ইঁঃ বাবহ ঃযবহ, ঃযবৎব ধিং হড় ৎবংঢ়ড়হংব ভৎড়স ুড়ঁৎ বহফ.’
এই সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে খোদ মার্কিন রাষ্ট্রদূত তার দূতাবাস থেকে আমেরিকান সরকারের কাছে পাঠানো গোপন বার্তায় তার সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। তার বিরুদ্ধে অনলাইনজুড়ে নানা রঙ্গ, রসিকতা, কবিতা, ছড়া লেখা হয়েছে। তবুও তিনি সরকারপ্রধানের সুদৃষ্টি পাওয়া মানুষ। হয়ত সেই কৃতজ্ঞতায় নিজ গ্রামে সৈয়দ আবুল ‘শেখ হাসিনা একাডেমি অ্যান্ড উইমেন্স কলেজ’ তৈরি করেছেন!

১০.
২০০৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি চান সৈয়দ আবুল হোসেন। কিন্তু অব্যাহতি মিলে না তার। বরং এই পদে প্রায় অপরিহার্য হয়ে ওঠেন সৈয়দ আবুল হোসেন। বর্তমান কমিটিতেও তিনি একই পদে বহাল আছেন। দুর্নীতির অভিযোগ আর জনঅসন্তোষে তার মন্ত্রণালয় পরিবর্তন ঘটলেও সরকার সম্প্রতি উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন সেক্টর তার হাতে তুলে দেবার। তার জন্য সদ্য গঠিত নতুন ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে’ শক্তিশালী করছে সরকার। টেলিযোগাযোগ খাতের রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠান বিটিআরসি (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরি কমিশন) তার দায়িত্বাধীন মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনা হচ্ছে। সৈয়দ আবুল হোসেনের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সাকো ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের যেসব ব্যবসা আছে তার মধ্যে আইটি ও টেলিকম্যুনিকেশন অন্যতম। হয়ত সে অভিজ্ঞতার কারণেই প্রধানমন্ত্রী বিবেচনা করছেন এই খাতটি তার হাতে উঠিয়ে দিতে। আশা করা যায় নতুন বছরে বাংলাদেশের টেলিকমিউনিকেশন খাতে আরও অনেক নতুন ঘটনা ঘটবে পদ্মা সেতুর আদলে!!
১১.
সৈয়দ আবুল হোসেন ২০১১ জুড়ে আলোচিত থেকেছেন। রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তার কর্তৃত্ব না থাকলেও, রাজনৈতিক সরকারকে কব্জা করে মন্ত্রিত্ব বজায় রেখে, ক্ষমতাবান থাকতে যে তার জুড়ি নেই তা এখন ‘ওপেন সিক্রেট’। তার জন্যই নতুন মন্ত্রণালয় তৈরি হয়েছে। তার জন্য নতুন মন্ত্রণালয়কে শক্তিমান করা হচ্ছে। সব সম্ভবের দেশে সৈয়দ আবুল হোসেন তাই নমস্য!! জয়তু ১০০% সফল ম্যানেজ মাস্টার সৈয়দ আবুল হোসেন!!

১২.
পুনশ্চঃ লেখাটি শেষ করতে চাই খুশবন্ত সিংয়ের একটি কৌতুক দিয়েÑ
ভারতের কেরালা রাজ্যের এক এমপি চ-ীগড়ে এসে তার পাঞ্জাবি মন্ত্রী বন্ধুর বাসভবনে উঠলেন। পুরনো বন্ধুর বিপুল বিত্তবৈভব আর প্রাচুর্য দেখে তিনি জানতে চাইলেন, কি করে তোমার পক্ষে এত টাকা করা সম্ভব হলো?
‘তুমি কি আসলেই ব্যাপারটা জানতে চাও?’
‘নিশ্চয়ই। বাড়তি জ্ঞান অবশ্যই আমাকে সাহায্য করবে।’
‘তাহলে আগামী কাল পর্যন্ত অপেক্ষা কর।’
পরদিন মন্ত্রী মহোদয় তার ব্যক্তিগত গাড়িতে এমপি বন্ধুকে উঠিয়ে হাইওয়ে দিয়ে কয়েক মাইল দূরে গিয়ে থামলেন। দু’জন গাড়ি থেকে নামলেন। মন্ত্রী দূরে উপত্যকার দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বললেন, ‘তুমি কি ওখানে একটি ব্রিজ দেখতে পাচ্ছ?’
‘হ্যাঁ’Ñ এমপি উত্তর দিলেন।
‘ওই ব্রিজ নির্মাণ ব্যয়ের অর্ধেক টাকা আমার পকেটে এসেছে।’
চার বছর পর পাঞ্জাবি তার মন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন। তিনি কেরালার ত্রিবেন্দ্রামে গিয়ে তার পুরনো বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। পুরনো বন্ধু তখন সেখানে মন্ত্রী হয়েছেন। পাঞ্জাবি বিস্ময় প্রকাশ করে বললেন, ‘তুমি তো আমাকেও হার মানিয়ে দিয়েছ। ক্রিস্টালের ঝাড়বাতি, ইটালিয়ান মার্বেল, সদ্য কেনা মার্সিডিজ। কি করে এসব সম্ভব হলো?’
মন্ত্রী বললেন, ‘আগামীকাল সব বলব।’
পরদিন সকালে মন্ত্রী তাকে হাইওয়ে দিয়ে নিয়ে গেলেন। এক স্থানে নামলেন। তারপর এক উপত্যকার দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বললেন, ‘ওখানে কি একটা ব্রিজ দেখতে পাচ্ছ?’
‘না, আমি তো কোনো ব্রিজ দেখছি না’Ñ পাঞ্জাবি বন্ধুর উত্তর।
মন্ত্রী বললেন, ‘ঠিকই বলেছ’।
‘ব্রিজের পুরো টাকাটাই আমার পকেটে এসেছে।

……………………………………………………………………………………………………………………………………………..

সব সামাজিক মাপকাঠিতেই বাংলাদেশের পেছনে ভারত : অমর্ত্য সেন

ঢাকা: নোবেলজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ভারত-বাংলাদেশের তুলনা করতে গিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ প্রায় সমস্ত সামাজিক মাপকাঠিতে ভারতকে পেছনে ফেলেছে।

মঙ্গলবার আনন্দাবাজার পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে অমর্ত্য সেন তার ‘ইউরোপের ভুলটা ভারত করেনি: আমাদের ব্যর্থতাও কিছু কম নয়’ প্রবন্ধে এ কথা লিখেছেন।

প্রবন্ধে তিনি লেখেন, ‘বাংলাদেশের সাফল্যের পেছনে একটা বড় ভূমিকা পালন করেছে সে দেশের বেসরকারি সংগঠনগুলির (এনজিও) জোরদার কর্মকাণ্ড। তাছাড়া, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনের কাজে বাংলাদেশের মেয়েরা যেভাবে কাজ করছেন, ভারত তার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেনি।’

ইউরোপের সাম্প্রতিক অর্থসঙ্কটের প্রসঙ্গ টেনে অমর্ত্য সেন ভারতের প্রশংসা করে লেখেন, ‘ইউরোপের আর্থিক সঙ্কটে আক্রান্ত দেশগুলির ধারণা, কৃচ্ছ্রসাধন করলেই তাদের সমস্যা দূর হবে। এই ভ্রান্তিবিলাস তাদের ক্রমশই আরও বড় সঙ্কটে ঠেলে দিচ্ছে। ভারত সেই তুলনায় বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু আয়বৃদ্ধিকে ব্যাপক সামাজিক উন্নয়নের কাজে লাগাতে আমরা মোটেই সফল হইনি।’

‘একটা গুরুত্বপূর্ণ সত্য এই যে, আর্থিক বৃদ্ধির গতি বাড়লে অর্থাৎ জাতীয় উৎপাদন তথা আয় যথেষ্ট বাড়লে সরকারি রাজস্ব যথেষ্ট বাড়ে। ইউরোপ-সহ গোটা দুনিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই সত্যকে কেন উপেক্ষা করা হচ্ছে, তা বিচার করে দেখা দরকার। দ্রুত আয়বৃদ্ধিই যে সরকারি রাজস্ব বাড়ানোর সহজতম উপায়, সেটা কিন্তু চিন, ভারত বা ব্রাজিলের মতো উন্নয়নশীল দেশে যথেষ্ট স্বীকৃতি পেয়েছে। এই সব দেশে উন্নয়নের সরকারি পরিকল্পনা রচনা করতে গিয়ে এই সম্পর্ককে বরাবরই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পশ্চিম দুনিয়ার সরকারি ঋণ এবং বাজেট ঘাটতি মোকাবিলার সদুপায় হিসাবেও আয়বৃদ্ধির ভূমিকা খুবই জোরদার। এ বিষয়ে ইতিহাসের শিক্ষাও বিশেষ প্রাসঙ্গিক। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ যখন শেষ হয়, তখন অনেক দেশেই সরকারের কাঁধে বিপুল ঋণের বোঝা। তা নিয়ে অনেকেরই বিরাট উদ্বেগ ছিল। কিন্তু অর্থনৈতিক অগ্রগতির হার বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই ঋণের চাপ দ্রুত কমে গিয়েছিল।’

ইউরোপের আর্থিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে কৃচ্ছ্রতাসাধনের নীতিগ্রহণ প্রসঙ্গে অমর্ত্য সেন বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনীতি নিয়ে নতুন করে বোঝাপড়ার যে উদ্যোগ চলছে, তার ফলে হয়তো দেশগুলির পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমন্বয়ের মাত্রা বাড়বে। সেটা নিশ্চয়ই প্রয়োজনীয়। আর্থিক সহযোগিতার পরিমাণ বাড়লে ব্যয়সংস্থানের সমূহ সঙ্কটও কিছুটা কাটতে পারে। কিন্তু অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার কীভাবে বাড়ানো যাবে তত্ত্বে নয়, বাস্তবে সে প্রশ্নের উত্তর এই উদ্যোগ থেকে খুব একটা মেলেনি।’

তিনি বলেন, ‘ভারত এবং দুনিয়ার অনেক অসচ্ছল দেশ যে চোখকান বুজে কৃচ্ছ্রসাধনের পথে হাঁটেনি, সে জন্য তাদের সাধুবাদ জানাতে হবে। ভারত বেশ কিছু মইয়ের সুযোগ নিতে পারেনি বটে, কিন্তু আমরা যে সাপুড়ের মোহনবাঁশির সুরে আকৃষ্ট হয়ে তার পিছু পিছু দৌড়াইনি, সেটা অবশ্যই বিশেষ সুখের কথা।’

ভারত ও চীনের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘তবে, বিভিন্ন দেশে সরকারি রাজস্বের অর্থ যেভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, তার মধ্যে অনেক তারতম্য আছে। সেটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যে দুটি দেশের তুলনা সব সময়েই করা হয়, সেই চীন এবং ভারতের কথা ধরা যাক। ভারতের আয়বৃদ্ধির গতি এখন চীনকে প্রায় ধরে ফেলেছে, কিন্তু চীন দৃশ্যত তার আয়বৃদ্ধিকে উন্নয়নের কাজে ভারতের তুলনায় অনেক ভালোভাবে ব্যবহার করছে। যেমন, স্বাস্থ্যের খাতে চীনের সরকারি ব্যয় ভারতের প্রায় পাঁচ গুণ। এটা ঠিকই যে, চীনের জনসংখ্যা ভারতের চেয়ে বেশি, মাথাপিছু আয়ও বেশি, কিন্তু আপেক্ষিক বিচারেও তারতম্যটা বজায় থাকে জিডিপির অনুপাতে চীনে স্বাস্থ্যখাতে ব্যয়ের মাত্রা ভারতের তুলনায় দেড় গুণেরও বেশি।’

‘কোন খাতে কত সরকারি ব্যয় বরাদ্দ হচ্ছে, তা এমনিতেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, কিন্তু তার একটা বাড়তি গুরুত্বও আছে। জনসাধারণের জীবনযাত্রার মান এবং বিভিন্ন ধরনের সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রতি একটা দেশ তার সরকার, এবং শেষ বিচারে তার রাজনৈতিক ব্যবস্থা কতটা মনোযোগী, এই বিষয়গুলিকে কতটা অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, সরকারি ব্যয়বরাদ্দের বিন্যাস থেকে তার একটা সঙ্কেত পাওয়া যায়। ভারতের জাতীয় আয় এখন চীনের প্রায় সমান গতিতেই বাড়ছে, অর্থাৎ আয়বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দুই দেশের অগ্রগতির ফারাক অনেক কমে এসেছে। কিন্তু দেশবাসীর গড় প্রত্যাশিত আয়ু, শিশু মৃত্যুর হার, স্কুলে পড়ার গড় সময়কাল, বিভিন্ন অসুখের প্রতিষেধক টিকার আওতায় থাকা শিশুর অনুপাত ইত্যাদি অধিকাংশ সামাজিক সূচকের মাপকাঠিতেই দু’দেশের ব্যবধান বেড়ে চলেছে। একটি দৃষ্টান্ত: চীনে এখন শতকরা ৯৭টি শিশুকে ডিপিটির (ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি এবং ধনুষ্টঙ্কার) প্রতিষেধক দেওয়া হয়, ভারতে মাত্র ৬৬ শতাংশ।’

বাংলাদেশসহ ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলো সম্পর্কে অমর্ত্য সেন বলেন, ‘তবে বিভিন্ন সামাজিক সূচকের বিচারে ভারত গত দু’দশকে, কেবল চীন নয়, দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলির, যেমন বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, এমনকী ভুটানের তুলনাতেও পিছিয়ে গেছে। বাংলাদেশ প্রায় সমস্ত সামাজিক মাপকাঠিতেই ভারতকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। বাংলাদেশের সাফল্যের পেছনে একটা বড় ভূমিকা পালন করেছে সে দেশের বেসরকারি সংগঠনগুলির (এনজিও) জোরদার কর্মকাণ্ড। তাছাড়া, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনের কাজে বাংলাদেশের মেয়েরা যেভাবে কাজ করছেন, ভারত তার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেনি।’

জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে অমর্ত্য সেন বলেন, ‘২০০০ সালে জাতিসংঘ যে “সহস্রাব্দের অঙ্গীকার” গ্রহণ করেছিল, তাতে উন্নয়নের অন্য কয়েকটি দিককেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়, যথা, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার। অর্থনৈতিক বৃদ্ধি হয়তো উন্নয়নের এই বৃহত্তর লক্ষ্যগুলি পূরণের কাজে বিশেষ সহায়ক হয় না, কিন্তু নীতি রচনার সময় আমাদের এই বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে যে, অন্য নানা উদ্দেশ্য সাধন করতে গিয়ে এই বৃহত্তর লক্ষ্যগুলিকে যেন অবহেলা করা না হয় বা সেগুলি পূরণের পথে বাধা সৃষ্টি করা না হয়। যেমন, ভারতে গণতন্ত্রের অনুশীলন অনেকাংশেই সফল সমাজের দরিদ্রতম বর্গের মানুষও রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রক্রিয়ায় যোগ দিতে আগ্রহী এবং তৎপর। গণতন্ত্রের এই ব্যাপক চর্চাকে ভারতবাসীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের পক্ষে অপ্রাসঙ্গিক মনে করার কোনও কারণ নেই।’

……………………………………………………………………………………………………………………………………………..

বছরের আলোচিত ৭ রাজকীয় বিয়ে

২০১১ সালের শুরুটাই হয়েছিল রাজসিক ঢংয়ে। রূপকথার রাজপুত্র উইলিয়াম আর কেট মিডলটনের স্বপ্নময় বিয়ে বিশ্বের কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। এ যাত্রায় আলোড়ন তুলেছেন ভুটানের রাজাও। তিনি দীর্ঘ প্রেমের পর পেমা ডাটসানকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে ঘরে তুলেছেন। তা নিয়ে বাংলাদেশসহ এশিয়াজুড়ে ছিল নানা উন্মাদনা। এখানে ২০১১ সালের রাজকীয় বিয়েগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:

উইলিয়াম-কেট: বৃটেন
কল্পনার সিন্ডালোর কাহিনী যদি বাস্তবে ঘটতো, তবে কি মজাই না হতো! সেই রূপকথার গল্পকেই, বাস্তবে রূপ দেয়ার নতুন কাহিনীর নাম উইলিয়াম-কেট বিয়ে। বৃটিশ রাজপরিবারের উত্তরাধিকারী প্রিন্স উইলিয়াম ও তার স্ত্রী কেট মিডলটনের রাজকীয় বিয়ে এ বছরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাগুলোর একটি। ২০১১ সালের সবচেয়ে জাঁকজমক ও আড়ম্বরপূর্ণ এ বিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ২৯শে এপ্রিল। লন্ডনের ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবেতে এজন্য নেয়া হয়েছিল সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সারা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ নিমন্ত্রণ পেয়েছিলেন এ বিয়েতে। ডিউক ও ডাচেস অব ক্যামব্রিজের শুভ পরিণয় দেখতে সারা বিশ্বের ৭২ কোটি মানুষ চোখ রেখেছিলেন অনলাইনে। টেলিভিশনের সামনে বসে অনুষ্ঠান দেখা কোটি কোটি দর্শকের কথা না হয় বাদই থাকলো। একটি ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে অনলাইনে একসঙ্গে বিশ্বের এতো দর্শক জড়ো হওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসও সে স্বীকৃতি জানাতে ভুলে যায়নি।

অ্যালবার্ট-চার্লিন: মনাকো
এ বছরের দ্বিতীয় রাজকীয় বিয়ের অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয় মনাকো রাজবংশে। গত ২রা জুলাই মনাকোর রাজকুমার প্রিন্স দ্বিতীয় অ্যালবার্ট বিয়ে করেন প্রিন্সেস চার্লিনকে। অলিম্পিক গেমসের সাবেক সাঁতারু চার্লিন। ধুমধামের কোন কমতি ছিল না এ আয়োজনে।

ফিলিপস-টিনডাল: স্কটল্যান্ড
বৃটেনের রাজবংশের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের জ্যেষ্ঠতম নাতনী জারা ফিলিপস বিয়ে করেন ইংল্যান্ডের জাতীয় রাগবি দলের ক্যাপ্টেন মাইক টিনডালকে। ৩০শে জুলাই স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গে এ রাজকীয় বিয়ের আয়োজন করা হয়।

ফ্রেডেরিক-সোফিয়া: জার্মানি
এ বছরের ২৭শে আগস্ট জার্মানির পোটসড্যামের স্যানসুসি রাজপ্রাসাদের গির্জায় প্রুশিয়ার জর্জ ফ্রেডেরিকের (৩৫) সঙ্গে প্রিন্সেস সোফি (৩৩) পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন।

ওয়াংচুক-পেমা: ভুটান
রাজকীয় বিয়ের আয়োজনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভুটানও পিছিয়ে নেই। বরং বিশ্ব গণমাধ্যমে বেশ ঘটা করেই প্রচার করা হয়েছিল ভুটানের পঞ্চম ‘ড্রাগন রাজা’ হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয় জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুকের সঙ্গে তার দীর্ঘ সময়ের বান্ধবী জেতসুঁ পেমার রাজকীয় বিয়ের প্রতিটি খবর। পেমা অবশ্য সাধারণ ঘরের মেয়ে। ওয়াংচুক ভুটানের ‘প্রিন্স চার্মিং’ বা আকর্ষণীয় রাজকুমার। তাদের এ বিয়েকে উইলিয়াম-কেটের বিয়ের সঙ্গে অনেকেই তুলনা করেছেন। এ যেন হিমালয় রাজবংশের রূপকথার কোন গল্প।

ইয়ুদানেগারা-বেনদারা: ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়ার ঐতিহাসিক ইয়োগিয়াকার্তা সুলতানাতে রাজবংশের শাসক সুলতান হামেংকুবুয়োনোর কনিষ্ঠতম কন্যা ও রাজকুমারী গুসতি ক্যানজেং রাতু বেনদারার সঙ্গে ক্যানজেং প্যাঙ্গেরান হারিয়ো ইয়ুদানেগারার বিয়ে বিশ্বের বহু মানুষের নজর কেড়েছিল। গত ১৮ই অক্টোবর জাভার ইয়োগিয়াকার্তা রাজপ্রাসাদে এ বিয়ের আয়োজন করা হয়।

অ্যালবা-অ্যালফন্সো: স্পেন
স্পেনের রাজকুমারী ডাচেস অব অ্যালবা ৮৫ বছর বয়সে বিয়ে করেন সরকারি কর্মচারী অ্যালফন্সো ডায়াজকে। স্পেনের সেভিল্লা রাজপ্রাসাদে অনুষ্ঠিত হয় এ রাজকীয় বিয়েটি।

…………………………………………………………………………………………………………..

পারসিক ড্রোননামা

‘পাখিটার দিকে আমরা কিছু এলোমেলো সংকেত পাঠাই। এতে পাখিটার মাথা যায় বিগড়ে। তখুনি ওটা ‘স্বয়ংক্রিয়ভাবে উড়তে শুরু করে। এক পর্যায়ে মাথা খাটানো বন্ধ করে দেয় পাখিটা। আর ইরানকে ভেবে বসলো তার অবতরণ ঘাঁটি।’

ডানা মেলা ঈগলের মতো পাখিটার নাম ড্রোন। আমেরিকার অনেকগুলো চোখের একটা। যে চোখের ডিকশনারিতে সার্বভৌমত্ব বলে কোনও শব্দ নেই। আছে কেবল অতি চালাকি। এবার সেই অতি চালাক চোখে দড়ি বেঁধে নিচে নামিয়ে লকারে ভরে বেশ করে চোখ টিপ দিল ইরান। যেদিন অক্ষত ড্রোনটার ছবি দেখাল দেশটার টিভি, সেদিন হোয়াইট হাউজের লোকগুলোর সামনে কোনো ক্যামেরা তাক করা না থাকলেও কিংকর্তব্যবিমূঢ চেহারাগুলো কল্পনা করতে খুব একটা কষ্ট করতে হয় না। মনে মনে যারা নিজেদের বিজ্ঞানীদের মুণ্ডপাত করে যাচ্ছিলেন। কোটি কোটি ডলার খরচা করে শেষে এই বানালি!

ইরানের এক প্রকৌশলী আবার ঘটা করে ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটরকে ব্যাখা করলেন, কীভাবে তারা মার্কিন গোয়েন্দাবিমানকে মাথায় হাত বুলিয়ে নিচে নামিয়ে আনলেন। শুরুর কথাগুলো তারই বলা।
একটি দু’টি নয়, ইরানের দাবি তারা যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি ও ইসরায়েলের চারটি চালকবিহীন বিমানকে মাটিতে নামিয়ে এনেছে। কিন্তু প্রশ্ন হল- সর্বোচ্চ প্রযুক্তির ওই বিমান নিয়ন্ত্রণের ইলেক্ট্রনিক কোড হ্যাক করলো কী করে পারসিকরা?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই ইরানি বিজ্ঞানী বললেন, ড্রোন যতই আধুনিক হোক না কেন, পথ চিনতে তাকে সেই আদ্যিকালের গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম ওরফে জিপিএস প্রযুক্তির কাছেই ধরণা দিতে হয়। আর সেই জিপিএস কাজ করে তিনটি আলাদা আলাদা স্যাটেলাইট থেকে নেওয়া অবস্থান নির্দেশক তথ্য নিয়ে। ওই সংকেতগুলোকে এলোমেলো করে দিতে ড্রোনের দিকে তাক করে এলোপাতাড়ি তরঙ্গ ছুড়েছেন ইরানি বিজ্ঞানীরা। যাকে বলে ‘নয়েজ’ তৈরি করা।
ওদিকে ড্রোনটার জিপিএস তরঙ্গ গ্রাহকযন্ত্রটা বুঝতে পারলো না, কোনটা তার কাজের তথ্য, আর কোনটা তরঙ্গ-দূষণ। এতে করে মার্কিনিদের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে ড্রোনটা ‘অটোপাইলট’ অবস্থায় চলে আসে। পরের কাজটা অবশ্য খানিকটা জটিল। আর তা হলো ড্রোনটাকে ভুল বুঝিয়ে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা। সেটাও করে দেখিয়েছে ইরান। একের পর এক কৃত্রিম জিপিএস সিগনাল পাঠিয়ে ড্রোনটাকে বুঝিয়ে দিল (সোজা কথায় যাকে বলে ‘টুপি পড়ানো’)- বাছা তুমি আফগানিস্তানে মার্কিন ঘাঁটির ঠিক উপরেই আছো, ভালোয় ভালোয় ল্যান্ড কর। ঠিক যেন কবিতার লাইন আওড়ে বুলবুলিকে খাঁচায় ভরেছেন পারস্যের কোনো কবি।

কিন্তু দৃশ্যপটের অপর পিঠে ‘নাদান পারিন্দা’ (অবুঝ পাখি) গুলোকে ঘরে আনতে একেবারেই রাজি নয় ওবামার সরকার। ১৩ ডিসেম্বর মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিওন প্যানেট্টা ফক্স নিউজকে বললেন, ইরানের পরমাণু কর্মকাণ্ডের ওপর নজরদারি চলবেই। প্যানেট্টা মশাই কি এটা জানেন না যে, ২০০৯ সালের জুনেই ইরান নিজস্ব ড্রোনের পরীক্ষা চালিয়েছে? যেটা কিনা রাডার ফাঁকি দিয়ে বোমাও ছুড়তে পারে! ক`দিন আগে ইরান আরও বানাল ‘রাদ’ আর ‘নাজির’ নামের দুই ধরনের বেশক’টা চালকবিহীন জঙ্গিবিমান। দুটোরই দেখার ক্ষমতা ঈগলের মতো বলে জানালেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী আহমদ বাহিদি। এমনকি ক’দিন পর নিজেদের ড্রোন অন্যদেশে বিক্রির কথাও বলেছেন বাহিদি!
ইরান যে আফগানিস্তান কিংবা ইরাক নয় তা জানা গেল দেশটির ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) এর ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার বিভাগের কর্মকর্তা জেনারেল মোহারাম গোলিজাদের কথাতেও।
গোলিজাদ বললেন, শুধু ড্রোন হ্যাকিং নিয়েই পড়ে নেই ইরান। জিপিএসচালিত মিসাইল ছিনিয়ে নেওয়ার কাজেও তারা অনেক দূর এগিয়েছে। আর কিছুদিন পর ছুটে আসা মিসাইলকে বোকা বানিয়ে লক্ষ্যচ্যুত করে পছন্দমতো জায়গায় পাঠিয়ে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারবে ইরানিরা! হোয়াইট হাউজ নিশ্চয়ই এসব খবর রাখে। হয়তো একারণেই ড্রোন আটকের পর ইরান নিয়ে তাদের ও ইসরায়েলের হম্বিতম্বি খানিকটা কমেছে।
মার্কিন সরকারের ভয়টা আরো বাড়িয়ে দিল সেই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইরানি বিজ্ঞানী। বলেছেন, আটক করা ড্রোনটার ‘ওপেন হার্ট সার্জারি’ বা করে আগ-পাশ-তলা খুলে সব জানার চেষ্টা করছেন তারা। পর্যবেক্ষকদের মতে, সামরিক প্রযুক্তিতে ইরান যেভাবে মিসাইল গতিতে এগিয়েছে তাতে বোধকরি আরকিউ-১৭০ মডেলের মতো ড্রোন বানাতে তাদের আর বেশিদিন লাগবে না।

এ তো গেল প্রাযুক্তিক যুদ্ধের কথা। ইরান কিন্তু রাজনৈতিক আক্রমণের ব্যাপারেও সজাগ। প্রযুক্তিতে সহসা মার্কিনিদের টপকে না গেলেও, কিছু দিক দিয়ে যদি ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সমান সমান হয়ে যায় তবে মার্কিন-বিরোধীরা ইরানের বাড়ানো হাত ধরতে খুব একটা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে বলে মনে হয় না। এরই মধ্যে শোনা গেল ইরানের কয়েকজন রাজনীতিক পাকিস্তানকে অনুরোধ করেছেন তারা যেন তাড়াতাড়ি আমেরিকার আঁচলের তলা থেকে বেরিয়ে ইরানের হাত ধরে। পাকিস্তানের জন্য যা কিনা দ্বিধায় পড়ে যাওয়ার মতো প্রস্তাব।

কেননা, এক সময়ের আত্মীয় আমেরিকা তো পাকিস্তানের জন্য দিন দিন কংস মামা হয়ে যাচ্ছে। এই সেদিন ন্যাটোর অতর্কিত হামলায় মারা গেল ২৮ পাকিস্তানি সেনা। অন্যদিকে চলতি সপ্তাতেই পাকিস্তানে জঙ্গিবাদ বিরোধী যুদ্ধে পূর্বপ্রস্তাবিত ৮৫ কোটি ডলার সাহায্যের ৬০ শতাংশই আটকে দিল মার্কিন কংগ্রেস। এ ধরনের পরিস্থিতিতে পাকি রাজনীতিকরা এও বললেন, চীন তাদের সঙ্গেই আছে।
এ ধরনের পরিস্থিতিতে বিষফোঁড়া হয়ে যদি মার্কিন বিরোধিতায় কথা আর কাজে আবার উত্তর কোরিয়াও যোগ দেয়, তবেই ষোলকলা পূর্ণ।
এদিকে, ইরানে জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের সদস্যদের হাতে গোয়েন্দা প্রতিবেদন এসেছে, আগামী নির্বাচনে ঝামেলা পাকানোর পাঁয়তারা করছে কয়েকটা পশ্চিমা দেশ। সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া সিআইএ এজেন্ট আমির মির্জা হেকমতিকে জিজ্ঞাসাবাদে হয়তো এ নিয়ে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসবে। তবে এতকিছুর পরও হোসনি মোবারক বা গাদ্দাফির সঙ্গে যেহেতু আহমাদিনেজাদকে মেলানো সম্ভব নয়, তাই ধরে নেয়া যায় দেশটির রাজনীতির আকাশে বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের আশংকাও নেই।

……………………………………………………………………………………………………………………………………………..

বাইক্কা বিলে ভিড় বাড়ছে পর্যটকদের

বাইক্কা বিল থেকে : পর্যটকদের কাছে ক্রমেই আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে বাইক্কা বিল। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা কিংবা অপ্রতুল পর্যটন সুবিধা- কোনো কিছুই নিসর্গপ্রেমীদের বাইক্কাবিলের অনিন্দ্য সৌন্দর্য সুধা উপভোগে বিরত রাখতে পারছে না।

বিপুল অতিথি পাখির কলতান আর দেশে বিলুপ্তির তালিকায় থাকা দেশীয় মাছ ও পাখি দেখতে এ বিলে কেবল সাধারণ পর্যটকরাই আসছেন তা নয়।

বাইক্কা বিলের বৈচিত্র দেখতে আসছেন দেশি-বিদেশি গবেষকরাও।  অনুপস্থিত পর্যটন সুবিধার মাঝেও বাইক্কা বিলে আসা প্রচণ্ড কৌতুহলী গবেষক-পর্যটকরা এর নিসর্গ পর্যবেক্ষণে শিশুর মত ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

বিচিত্র সব পাখি আর জলজ প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে বাইক্কা বিলে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও চোখে পড়বার মতো। সরকারিভাবে অভয়াশ্রম ঘোষণা ও বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারের সূত্র ধরে দিন দিন বাইক্কা বিলে পর্যটক উপস্থিতি আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দা ও অভয়াশ্রম রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিতদের।

BAIKKAসম্প্রতি বাইক্কা বিল সরেজমিনে গিয়ে বিভিন্ন বয়েসের পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। বাইক্কা বিলে বেড়াতে আসা সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের পঞ্চম বর্ষের ছাত্র শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘শহুরে জীবনযাপনের একঘেয়েমি দূর করতে প্রকৃতির কাছাকাছি আসতেই বাইক্কা বিলে এসেছি। অন্ততঃ একটি দিনের জন্য হারিয়ে যাবো প্রকৃতির কাছে।’
তবে তিনি বলেন, ‘এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই খারাপ। আমাদের প্রায় ৬ কিলোমিটার হেঁটে এখানে আসতে হয়েছে। তারপরও নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগের কাছে সেই কষ্ট কোনো বিষয় নয়। কিন্তু পর্যটন সুবিধা বাড়ানোর অজুহাতে বাইক্কা বিলে যাতে কোনো স্থাপনা নির্মাণ না করা হয়- ‌তা নিশ্চিত করা দরকার। প্রকৃতিকে আনডিস্টার্বড রাখা উচিত।’

BAIKKAরাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী সৈয়দ খালেদুর রহমান বাংলানিউজকে জানালেন সপরিবারে বাইক্কা বিল দেখার পর তার অনুভূতির কথা। তিনি বলেন, ‘এক কথায় অসাধারণ লেগেছে বাইক্কা বিল। ন্যাশনাল জিওগ্রাফি, অ্যানিমেল প্ল্যানেট প্রভৃতি চ্যানেলে পাখি-জীবজন্তু দেখি। আজকে বাস্তবে দেখতে পেলাম। অনেক আনন্দ পেয়েছি।’

২০০৩ সালে বাইক্কা বিলকে ‘দেশের গুরুত্বপূর্ণ মৎস্যক্ষেত্র’ ও ‘আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ পাখির আবাস’ বিবেচনায় এনে অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়। রাজধানী ঢাকা থেকে ২০০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে চা সম্বৃদ্ধ মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাইল হাওরের পূর্ব দিকে ১০০ হেক্টর জলাভূমি নিয়ে গঠিত বাইক্কা বিল।
অন্তর আর নয়ন মেলে যা দেখবেন বাইক্কা বিলে

BAIKKAমাছ ও পাখি ছাড়াও বাইক্কা বিলে পর্যটকদের বিমোহিত করবে জলজ প্রকৃতির সাহচর্যে জন্মানো নয়নাভিরাম সব ফুল ও লতাগুল্ম। বিলের কূলঘেঁষে দেখা মিলবে হাজারো পানা, শাপলা ও পদ্ম। এছাড়া বিরল প্রজাতির পানি সিঙ্গারা ও মাখনা রয়েছে বাইক্কা বিলে। সন্ধ্যায় বিলে দেখা যাবে বিচিত্র আকৃতির ড্রাগন ফ্লাই বা ফড়িং। জীবনের অধিকাংশ সময় পানির নিচে কাটানো এ প্রাণী পরিণত বয়েসে পানির উপরে উঠে পতঙ্গ আকৃতি ধারণ করে।

শীতকালে বাইক্কা বিলে পর্যটকদের মূল আকর্ষণ পাখি দর্শন। এ সময় বিলের সর্বত্র যেসব পাখির সরব উপস্থিতি মুগ্ধ করবে সবাইকে, এদের মধ্যে-পানকৌড়ি, কানিবক, ধলাবক আর গোবক অন্যতম। কম হলেও দেখা যাবে ধুপনি বক ও রাঙ্গা বকের। বিলের প্রবেশদ্বারে ও দক্ষিণ পার্শ্বে দেখা যাবে লম্বা পা’য়ের পাখি দলপিপি আর নেউপিপি। বিলের পশ্চিমে দেখা যাবে পান মুরগি ও বেগুনি কালেম। কোথাও দেখা যাবে কালামাথা কাস্তেচরা কাদামাটি ঘাটছে।

BAIKKAশীতে এই বিলে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে চলে আসা অতিথি পাখিদের অবাধ বিচরণ আর কলকাকলি নজর কাড়বে পাখিপ্রেমীদের। এদের মধ্যে গেওয়ালা বাটান, মেটেমাথা টিটি আর কালাপাখ ঠেঙ্গীর দেখা মিলবে অহরহই।

এদের বাইরে বাইক্কা বিলের স্থায়ী বাসিন্দা পাখিদের মধ্যে ধলাবালি হাঁস, শঙ্খচিল, ভূবনচিল অন্যতম। আঞ্চলিক অতিথি পাখিদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পাতি সরালি আর রাজ সরালি। বিদেশি পাখিদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাশিয়া তথা সাইবেরিয়া থেকে আসা মরচেরং, ভূঁতিহাঁস, গিরিয়া হাঁস এবং ল্যাঞ্জা হাঁস।
এ বিলের নিয়মিত অতিথি পাখি পান ভোলানি। বিপন্ন তালিকায় থাকা পালাশী কুড়া ঈগল পাওয়া যাবে এই বিলে। এশীয় অঞ্চল থেকে আসা গুটি ঈগলকেও নিশ্চিন্ত মনে উড়তে দেখা যাবে বাইক্কা বিলে। বিলের অন্যান্য পাখির মধ্যে, দাগি রাজহাঁস, খয়রা চখাচখি, উত্তুরে ল্যাঞ্জাহাঁস, পাকড়া কোকিল, নীললেজ সুইচোর, পাতি আবাবিল, দাগি ঘাসপাখি, বাংলা শকুন, পাতিচ্যাগা উল্লেখযোগ্য।
সরীসৃপদের মধ্যে সাপ ও স্বাদু পানির কচ্ছপ রয়েছে এই বিলে, তবে এদের সচারাচর দেখা পাওয়া কঠিন।

পথের দিশা

BAIKKAরাজধানী ঢাকাসহ দেশের যে কোনো স্থান থেকে ভ্রমণপিপাসু যে কেউ যেতে পারেন বাইক্কা বিলে। সড়ক ও রেলপথ- দু’ভাবে আসা যায় শ্রীমঙ্গলে। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে শ্রীমঙ্গল-মৌলভীবাজার সড়কে ৯ কিলোমিটার এসে বাইক্কা বিল অভয়াশ্রমের সাইনবোর্ড পাওয়া যাবে। বা’দিকে সরু রাস্তায় ৩ কিলোমিটার যাওয়ার পর ফের বাঁয়ে ০.৫ কিলোমিটার দূরে হাজীবাজার। বাজার সংলগ্ন সেতু পার হয়ে ডানে মোড় নিয়ে ০.৭ কিলোমিটার গেলেই রাস্তার ডানে পড়বে অভয়াশ্রম রক্ষণাবেক্ষণকারী আরএমও অফিস। এই অফিস থেকে মাটির রাস্তায় ৫ কিলোমিটার গেলে পৌঁছে যাবেন বাইক্কা বিল অভয়াশ্রম। বিলে প্রবেশ মূল্য মাত্র ৫ টাকা। পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে উঠার ফি ২০ টাকা আর নৌকা ভ্রমণ করতে চাইলে ঘণ্টা ৬০ টাকা ফি দিতে হবে।

……………………………………………………………………………………………………………………………………………..
অধ্যাপক গোলাম আযমের এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার:
অধ্যাপক গোলাম আযমের এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার
              আপনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়েছে এবং একটু আগেই আমরা জেনেছি যে, এই অভিযোগ আমলে নেয়ার প্রশ্নে আগামী ২৬ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আদেশ দিবেন, আপনার প্রতিক্রিয়াটা আমরা শুনতে চাই।
অধ্যাপক গোলাম আযম : আপনারা তো প্রশ্ন করবেন, আমি একটা প্রশ্নের জবাব পাচ্ছি না, সেটা হচ্ছে, একাত্তরের পরে ৩০ বছর পর্যন্ত কোনদিন আমাদেরকে যুদ্ধাপরাধী বলে নাই। যুদ্ধাপরাধারীরা তো ছিল, শেখ মুজিব সাহেব নিজেই এই ইস্যুর মীমাংসা করে দিয়ে গেছেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১৯৫ জন সেনা কর্মকর্তাকে তিনি যুদ্ধাপরাধী সাব্যস্ত করেছেন, তালিকাভূক্ত করেছেন, ঐ তালিকায় কোন সিভিলিয়ানের নাম ছিল না। এবং তাদেরকে বিচার করার জন্য একটা আইনও করেছিলেন। সে আইনটা দিয়ে এখন আমাদের বিচার করার চেষ্টা চলছে। তালিকা করলেন, বিচার করার জন্য আইন করলেন, কিন্তু সিমলায় গিয়ে ভূট্টোর সঙ্গে বৈঠক করে ওদেরকে মাফ করে বিদায় করে দিলেন। মাফ করে দিলেন। এরপরে যাদেরকে তিনি তাদের সহযোগী মনে করেছেন তাদেরকে নাম দিয়েছেন কলেবরেটর, সহযোগী। তাদের জন্য আইন করলেন। সে আইনে লাখ খানেক লোককে গ্রেফতার করলন। কিছু লোককে বিচার করলেন। তারপর দেখে যে কোন স্বাক্ষী প্রমাণ পাওয়া যায় না, তখন জেনারেল এ্যামনেস্টি, সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর এদেরকে মাফ করে দিলেন। তো, উনি তো এটার মীমাংসা করে দিয়ে গেলেন, যুদ্ধাপরাধী ইস্যুর মীমাংসা করে দিয়ে গেলেন, এখন ৩০ বছর পর; (এখন চল্লিশ বছর হয়ে গেল); ৪০ বছর পর এই ইস্যুটাকে আবার খাড়া করা হলো কেন?

এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করলাম। বিএনপি আওয়ামী লীগ জামায়াত একসাথে আন্দোলন করল, আমাদের সঙ্গে বৈঠকও করল, লিয়াঁজো কমিটির বৈঠকও করল, তখন তো আমরা যুদ্ধাপরাধী ছিলাম না। বিএনপি যখন ৯১ সালে ক্ষমতায় আসল, কেয়ারটেকার সিস্টেমে নির্বাচন হওয়ার কারনেই বিএনপি ক্ষমতায় আসলো। এরশাদের সময়ে যদি এরশাদের আন্ডারে ইলেকশন হতো তো এরশাদই ক্ষমতায় আসতো। তো এই সিস্টেমটাকে, কেয়ারটেকার সিস্টেমটাকে শাসনতন্ত্রে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য আমরা দাবী জানালাম। বিএনপি গর্ভমেন্ট এটা করতে রাজী হলো না। বিএনপি গর্ভমেন্ট কিন্তু আমাদের সমর্থনেই গভর্মেন্ট ফর্ম করতে পেরেছে। তাদের মেজরিটি ছিল না পুরা। এবসলিউট মেজরিটি ছিল না। কিন্তু তারা কিছুতেই এটা কনস্টিটিউশনের অর্ন্তভূক্ত করতে রাজী হলো না। তখন মাগুরা জেলার মহম্মদপুরের আ’লীগের একটা আসন উপনির্বাচনে বিএনপি এটা দখল করল, আ’লীগকে পাশ করতে দিল না। তখন আ’লীগ তাদের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত হয়ে এসেম্বলী (?) বয়কট করল, আর কেয়ারটেরার সরকারের দাবীতে আন্দোলন শুরু করলো। আর এই ইস্যুটাতো আমাদের, আমরা কেয়ারটেকার সিস্টেম সাজেস্ট করেছি। তো, আমরা তো এই ইস্যু নিয়ে চুপ করে থাকতে পারি না। আমরাও আ’লীগের সঙ্গে মিলে এই আন্দোলনে শরিক হলাম। ইস্যুটা আমাদের সেজন্য আমাদের চুপ করে থাকা আর স্বাভাবিক ছিল না। তখনও আমাদেরকে যুদ্ধাপরাধী বলা হয় নাই।

এ প্রশ্নের জবাব আমি তালাশ করে এক যায়গায় পেয়েছি। আপনারা এ কথা তাদের জিজ্ঞেস করেছেন কি না জানি না, আপনাদের জিজ্ঞেস করা উচিত তাদেরকে, যে তারা কেন ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে কখনো যুদ্ধাপরাধী বলা হয় নাই তাদেরকে, এদেরকে যুদ্ধাপরাধী বলা শুরু করলেন কেন? সেক্টর কমান্ডাররাও এর আগে কোনদিন এই অভিযোগ করে নাই, তো, আমি তালাশ করে পেলাম, এ প্রশ্নের জবাব যে, ২০০১ সালের যে নির্বাচন হলো, তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন (তত্ত্বাবধায়ক সরকারে অধীনে ৩য়?) ঐ নির্বাচনে বিএনপি আর জামায়াত একজোট হয়ে নির্বাচন করেছে। বিএনপি, জামায়াত, জাতীয়পার্টি আর ইসলামী ঐক্যজোট। তো, সেই ইলেকশনে, জামায়াতে ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোট মিলে ৫০টা আসনও প্রতিদ্বন্দীতা করে নাই, ৫০শের কমই। ৩০০ আসনের মধ্যে আড়াইশ আসনে এই দুই ইসলামী পার্টির পক্ষ থেকে কোন ইলেকশন করা হয় নি। সেখানে আওয়ামী লীগ আর বিএনপি। তো, ঐসব আসনে যে ইসলাম ভোটগুলি ছিল, আমাদের সমর্থক ছিল যারা, তাদের ভোটগুলি সব বিএনপি পেয়েছে। টোটালি দেখা গেল যে আ’লীগ বিএনপি ভোট সমান-সমান, ৪০%, ৪০%। বিএনপি সামান্য কিছু ভোট বেশী পেয়েছে ৪০% এ, ওয়ান পার্সেন্টও পায় নি। অথচ আসন সংখ্যার দিক থেকে আ’লীগ পেল ৫৮, আর বিএনপি পেল ১৯৭। এতো বড়ো পার্থক্য কেন হলো, সমান সমান ভোট পাওয়া সত্ত্বেও? এ পার্থক্য হয়েছে ইসলামী ভোটগুলি বিএনপি একতরফা পেয়েছে।

এরপর আরও ঘটনা হয়েছে, বিএনপি আর জামায়াত একত্র হলেই আ’লীগ ফেল করে। যেমন চট্টগ্রাম মেয়র ইলেকশনে হলো। জামায়াতের কেন্ডিডেট ছিল, বেগম জিয়া রিকোয়েস্ট করার কারনে জামায়াতে ইসলামী উইথড্র করলো। আর ১ লক্ষ ১০ হাজার ভোট বেশী পেয়ে বিএনপি কেন্ডিডেট পাশ করলো। আপনার সাংবাদিক, আপনার জানেন, সাংবাদিক ময়দানেও বিএনপি জামায়াত এক হলেই তারা মেজরিটি হয়ে যায়। সাংবাদিক সমিতিওতো এই যে বিভক্ত হয়ে গেছে এই কারনে। সুপ্রিমকোর্ট বার এসোসিয়েশন ইলেকশন, গত দুইটা ইলেকশনই জামায়াত বিএনপি এক হয়ে গেল আর আ’লীগ ফেল করলো। এরকভাবে বার এসোসিয়েশনগুলোতে, তারপর ইউনিভার্সিটি শিক্ষক সমিতি নির্বাচনে, তো আ’লীগ হিসাব করে দেখলো যে বিএনপি আর জামায়াত এক হলেই তারা পাশ করতে পারে না, সেজন্য জামায়াতকে রাজনীতি থেকে উৎখাত করতে হবে , যাতে জামায়াত বিএনপির সাথে যোগ দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে দাড়াতে না পারে। এটাই একমাত্র কারন যে জামায়াতে ইসলামীকে নেতৃত্বহীন করতে হবে, রাজনীতির ময়দানে তারা যাতে ভূমিকা রাখতে না পারেন সে ব্যবস্থা করতে হবে, একারনেই যুদ্ধাপরাধী গালিটা ২০০১ সালের নির্বাচনের পর চালু হয়েছে। এবং পাকিস্তানী আসল যুদ্ধাপরাধী যারা, তাদেরকে বিচারের জন্য যে আইন করা হয়েছিল সে আইনটা প্রয়োগ করে আমাদের বিরুদ্ধে বিচার করতে শুরু করেছে।

সাংবাদিকঃ আমরা তো জানি ১৯৯২ সালে গণ আদালত হয়েছিল, ১৯৯৪ সালে গণতদন্ত কশিশন হয়েছিল, সেই সময়টা তো আসছিল।
গোলাম আযমঃ এইটা একটা সেকশন করেছিল কিন্তু যুদ্ধাপরাধী শব্দ ব্যবহার করে নাই।

সাংবাদিকঃ প্রতীকি বিচার হয়েছিল।

সাংবাদিকঃ এবং আপনার বিরুদ্ধে ১৯৯২ সালের ২৬শে মার্চ সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে..

গোলাম আযমঃ যে ঘাতক নিমূর্ল কমিটি, জামায়াতে ইসলামীকে ঘাতক গালি দিয়েছে, কিন্তু যুদ্ধাপরাধী ইস্যু সামনে আনে নাই। রাজাকার বলে গালি দিয়ে কোন সময়, স্বাধীনতা বিরোধী বলেছে।

সাংবাদিকঃ এখন স্যার বিচারটা হচ্ছে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার। মানবতার বিরুদ্ধে যে কাজগুলি হয়েছে সেগুলির বিচার।

গোলাম আযমঃ হ্যা ঐটাই, মানবতাবিরোধী কাজটাকেই তো তারা যুদ্ধাপরাধ বলছে। দুইটা পরিভাষা তারা ব্যবহার করছে, আর ঐ আইনেই বিচার করছে যেটা যু্দ্ধাপরাধীদের জন্য করা হয়েছিল।

সাংবাদিকঃ এখন স্যার কালকে অভিযোগে আপনার বিরুদ্ধে ৫২টি অভিযোগ এনেছে এবং শতাধিক আপনার বিরুদ্ধে ঘটনার কথা বলেছে যে, সেগুলির ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কি?

গোলাম আযমঃ তো এগুলি, আমার বক্তব্য হলো যে, একটা অভিযোগ নয় সবগুলি অপবাদ, এলিগেশন। তো তারা এলিগেশন দিয়েছে, আমি কোর্টেও বলব, আমাকেতো কোর্টে হাজির করতে হবে, হাজির হতে হবে, আমি বলবো যে একটাও প্রমাণ করুক। আমি চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, একটাও প্রমাণ করতে পারবে না, ইনশাআল্লাহ। শুধু শুধু একটা অভিযোগের নামে অপবাদ যেতে পারে, প্রমাণ না দিতে পারলে এটার কি হবে? আমি নিশ্চিত যে প্রমাণ করতে পারবে না একটাও।

সাংবাদিকঃ তারা বলেছেন যে ২৫ মার্চ যে সার্চ লাইট একটা অপারেশন হয়েছিল, অপারেশন সার্চ লাইট, এর ঠিক ৪ দিন পরে আপনি এবং আপনার নেতৃত্বে কয়েকজন গিয়ে টিক্কাখানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন (৪ঠা এপ্রিল).

গোলাম আযমঃ আমার নেতৃত্বে না, নূরুল আমীন সাহেবের নেতৃত্বে। নেজামে ইসলাম পার্টি, মুসলিম লীগ; আমরা ওনার সঙ্গে দেখা করে বললাম যে, এই যে ২৫শে মার্চে যে আচরণ করা হয়েছে পাবলিককে মারা হয়েছে, এটা করলে তো জনগনের সমর্থন আপনারা পাবেন না, এটা কেন করলেন? তিনি বললেন যে, যে বিদ্রোহ হয়েছে, এ বিদ্রোহ দমন করার জন্য এটা ছাড়া আমাদের উপায় ছিল না। মানে নয়া বাজার পুরাই পুড়াইয়া দিয়েছে, ঐ যে কাঠের দোকান গুলো ছিল, এখন কি কাঠের দোকানগুলি আছে কি না আমি জানি না, সেগুলি সব পুড়াইয়া দিয়েছে, তারপরে শেল নিক্ষেপ করেছে, আমার বাড়ীতেও শেল এসে পড়েছে, তো, উনি বললেন যে আর হবে না, এই বিদ্রোহ দমন করার জন্য এটা করতে বাধ্য হয়েছি। তো, আমরা বললাম যে দেখেন, সেনাবাহিনী ময়দানে নামলে বাড়াবাড়ি তারা করে, দেশের সেনাবাহিনী দেশের জনগনের সঙ্গেও বাড়াবাড়ী করে, তো বাড়াবাড়ি করলে জনগন প্রতিকারের জন্য কার কাছে যাবে? রাজনৈতিক দলের কাছেই তো আসবে। তো, যেহেতু আ’লীগের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সব দেশ থেকে চলে গেছে সব ভারতে, এখন আমাদের কাছে তারা আসে, আমরা তাদেরকে কি করবো? আমরা এটুকু সুযোগ চাই যে, আমাদেরকে এ সুযোগ দেন, আমাদের কাছে যদি কোন কমপ্লেইন আসে, তাহলে যেন সে কমপ্লেইন আপনাদের কাছে পেশ করতে পারি এবং প্রতিকার করা সম্ভব হয়। তো ব্রি: রাও ফরমান আলী খান, উনি বসতেন গভর্নর হাউজে, যদিও টিক্কা খান গভর্নর ছিলেন এবং চীফ মার্শাল এডমিনিস্ট্রেটর ছিলেন, ইনি বসতেন ক্যান্টনমেন্টে। আমরা সেখানেই দেখা করেছি তার সঙ্গে। তখন সঙ্গে সঙ্গে তিনি ফরমান আলী খানকে হুকুম দিলেন যে জরূরী টেলিফোন সব দিয়া দেন, যাতে তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে এবং কমপ্লেইন করতে পারে এবং এটার জন্যই শান্তি কমিটি করা হয়েছিল, শান্তি কমিটির কাজ এটাই ছিল। এবং আমিতো অনেক লোককে সেভ করেছি, তাদেরকে জীপ থেকে উদ্ধার করেছি। একজন এখনো বেঁচে আছেন, সাইফুদ্দিন (সাক্ষাৎকার কালে প্রফেসর জানতে পারেন তিনি আগেই ইন্তেকাল করেছেন) । আমি দুপুরে খাচ্ছি, তার ওয়াইফ এসে বারান্দায় কান্নাকাটা করছে। কি ব্যাপার? বললো যে ওনাকে ধরে নিয়া গেছে, তো আমি পার্টিকুলারস নিলাম। রাও ফরমান আলী আমাকে বলেছিলেন যে সার্কিট হাউজে ব্রি: কাসেম বসে, কোন কমপ্লেন হলে ওনার কাছে আগে বলবেন। আমি ওনাকে ফোন করলাম। এরপরে, দু’দিন পরে বোধহয়, ঐ লোকের নাম সূর্য মিয়া, ডাক নাম ছিল সূর্য মিয়া, উনি আমার বাড়ী এসে পৌছলেন। আমি জিজ্ঞাস করলাম, কেমন করে আসলেন, কিভাবে আসলেন? বললেন যে সার্কিট হাউজের ওখানে আর্মির গাড়ীতে আমাকে নিয়া আসছে, এবং লাথি দিয়া আমাকে গাড়ী থেকে ফেলে দিয়েছে, এ কথা বলে যে, গোলাম আযম নাকি কে সুপারিশ করছেন তোর পক্ষে, তো যা, এই বলে গাড়ী থেকে লাথি দিয়া আমাকে ফেলে দিল, আমি সেন্সলেস হয়ে গেলাম, তারপর যখন নাকি সেন্স ফিরেছে তারপরে একটা রিক্সা ডেকে আমি ডাকলাম, এই রিক্সাতে উঠে আপনার বাড়ীতে আসছি। এইভাবে মানুষের যেটুকু সম্ভব খেদমত করেছি। যারা অন্যান্য পার্টির লোক ছিল, মুসলিম লীগ ছিল, ডেমোক্রেটিক পার্টি ছিল, নেজামে ইসলাম পার্টি ছিল, আমি এরকম অভিযোগ পেয়েছি যে তারা এরকম কমপ্লেইন করে কিছু কামাইও করেছে, খেদমত করেছে কিন্তু টাকা পয়সা কামাইও করেছে। তো এই কাম তো আর আমি করতে পারি নাই। তো এভাবে আমরাতো আর কিচ্ছুই করতে পারি নাই। আর্মির সঙ্গে সহযোগিতা করার সুযোগ কি, সহযোগির কোন, আর্মির কাজ হচ্ছে আর্মস দিয়ে কাজ করার, আমরা কি সহযোগিতা করবো। তারপরে, তাদের বিরোধিতা করা, বিরুদ্ধে কোন কথা বললেও পত্রিকায় তো আসে না।

এই ২৫শে মার্চের ২ দিন পরে বোধহয় কেরানীগঞ্জেও এরকম হত্যা করা হলো। না, আরো কয়দিন পরে। মানে, টিক্কা খানের সঙ্গে আমার দেখা করার পরের দিনই আমি শুনলাম যে আমাদের লোকও মারা পরছে এই কেরানীগঞ্জে। আমি টেলিফোন করে টিক্কা খানকে বললাম, আপনি বলছেন যে আর এ রকম হবে না, এই যে এই কেরানীগঞ্জে হলো? বললো যে, আমাদের কাছে কমপ্লেইন এসেছে যে, ঢাকা থেকে পালাইয়া এরা, যারা আমাদের বিদ্রোহী, তারা কেরানীগঞ্জে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে, সে জন্য আমরা এটা করেছি। আমি বললাম, আবার তো করলেন, কিন্তু মরলো তো সাধারণ লোক, যাদের বিরুদ্ধে আপনাদের অভিযোগ তারা তো সেখান থেকে পালাইয়া গেছে, চলে গেছে ইন্ডিয়া, এ সাধারণ লোক মরলো। তো, এইভাবে যতটা সম্ভব প্রতিকার করার চেষ্টা হয়েছে।

পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস ১৪ই আগস্ট। ১৪ই আগস্টে কার্জন হলে নূরুল আমীন সাহেবের নেতৃত্বে, সভাপতিত্বে জনসভা হলো। সে জনসভায় আমার আগে দু’একটা বক্তৃতা হয়েছে, আমার বক্তৃতা থেকে আমি এই অভিযোগ বললাম যে, এ আর্মি যে সমস্ত কাজ করছে এ কাজের দ্বার জনগণ পাকিস্তান বিরোধী হয়ে যাচ্ছে। তারা পাকিস্তান এক রাখার জন্য কাজ করছে বলে দাবী করে, অথচ পাকিস্তান ভাংছে তাদের কাজে। পাকিস্তান টিকবার কোন আমি সম্ভাবনা দেখি না। আমার বক্তৃতার পরে যারা বক্তৃতা করেছেন তাদের এই লাইনেই বক্তৃতা করতে হয়েছে। কিন্তু এসব তো কোনটাই পত্রিকায় আসে নাই। তখন তো পত্রিকা সেন্সরড হতো।
সাংবাদিকঃ তখন তো আপনাদের পত্রিকা ছিল, সংগ্রাম।

গোলাম আযমঃ পত্রিকা তো সেন্সরড হতো। পত্রিকার তো ক্ষমতা ছিল না যে স্বাধীন ভাবে ছাপায়। সেন্সর করে যা দিত তাই ছাপতে পারতো। বায়তুল মোকাররমে মিটিং করে আমি তাদের বিরুদ্ধে এই সমস্ত অভিযোগ করেছি, কোনটাই পত্রিকায় আসে নাই।

সাংবাদিকঃ আপনি কি এটা বলতে চাচ্ছেন যে ঐ সময়ের পত্রিকায় যা ছাপা হয়েছে আপনাদের নামে সেগুলি সব ভুল ছিল বা পাকিস্তানের চাপে পড়ে পত্রিকা ভুল সংবাদ প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছিল?

গোলাম আযমঃ ভুল সংবাদ প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছিল কিনা আমি বলতে পারি না, আমি বলতে পারি আমার বক্তব্য আসতে দেয় নাই পত্রিকায়। তাদের বিরুদ্ধে যেগুলি যায় সেগুলি কোন কথা আসতে দেয় নাই।

সাংবাদিকঃ এটা কি একদম সংগ্রামসহ সব পত্রিকায়?

গোলাম আযমঃ সব পত্রিকায়।

সাংবাদিকঃ গেল যে নির্বাচন, সে নির্বাচনের পর থেকেই তারা যখন জানতে পেরেছে যে ইসলামিক বিশেষ করে জামায়াত যদি বিএনপির সাথে এক হয় সেক্ষেত্রে তারা ক্ষমতায় আসতে পারবে না, সেহেতু তারা যুদ্ধাপরাধের এই বিষয়টা তারা সামনে এনেছে। এই সামগ্রিক যে প্রক্রিয়া, এই প্রক্রিয়াটাকে আপনি কিভাবে দেখছেন? এখন যে চলমান প্রক্রিয়াটা।

গোলাম আযমঃ মানে প্রক্রিয়া হইলো যে আ’লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র, আ’লীগ যাতে ক্ষমতায় যেগে পারে সেজন্য এটা একটা ষড়যন্ত্র। আওয়ামী লীগের বিকল্প যে দলটা তারা যাতে বিজয়ী হতে না পারে সেজন্য এটা ষড়যন্ত্র। যে উদ্দেশ্যে তারা কেয়ারটেকার সিস্টেম গুটাইয়া দিল, সে উদ্দেশ্যেই তারা এগুলি সব করছে।

সাংবাদিকঃ মুক্তিযুদ্ধের নয়মাসে আপনার ভূমিকা কি ছিল এটা যদি একটু

গোলাম আযমঃ ঐ যে বললাম, জনগনের যদ্দুর সেবা করা সম্ভব করেছি, বিশ্রাম নিতে পারি নাই, লোক এসে বাড়ী ভর্তি। মানে একটু হার্টে প্রব্লেম দেখা দিল, ডাক্তার বললো যে আপনার বয়স চল্লিশ পার হয়ে গেছে এই সময় আপনি দুপুরের খাওয়ার পর অন্তত এক ঘন্টা শুয়ে থাকবেন, যদি ঘুমাইতে সময় নাও পান শুয়ে থাকবেন। শুইবারও সময় পাচ্ছি না।

সাংবাদিকঃ স্যার, কালকে অভিযোগে তারা এটা বলেছেন যে, শান্তি কমিটি গঠনের পর আপনার রাজাকার বাহিনী, আল-বদর বাহিনী, আল-শামস বাহিনী এগুলি গঠন করে.

গোলাম আযমঃ না, এগুলি শান্তি বাহিনী গঠন করে নাই। এগুলি গঠন করেছে সরকার। এখন যেমন পুলিশের সহকারী আছে না আনছার, এই আনছার হিসেবে পুলিশের সহকারী হিসেবে তারা এই বাহিনীগুলি গঠন করেছে। এখন ইউএনও যাদেরকে বলে, তখন এদের নাম ছিল সার্কেল অফিসার। এই সার্কেল অফিসারদের মার্ধমে ইউনিয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে বোর্ড ফোল পিটিয়ে লোক রিক্রুট করেছে। সব রকম লোক গিয়েছে, কিছু পয়সা পাবে, বেকার লোক, বেকার যুবকরা সবাই গিয়েছে। এবং এতো পুলিশ পাবে কোথায়? প্রতি পুল, প্রতিটা পুলে পাহারা, কারন, মুক্তিযোদ্ধারা এসে পুল উড়ায়া দেয়, উড়ায়া দিলে পরে গ্রামটা জ্বালায়া দিয়া যায় আর্মি। সেজন্য তারা পুল পাহারা দেবার জন্য রাজাকার ব্যবহার করেছে, এই রেডিও টেলিভিশন পাহারা দেবার জন্য এত পুলিশ পাবে কোথায় সেজন্য পুলিশের সহকারী হিসেবে এই ফোর্সটা তারা গঠন করেছিল। বর্তমানে যেমন আনসার পুলিশের সহযোগি, এরকম একটা ফোর্স তারা করেছিল।

সাংবাদিকঃ আগামী বুধবার বুদ্ধিজীবী হত্যার ৪০ বছর পার হবে এবং মুক্তিযুদ্ধে সব যে হত্যাকান্ডগুলি হয়েছে সারা বাংলাদেশে সোমবার যে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে আপনার বিরুদ্ধে সবকিছুর জন্যই আপনাকে দায়ী করা হয়েছে, জামায়াতে ইসলামীর আমীর হিসাবে আপনি এটার জন্য দায়ী।

গোলাম আযমঃ আমিই সরকারে ছিলাম আরকি! সরকার আমি পরিচালনা করছিলাম!পাকিস্তান আর্মি কি করলো তাহলে? পাকিস্তান আর্মি আমার হুকুমে কাজ করতো?

সাংবাদিকঃ তারা বলেছে যে আপনার সহযোগিতা, আপনার পরামর্শ অনুযায়ী তারা কাজ করেছে।

গোলাম আযমঃ এই কথা প্রমাণ করুন। এটা তাদের দায়িত্ব প্রমাণ করার।

সাংবাদিকঃ আপনার কি কখনো মনে হয় যে মুক্তিযুদ্ধের এই সময়টায় আপনার কর্মকান্ডটা ভুল ছিল?

গোলাম আযমঃ না, আমি তো এমন কোন কাজ করি নাই যেটা নাকি করা উচিত ছিল না বলে আমি মনে করি।

সংবাদিকঃ স্যার বিষয়টা এমন না, বিষয়টা হচ্ছে যে, একাত্তরে আপনার ভূমিকা নিয়ে অনেক অনেক কথা বলে, অনেকে অনেক বিষয় বলে, হয়তো আমরা বর্তমান যে প্রজন্ম অনেক কিছুই জানি না, আসলে আপনি আপনার অবস্থান থেকে আপনার সম্পর্কে কি বলবেন?

গোলাম আযমঃ এটাই তো বলছি, আমাদের আর কিছুই করার ক্ষমতা ছিল না। জনগণ আমাদের কাছে কমপ্লেইন করেছে আর্মির ব্যাপারে, এবং আমরা যেটুকু পেরেছি সাধ্যমতো সহায়তা করেছি, যতটুকু হেল্প করতে পেরেছি।

সাংবাদিকঃ স্যার, তারা কিন্তু এটাও বলেছে যে, ১৪ই ডেসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন পর্যন্ত ঐ সময় যে হত্যাকান্ডগুলি ঘটেছে সবগুলির পেছনে আপনার প্রত্যক্ষ একটা সহযোগিতা ছিল।

গোলাম আযমঃ আশ্চর্য কথা, এগুলি এতদিনে বলা হচ্ছে কেন? এগুলি তারা যখন ক্ষমতায় আসলো তখন তো তারা বলতে পারতো। এতো বছর পরে মনে হলো কেন? এই প্রশ্নের জবাব কি? এতো বছর পরে এ কথা মনে আসলো কেন তাদের?

সাংবাদিকঃ তদন্ত কর্মকর্তা দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে এই প্রতিবেদন দাখিল করলো আরকি, অভিযোগপত্র।

গোলাম আযমঃ তদন্ত সংস্থা তো তাদের লোক দিয়েই করছে এবং তারা তাদের লোক দিয়েই মিথ্যা স্বাক্ষী দেয়াচ্ছে এবং অনুমান করে সবকিছুর জন্য কাউকে দায়ী করছে। এগুলি কোর্টে একটাও প্রমাণ করতে পারবে না।

সাংবাদিকঃ জি, আরেকটা প্রশ্ন গতকালের অভিযোগেই বলছে যে আপনি মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকায় বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশ নিয়েছেন, সংবাদ সম্মেলন করেছেন, রাওয়ালপিন্ডি করাচী এইসব জায়গাতেও আপনি সংবাদ সম্মেলন এবং দলের বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী, ভারতের চর, অনুপ্রবেশকারী বলেছেন এটা সোমবার দাখিল করা অভিযোগে বলা হয়েছে।

গোলাম আযমঃ প্রমাণ করুক। আমিতো চ্যালেঞ্জ করে বলছি প্রমাণ করুক।

সাংবাদিকঃ এও বলেছে যে আপনি ঐ সময়কার রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী তাদের যে প্রশিক্ষণ শিবির সেখানে আপনি গিয়ে, মোহাম্মদপুরে সেপ্টেম্বরে ঘটনা, আপনি দেখেছেন ..

গোলাম আযমঃ আমি শুধু এক যায়গায় গিয়েছিলাম তাদের বলার জন্য যে যদি নাকি নির্দোষ লোকের বিরুদ্ধে তোমরা কর তাহলে আল্লাহর সাহায্য পাবা না। আমি যখন পাকিস্তান আর্মির যাদের সাথে কথা বলি তাদেরকে বলেছি যে সাধারণ জনগনকে, নিরপরাধ জনগনকে যেন নীপিড়ন না করা হয়, ঠিক তেমনি তাদেরকেও একই কথা বলেছি। একদিন গেছি, একবার। আর কোথাও কোন..

সাংবাদিকঃ আরেকটা যেটা বলা হয় যে মুক্তিযুদ্ধের পরে আপনি লন্ডন গিয়েছিলেন, সেখানে পূর্ব পাকিস্তান পূনরুদ্ধার কমিটি গঠন করলেন, এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন..

গোলাম আযমঃ আমি চ্যালেঞ্জ করছি এগুলো সব মিথ্যা কথা। অপবাদ।

সাংবাদিকঃ মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্নদেশে নাকি আপনি বলেছেন যে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দেয়ার জন্য?

গোলম আযমঃ ব্যারিস্টার আব্বাস ছিলেন একজন পাবনার। আরো কিছু এ দেশী ব্যারিস্টার সেখানে তারা পূর্ব পাকিস্তান সরকার কায়েম করেছিল এবং আমাকে মন্ত্রী বানানোর জন্য তারা দাওয়াত দিয়েছিল আমি তার জবাবও দেইনি।

সাংবাদিকঃ কোন সময় এটা?

গোলাম আযমঃ এটা চুয়াত্তর হবে। চুয়াত্তর কি পচাত্তর সালে।

সাংবাদিকঃ বঙ্গবন্ধুর সরকার?

গোলাম আযমঃ চুয়াত্তর কি পচাত্তর সালে ঐ বাংলাদেশী যারা লন্ডনে আছে ইংল্যান্ডে আছে তাদের একটা গ্রুপ তারা ব্যারিস্টার, এ্যাডভোকেট, একজনের নাম মনে আছে, যিনি চীফ ছিলেন এটার, বাড়ী পাবনা, ব্যারিস্টার আব্বাস। আমাকে চিঠি দিল, আমি কোন জবাবও দেই নাই। যে কি পাগলামী, এক ছিল সেটা এক রাখা গেল না, এখন পূর্ব পাকিস্তানে তারা আলাদা একটা সরকার গঠন করবে এই পাগলামীতে আমি নাই।

সাংবাদিকঃ তাহলে বিজয় হয়ে যাওয়ার পর পর আপনি দেশে ছিলেন না কেন?

গোলাম আযমঃ আমি, ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলো, ২০শে নভেম্বর রমজানের পরের দিন, রমজান শেষ হলো, রমজানের পরের দিন, ঈদের পরের দিন, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় ওয়ার্কিং কমিটির মিটিংয়ে যোগদান করার জন্য আমি লাহোর গেলাম। জামায়াতের হেডকোয়ার্টার তো লাহোর, তখনো ছিল লাহোর, এখনো লাহোর, এটার পরে, আমি ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম, একথা বলার জন্য যে, আপনি দেশের প্রেসিডেন্ট, পূর্ব পাকিস্তানে কি হচ্ছে আপনি যান না কেন? আপনি টিক্কা খানরে দিয়া রাখছেন। এরজন্য কয়েকদিন সময় লাগলো আমার সেখানে। এভাবে আমি ৩রা ডিসেম্বর আমি রওয়ানা দিলাম করাচী থেকে পিআই এর প্লেনে, এটিই পিআই এর শেষ প্লেন ছিল। ঢাকা থেকে সেদিন পিআই এর লার্স্ট প্লেন, লার্স্ট প্লেন এজন্য যে থার্ড ডিসেম্বর ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্স থেকে ঢাকা এয়ারপোর্টে বোমা ফেলা হয়েছে। এয়ারপোর্ট বন্ধ হয়ে গেছে। সেজন্য আমার প্লেন এসে নামতে পারে নাই, আশ্রয় নিয়েছে গিয়ে জেদ্দায়। পয়লা তো তখন ইন্ডিয়ার সঙ্গে যে সম্পর্ক ছিল তা ইন্ডিয়ার উপর দিয়ে আসতে দিত না, পাকিস্তানের প্লেন আসতো ঐ শ্রীলঙ্কা হয়ে। তো প্লেন থেকে দেখলাম যে শ্রীলংকার নারিকেল বাগান পার হয়ে আসলাম, করাচী থেকে ওখানে তিন ঘন্টা লাগতো, সেখান থেকে এখানে আসতে আরো তিন ঘন্টা লাগতো, ছয় ঘন্টা ফ্লাইট ছিল। তারপরে দেখি যে প্লেন নামলো কলম্বো। কেন নামলো কিছু বলে না। তারপর দেখি যে, আরেকটা দেখা যায় পিআইএর, ঢাকা থেকে যেটা যাচ্ছিল, এদুটা এসে সেখানে নামলো। তিন ঘন্টা পর, প্লেন আবার উড়লো, তখন ক্যাপ্টেন ঘোষণা করলো যে, করাচী এবং ঢাকা এয়ারপোর্টের কোথাও যাওয়া সম্ভব না, যুদ্ধ বেধে গেছে, আমাদেরকে, আমাদের দুটা প্লেনকে ইন্টস্ট্রাকশন দেয়া হলো হয় আমরা তেহরান বা জেদ্দায় গিয়ে যেন আমরা আশ্রয় নেই। যখন নামলাম প্লেন থেকে. এমন আবেগ যে ওমরা করতে পারবো, কাবা ঘর দেখতে পারবো, এখানে আসার কতো স্বপ্ন, তখনো পারি নাই, তো ক্যাপ্টেন যে, ভূপালের লোক, ছ ফুটের ওপর লম্বা, আমাকে বললো যে আপনাকে আমি চিনি, আমি তবলিগ জামায়াতের সাথে সম্পর্ক, আমি কাকরাইল মসজিদে গেছি। তো, তেহরান যাইতে পারতাম, তেহরান বা জেদ্দা যে কোন যায়গায় যাওয়ার জন্য আমাদেরকে অর্ডার দেয়া হয়েছে, ঐ প্লেনটা তেহরান চলে গেছে, আমি বললাম যে জেদ্দা যাওয়ার সুযোগ পাইলে, ওমরা করার সুযোগ পাইলে তেহরান যাব কেন? তো, প্লেনে লন্ডন গেছে, তো এইভাবে আমার প্লেন জেদ্দায় চলে গেল। এরপরে ১০ই ডিসেম্বর ইন্ডিয়া পাকিস্তান সীজফায়ার করলো, একদিন যুদ্ধ বন্ধ থাকবে ঘোষণা করলো, যাতে বিদেশীরা চলে যেতে পারে, সেই দিন সেই ১০ তারিখে আমার প্লেন জেদ্দা থেকে করাচী আসলো। এভাবে আমি পাকিস্তানে আসলাম। তো আমি বলতেছিলাম যে, ৩রা ডিসেম্বর আমার প্লেন নামতে পারলো না, তারপর জেদ্দায় চলে গেলাম, তারপরে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেল, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।

তেহাত্তর সালে শেখ মুজিব সরকার তিন কিস্তিতে ৮৬জন নেতার নাগরিকত্ব বাতিল করলো, পয়লা কিস্তিতে ছিল, উণচল্লিশজন, সেই তালিকায় হামিদুল হক চৌধুরী, নূরুল আমীন, মাহমুদ আলী, আমার নামও ঐ তালিকায় ছিল। নাগরিকত্ব বাতিল করার কারনে তো আমরা বাংলাদেশে আসার অধিকার, সুযোগ পাচ্ছি না, এরপরে ৭৬ সালের জানুয়ারী মাসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ঘোষণা করলো যে যাদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছিল তাদের মধ্যে যারা নাগরিকত্ব ফেরত চান সরাসরি সচিবকে লেখেন। আমি লেখলাম, কোন জবাব নাই। এরপরে আমার মা দরখাস্ত করলো, যে আমরাতো বেশী ফুসরত দিতে পারবো না, তো আপনার যাই পারেন দেন, তো একমাসের ভিসা দিল, ঐ ভিসায় আমি আসলাম। আসার পর আমি পাকিস্তানী পাসপোর্ট ফেলে দিলাম। যে আমি এদেশে আসছি, আমার জন্মভূমি, আমার বাড়ীতে আছি, আমার নামে বাড়ী, মিউনিসিপ্যাল ট্যাক্স আমি দেই, আমাকে জোর করে তাড়াইতে পারবানা এখান থেকে। আমাকে এখান থেকে বাড়াবার জন্য চেষ্টা করেছে, পাকিস্তান হাইকমিশনকে রিকোয়েস্ট করেছে তাকে আপনার নেন। উনি যাইতে না চাইলে আমরা নেব কেন?

সাংবাদিকঃ স্যার, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যারা এখন বলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি, এই দুইটা শক্তির মধ্যে আসলে পার্থক্য কি ছিল? কারা কোন ভূমিকায় ছিল?

গোলাম আযমঃ রাজাকারদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব হতো, কারন তারা পাহার দিত, তাদেরকে মারতে আসতো, আমরা তো সেখানে কোন ভূমিকা পালন করার মতো অবস্থানে ছিলাম না। ঐ যে, কোন কমপ্লেইন আসলে, কমপ্লেইন নিয়া তাদের কাছে ধরনা দেয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারতাম না।

সাংবাদিকঃ আপনি তো বললেন যে, আপনার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলি সোমবার দেয়া হলো, সেটার পেক্ষিতে আপনি কি আপনার মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকার জন্য অনুতপ্ত কিনা, জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার কোন বিষয় আছে কি না?

গোলাম আযমঃ দেখেন, মুক্তিযুদ্ধে কেন অংশগ্রহণ করতে পারলাম না, যদি, পাকিস্তান হওয়ার পর থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত পাকিস্তানের সঙ্গে যে আচরণ ভারত করেছে তাতে ভারতকে বন্ধু মনে করার কোন কারন ছিল না। যখন বাংলাদেশী জনগণের প্রতিনিধি আওয়ামী লীগের নেতারা ভারতে গিয়া ইন্দিরা গান্ধীর কাছে ধর্ণা দিল, যে আমাদেরকে স্বাধীন করার জন্য আপনার সাহায্য করেন, তখন আমরা মহা চিন্তায় পরলাম, যে ভারত তো আমাদেরকে স্বাধীন করতে আসবে না, তারা আসবে তাদের স্বার্থে। তারা আসছে তাদের স্বার্থে, সে স্বার্থটা কি, এক নম্বর স্বার্থ হলো তাদের চীর দুশমন পাকিস্তানকে দূর্বল করা। যদি পাকিস্তান থেকে ইস্ট পাকিস্তানকে আলাদা করতে পারে, তবে পাকিস্তান দূর্বল হলো। দুই নম্বর, পাকিস্তান ভারতের বাইরে, আর আমরা ভারতের পেটের ভিতরে, চারিদিক ভারত, দক্ষিণ দিকেও বঙ্গোপসাগর তাদের হাতে, আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ তাদের হাতে, আমরা যদি তাদের থেকে আলাদা হই, তাহলে আমরা স্বাধীন স্বত্ত্বা রক্ষা করে চলতে পারবো না, আমরা ভারতের আধিপত্যের অধীন থাকতে বাধ্য হবো। ইন্ডিয়ার স্বার্থ তিনটা ছিল, একটা হলো পাকিস্তানকে দূর্বল করা, আর আমার উপর আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ গ্রহণ করা, আর পাকিস্তানের মেজরিটি এলাকাটাকে তাদের পণ্যের মার্কেট বানানো। তারা আমাদের স্বাধীনতার জন্য আসে নাই। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও তাদের যে আচরণ, এতদ্বারা কি প্রমাণ হয় আমাদের স্বাধীনতা তারা চায়? আমাদের বর্ডারে তারা পাখির মতো মানুষ মারছে, জনগণ প্রতিবাদ করছে কিন্তু সরকার প্রতিবাদ করে না।

সাংবাদিকঃ না, আপনি অনুতপ্ত কি না? মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনার বিরুদ্ধে যে অভিযোগের কথা বলা হয়েছে .

গোলাম আযমঃ আমি তো বললাম যে এসব গুলি অভিযোগ নয়, অপবাদ। আমার বিরুদ্ধে এমন কোন অভিযোগ প্রমাণ করতে পারবে না যে মানবতাবিরোধী কোন কাজ আমি করেছি, জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়ার মতো কোন অপরাধ করেছি। এরকম কিছুই তারা পাবে না। হ্যারাস করবে, আসলে তো বিচারের কি রায় হবে আগেই ফয়সালা হইয়া আছে। এটা তো একটা প্রহসন মাত্র, বিচারের নামে অভিনয় চলছে। এই যে কয়দিন আগেও পাটমন্ত্রী বলেনাই, এ বিচারের কোন দরকার নাই, ফাঁসি দিয়া ফেল, বলেছে কি না?

সাংবাদিকঃ স্যার সর্বশেষ প্রশ্ন স্যার, মাগরিবের আজান দেবে, যে আমরা যেটা জানছি যে সবাই আশা করছে বা আপনি হয়তো অনুমান করছেন যে হয়তো আপনি গ্রেফতার হয়ে যেতে পারেন, আপনি মানসিকভাবে এখন প্রস্তুত কি না গ্রেফতারের জন্য?

গোলাম আযমঃ জীবনে বহুবার গ্রেফতার হয়েছি। আর মোমেন তো মৃত্যুকে ভয় করে না। আর যদি অন্যায়ভাবে মৃত্যু দেয়া হয়, তাহলে শহীদ হওয়ার গৌরব পাওয়া যায়। সে হিসাবে, ইসলামী আন্দোলনের কর্মী হিসাবে, শাহাদাতের কামনা করি। সুতরাং ভয় কিসের? আল্লাহকে ছাড়া কাউকে ভয় করা তো জায়েজই না। আল্লাহকে ছাড়া কাউকে ভয় করার অনুমতি নাই।

……………………………………………………………………………………………………………………………………………..
বহুমাত্রিক সংকটে রয়েছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন

বহুমাত্রিক সংকটে রয়েছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন। বাংলাদেশের প্রধান সমৃদ্ধ ও সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনে সুন্দরবনকে ভোট দেওয়া নিয়ে যখন সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানামুখী তৎপরতা চলেছে, তখনও এসব সংকট মোকাবিলায় সামান্যই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।জলজ ও বনজ সম্পদে ভরপুর প্রায় ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটারের বিশালায়তন এই বনের বর্তমান মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিবেশগত বিপর্যয়। এর জন্য সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনার তুঙ্গে থাকা জলবায়ু পরিবর্তন না মানবসৃষ্ট অন্য সব কারণ দায়ী তা নিয়েও ভিন্নমত রয়েছে বিভিন্ন মহলে।বনবিভাগের কর্মকর্তারা জানালেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এখনো না বাড়লেও বর্তমানে লবণাক্ততা বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। এর প্রভাবে সুন্দরবনের প্রধান বৃক্ষ সুন্দরী মরতে শুরু করেছে ব্যাপকহারে। বনবিভাগের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় চার যুগ আগে সুন্দরী বৃক্ষের মড়ক সীমিত পরিসরে দেখা দিলেও বর্তমান সময়ে এসে তা অনেক বেড়ে গেছে। ২০৫০ সালের পর সুন্দরবনে সুন্দরী গাছের অস্তিত্ব থাকা নিয়েই সংশয় প্রকাশ করেছেন খোদ বন কর্মকর্তারা। এছাড়া লবণ-সহিষ্ণু নয় এমন অন্যান্য গাছও মরতে শুরু করেছে।সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের খুলনা রেঞ্জের কোবাদক ফরেস্ট অফিসের এক বনকর্মী জানান, যেখানে লবণ বেশি সেখানে বনের গাছের বৃদ্ধি কম আর যেখানে লবণ কম সেখানে বৃদ্ধি বেশি। ফারাক্কা বাঁধ দেওয়ার পর থেকে সুন্দরবনের উজান থেকে আসা মিঠা পানির প্রবাহ নেই বললেই চলে। ফলে সুন্দরবনে জালের মতো বিস্তার করে থাকা নদীগুলোতে লবণ ও মিঠা পানির সংমিশ্রণে থাকা মাছের সংখ্যাও কমেছে। মাছের প্রাপ্যতা কমায় সুন্দরবনের নদী-নালা-খালগুলোতে মাছ ধরে জীবিকার সংস্থান করা বিপুল সংখ্যক জেলের জীবনও অনিশ্চয়তার মাঝে পড়েছে।বাংলাদেশের উপকূলীয় জনপদগুলোকে সমুদ্রের ভয়াবহ সব দুর্যোগ থেকে রক্ষার জন্য সুন্দরবন রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে এলেও নানা বিপর্যয়ে ক্রমশ সে শক্তি হারিয়ে ফেলেছে সুন্দরবন। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলায় বনের ব্যাপক ক্ষতি হয়। সেই ক্ষতি কাটিয়ে না উঠতেই আবার জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিপর্যয়ের চরম ঝুঁকিতে রয়েছে সুন্দরবন।সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: প্রকৃতির অপার বিস্ময় ও বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদের আধার সুন্দরবন ইতিহাস জানার আগ্রহ কমবেশি সবারই রয়েছে। একাধিক স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইতিহাস গ্রন্থে বর্ণিত সুন্দরবনের ইতিহাস থেকে জানা যায়, আনুমানিক খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীরও আগে গঙ্গার মূল প্রবাহ থেকে ভৈরব ও পদ্মা প্রবাহিত হওয়ার পর বর্তমান সুন্দরবন অঞ্চলে ব-দ্বীপের সৃষ্টি হয়। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞদের মতে, পঞ্চম শতক থেকে তের শতকের মধ্যে বঙ্গোপসাগরের বুক থেকে ধীরে ধীরে জেগে উঠে পলিময় এ দ্বীপ। পরে এটি প্রাকৃতিকভাবেই বিশালায়তনের গভীর বনে পরিণত হয়।ইতিহাসবিদ ও সাতক্ষীরার কলোরোয়ার শেখ আমানুল্লাহ ডিগ্রি কলেজের দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ আবুল হোসেনের মতে, ‘প্রাচীনকালে সমৃদ্ধ জনপদ সুন্দরবন স্থান হিসেবে যতই প্রাচীন হোক, এর বর্তমান নামটি তত প্রাচীন নয়। এই অঞ্চলের পরিচিতি প্রচ্ছন্ন রয়েছে ইতিহাসে বর্ণিত গঙ্গারিডি, গাঙ্গেয়, সমতট, কালিকাবন প্রভৃতি স্থান নামের অন্তরালে। মধ্যযুগের মুসলমান ঐতিহাসিকরা এই নিম্নভূমি অঞ্চলকে ‘ভাটি’ নামে উল্লেখ করেছেন। পাঠান যুগের শেষে এখানে বার ভুঁইয়াদের আধিপত্য অতিশয় বৃদ্ধি পেলে এর নাম দাঁড়ায় ‘বারভাটি বাঙলা’। পরবর্তী কালে ‘সুন্দরবন’ এই সুখশ্রাব্য নামটি প্রচলিত হয়।’অনেক ঐতিহাসিকের মতো আবুল হোসেনেরও মত, সুন্দরবনের সর্বত্র সুন্দরী বৃক্ষ জন্মে, তাই এর নামকরণ সুন্দরবন হয়েছে এ অনুমান যথেষ্ট যুক্তিসিদ্ধ ও সর্বজনগ্রাহ্য। ইংরেজ আমলে বিদেশী পর্যটকেরা একে Ôjungle of sundory trees’ বলে আখ্যায়িত করেন। কেউ কেউ সমুদ্রের তীরে অবস্থান হওয়ায় সমুদ্র বন ও এর অপভ্রংশ থেকে সুন্দরবন হয়েছে বলেও দাবি করেন। আবার কেউ চন্দ্রবন বন থেকে চন্দরবন, পরে স্যান্ডারবন বা সুন্দরবন হয়েছে বলে মনে করেন।

………………………………………………………………………………………………………….

আমঝুপি নীলকুঠি

ফরাসি যুবক লুই বান্নো, ক্যারেল ব্লুম, জেমস হিল, নীল কুঠিয়াল মিকেনি সিম্পসন, ফারগুসেন এখন এ উপমহাদেশের একটি ইতিহাস। একখণ্ড সকরুণ স্মৃতি। এদের প্রতাপ আর অত্যাচারে জর্জরিত ছিল এ অঞ্চলের হাজার হাজার কৃষক-শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষ।

নীলকরদের বিচিত্র ধরনের অত্যাচারের চিত্র সব জায়গায় একই ছিল। কিংবদন্তির মতো শোনা যায়, অবাধ্য চাষীর মাথার ওপর মাটি দিয়ে নীলের বীজ বপন করে গাছ বের না হওয়া পর্যন্ত নাকি দাঁড় করিয়ে রাখা হতো! আমঝুপি ও ভাটপাড়া নীলকুঠিতে এখনো নীল গাছ দেখা যায়। এ আগাছা নীলগাছ এখনও অতীতের নীলকরদের সেই ভয়াল অত্যাচারের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। নীলগাছ থেকে তৈরি রং নীল হলেও আসলে সেটি ছিল বাংলার চাষীদের বুকের পুঞ্জিভূত রক্তের জমাটবাঁধা কণিকা।

নীল চাষকে নির্ভর করে এ দেশে নীল শিল্পের প্রবর্তন হয়েছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন আমলে। প্রথম এ দেশে নীল চাষের সূচনা করেন লুই বোনাদ নামের একজন ফরাসি বণিক। জানা যায়, ১৭৮৮ সালের ১ নভেম্বর লন্ডনের কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে লর্ড কর্নওয়ালিস জানান যে, বাংলাদেশের নীল ইউরোপের বড় একটি অংশের চাহিদা পূরণ করতে সমর্থ হবে। ফলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এ দেশকে নীল চাষের জন্য উপযুক্ত স্থান হিসেবে গণ্য করে।

তৎকালীন বাংলাদেশের নদীয়া জেলার কুষ্টিয়া, মেদেনীপুর, বীরভূম, যশোর, হাওড়া, পাবনা, ফরিদপুর ও হুগলী জেলায় নীল চাষ প্রবর্তন করা হয়। ১৭৯৫ সালে যশোরে রুপদিয়া বন্ড নামের একজন নীলকর কারখানা স্থাপন করেন। এ সময় যশোরে ১০৩ বর্গমাইল জমি নীল চাষের আওতায় নেওয়া হয়। ওই সময় এ অঞ্চলে প্রায় ৫০০ নীলকুঠি স্থাপন করা হয়। আর নীলচাষ হতো প্রায় ২০ লাখ ৪০ হাজার একর জমিতে। নীল উৎপাদন হতো ১২ লাখ ৮০ হাজার মণ। এর মধ্যে শুধু নদীয়া জেলায় নীলচাষ হতো ১৭০০ বিঘা জমিতে। সেখানে উৎপন্ন হতো প্রায় ৭ মণ নীল।

ইংরেজ আমলে গড়ে ওঠা সেই নীল কুঠিগুলো আজ ধংসের দারপ্রান্তে। ইউরোপীয়দের দ্বারা বাংলায় নীল চাষের প্রর্বতন হয় এবং একশ বছর পর উনিশ শতকের শেষে এর পরিসমাপ্তি ঘটে। নীলকরদের জন্য এ ব্যবসা লাভজনক হলেও চাষীদের জন্য ছিল ভয়াবহ অভিশাপ। এ কারণে নীলচাষের প্রতি চাষীদের ছিল অনীহা। ইচ্ছার বিরুদ্ধে নীল চাষ করানোর ফলেই ১৮৫৮ সালে নীল বিদ্রোহ দেখা দেয়। ক্রমে বিদ্রোহ চরম আকার ধারণ করে। ১৮৯৫ সালে নীল চাষের অবনতি ঘটে। এই নীল ব্যবসাকে কেন্দ্র করেই একসময় গড়ে উঠেছিল অসংখ্য নীলকুঠি। নীলচাষ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর নীলকুঠিগুলো পরিণত হয় পোড়ো বাড়িতে।

নীল বিদ্রোহের সময় নীলকুঠি ভবনগুলো ছিল নীলচাষীদের লক্ষ্যবস্তু। তাদের শোষণ-নির্যাতনের প্রতীক এই কুঠিগুলোতে তারা ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। নীলচাষীদের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে আজ পর্যন্ত টিকে আছে মেহেরপুরের আমঝুপি নীলকুঠি। মেহেরপুর ব্রিটিশ শাসন-আমলে অবিভক্ত নদীয়া জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসেবে বিবেচিত ছিল। ১৮৯৬ সালের দিকে তৎকালীন নদীয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমায় নীল চাষ শুরু হয় বলে অনুমান করা হয়।

আমঝুপি নীলকুঠিটি মেহেরপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার পূর্বদিকে অবস্থিত। আমঝুপি গ্রামের দক্ষিণপাড়ার কাজলা নদীর পাড়ে এক চিত্তাকার্ষক নৈসর্গিক পরিবেশে এ নীলকুঠির অবস্থান। অতীতে এটি নীলকুঠি হিসেবে নির্মিত হলেও পরে এটি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাচারি অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এই কুঠিবাড়ি ছিল নীলকরদের নির্যাতন কেন্দ্র। বর্তমানে আমঝুপি নীলকুঠিটি পর্যটন কেন্দ্রের আওতায় একটি সরকারি রেস্ট হাউস হিসেবে নিবন্ধিকৃত। কুঠিবাড়িটি মেহেরপুর জেলা পরিষদের কর্তৃত্বাধীন। জেলা পরিষদ ও রাজস্ব বিভাগ উভয়ই এর ওপর কর্তৃত্ব দাবি করায় তাদের অর্ন্তদ্বন্দ্বর কারণে সংরক্ষণ ও উন্নয়ন বাধগ্রস্ত। এসব কারণে এখানে আগত ভ্রমণকারী ও পর্যটকদের পড়তে হয় বিব্রতকর অবস্থায়।

এ ভবনে ছয়টি কক্ষ বিশেষ অতিথিদের ব্যবহারের জন্য সংরক্ষিত আছে বটে, কিন্তু কক্ষগুলো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। একটি কক্ষের ছাদ ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

মোট সাত একর জমির ওপর আমঝুপি নীলকুঠিটি স্থাপিত। কুঠিবাড়ি ঢোকার প্রবেশ পথের দু পাশের রাস্তার বড় বড় আম গাছগুলো ঝড়ে ভেঙ্গে গেছে। তারপরও কুঠিবাড়ির চারদিকে আমগাছে পরিপূর্ণ। আমঝুপি গ্রামের নামকরণের সঠিক ইতিহাস জানা না গেলেও ধারণা করা হয় এ অঞ্চলে আমগাছের সমারোহ এবং ঝোপঝাড়ের আধিক্য থাকায় নাম হয়েছে আমঝুপি।
কুঠিবাড়ির মূল ভবনটি সূদৃশ্য একতলা ভবন। এর অভ্যন্তরে রয়েছে মোট পনেরটি কক্ষ। স্তম্ভসারির ওপরে লাল টালির ছাদ-আচ্ছাদিত বারান্দা। তিনটি করে স্তম্ভ একত্রে স্থাপিত, যার ওপর সৃষ্ট ঢালু ছাদের বারান্দা আকর্ষণীয় রুপ লাভ করেছে। বারান্দা পার হয়ে প্রবেশ করতে হয় কুঠির অভ্যন্তরীণ কক্ষে। ছোট-বড় কক্ষগুলির মধ্যে একটি কক্ষের মেঝে বিশেষ পদ্ধতিতে নির্মিত। আমঝুপি গ্রামে সাপের প্রাদুর্ভাব ছিল বলে জানা গেছে। কুঠিবাড়ি নির্মাণের সময় সাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কক্ষটির মেঝে মার্বেল পাথর দিয়ে অত্যন্ত মসৃণ এবং ঢালু যুক্ত করে তৈরি করা হয়েছিল। এমন ঢালু মেঝে তৈরি করার নেপথ্যে যেন সাপ প্রবেশ করতে না পারে সে কথাটি মনে রাখা হয়েছিল। এ ভবনে রয়েছে তিনটি শয়ন কক্ষ। পেছন দিকে রয়েছে ভোজনকক্ষ। একটি কক্ষের মাঝে দেওয়ালের ডানদিকে কক্ষ উষ্ণ রাখার জন্য রয়েছে ফায়ারপ্লেস। তাছাড়া কক্ষগুলোর উপরিভাগে রয়েছে রঙিন কাচে আবৃত গোলাকার ক্ষুদ্র আলো প্রবেশের জানালা।

এই নীলকুঠিতে আছে আরো কয়েকটি ছোট-বড় কক্ষ। এসব কক্ষ ব্যবহৃত হতো বৈঠকখানা, সংগীত, নৃত্যগীত এবং আমোদ-প্রমোদ করার জন্য। এর সাথে রয়েছে চারটি সাজঘর ও পরিচারকদের কোয়ার্টার। পশ্চিম দিকে অবস্থিত পরিচারকদের ও সাহায্যকারীদের বসবাসের দালান যা বর্তমানে কুঠিবাড়ির নিরাপত্তাকর্মী ও তত্বাবধায়কের বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
অপ্রধান ভগ্নপ্রায় ভবনটি ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে সংস্কারবিহিন দাঁড়িয়ে আছে। মূল ভবন না হওয়ায় এগুলো সংস্কার করার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় না। উত্তর-পূর্ব কোণে রয়েছে আস্তাবলের ধ্বংসাবশেষ। বর্তমানে এ ভবনের অংশবিশেষ ব্যবহার করা হচ্ছে ইউনিয়ন তহসিলের অফিসের কাজে। উত্তর-পশ্চিম কোণে অবস্থিত নিশ্চিহ্নপ্রায় ভবনটি গুদামঘর হিসেবে ব্যবহৃত হতো। পশ্চিমে রয়েছে ক্ষুদ্রাকৃতির অপেক্ষাকৃত মজবুত একটি ভবন, যা একসময় গোপন শলা-পরামর্শ করার বৈঠকখানা হিসেবে ভূমিকা রেখেছে।

জনশ্রুতি আছে, নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে পলাশী যুদ্ধের প্রথম বৈঠক এই গোপন কক্ষটিতেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এখানেই লর্ড ক্লাইভ, ঘসেটি বেগম, মীর জাফরসহ অন্য ষড়যন্ত্রকারীরা পলাশী যুদ্ধের নীল নকশা তৈরী করেছিল। কাজলা নদীর ওপর পর্যন্ত সম্প্রসারিত সেতু, শানবাধানো বসার আসনবেষ্টিত ঘাট নিঃসন্দেহে এই কুঠির সবচে চিত্তাকর্ষক ও ব্যাতিক্রমী বৈশিষ্ট্য। কুঠিভবনটির দৈর্ঘ ১৫ মিটার, প্রস্থ ১০ মিটার ও উচ্চতা প্রায় ৮ মিটার। এতে রয়েছে দুটি প্রবেশ পথ ও ১৮টি জানালা। আমঝুপি কুঠিবাড়ির পূর্বদিকে রয়েছে একটি মনোরম ফুলের বাগান। এছাড়া তহসিল অফিসের সামনে রয়েছে একটি পেয়ারা বাগান। কুঠিবাড়ির আম্রকাননের পাশাপাশি রয়েছে ইংরেজ আমলে লাগানো বেশ কিছু নাম না জানা বিশাল আকৃতির গাছ। দক্ষিণ দিকে কাজলা নদীর কোল ঘেঁষে সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে আছে নারিকেল গাছ। এসব গাছ ও বাগানের মনোরম নৈসর্গিক পরিবেশ কুঠিবাড়ির স্থাপত্যে যোগ করেছে ভিন্নমাত্রা, যা আমঝুপি নীলকুঠির নিথর পরিবেশকে করে তুলেছে প্রাণবন্ত।

maharpur

নীল তৈরি করতে প্রয়োজন হতো পানির। সেজন্য বাংলাদেশের নীলকুঠিগুলো গড়ে উঠেছিল কোনো না কোনো নদীর ধারে। আমঝুপি নীলকুঠিটিও তাই তৈরি হয়েছিল কাজলা নদীর তীরে।

আমঝুপি নীলকুঠিতে দেশীয় স্থাপত্যের সাথে ইউরোপীয় স্থাপত্য বিশেষ করে ব্রিটিশ স্থাপত্যেরীতির সংমিশ্রণ ঘটেছে। মূল কুঠি ভবনের বহির্বিভাগ দেখে এর সামগ্রিকক অবস্থা অনুধাবন সম্ভব নয়। ভবনটির বাইরে চাকচিক্য না থাকলেও বিবর্ণরুপ পরিগ্রহ করেনি। অভ্যন্তর ভাগের অবস্থা রহস্যাবৃত। সাধারণ জনগণের ধারণা, এ ভবনটির ভেতরের তলায় রয়েছে আরো একটি ভূর্গভস্থ কক্ষ, যা গোপন অস্ত্রাগার হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এ কক্ষটির মেঝেতে রয়েছে একটি কূপ, যার ব্যবহার রহস্যাবৃত।

জনশ্রুতি আছে, নীলচাষে অবাধ্য চাষীদের এখানে নির্যাতন করে হত্যা করে এ কূপের মধ্যে ফেলে দেওয়া হতো। কুঠিবাড়িটি ১৮১৫-২০ সালের মধ্যে স্থাপিত হয় বলে জানা গেছে। কুঠিবাড়িটি নির্মাণের পর এ পর্যন্ত চারবার সংস্কারকাজ হয়েছে। কুঠিবাড়িটিতে ১৯৬২ সালে প্রথমবার, ১৯৭৮ সালে দ্বিতীয়বার, ১৯৯৬ সালে তৃতীয়বার ও ১৯৯৯ সালে চতুর্থবার সংস্কারকাজ হয়েছে।

আমঝুপি নীলকুঠিটি সংস্কার করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুললে সরকার এখান থেকে প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণ রাজস্ব আয় করবে বলে মত প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।

…………………………………………………………………………………………………………..

কপ-১৭: অধিক কার্বন শোষণে বিষাক্ত হচ্ছে সাগর-মহাসাগর

Protik-Bardhan
লেখক:প্রতীক বর্ধন- প্রাবন্ধিক ও পরিবেশকর্মী;

সামুদ্রিক অম্লত্ব বৃদ্ধি জলবায়ু পরিবর্তনের আরেকটি গুরুতর ক্ষেত্র। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি নিয়ে অনেক কথা বলা হচ্ছে; ফলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে বহু দেশ তলিয়ে যেতে পারে;এমন আশঙ্কাও রয়েছে। এটা এখন ছেলেবুড়ো প্রায় সবাই জানে। কিন্তু অধিক হারে কার্বন নিঃসরণের ফলে সমুদ্রের পানির অম্লত্ব বৃদ্ধি যে আমাদের জন্যে আরেক মহাবিপদ ডেকে নিয়ে আসছেতা অনেকটাই অগোচরে রয়ে গেছে। 

 সমুদ্র গবেষকরা ইতোমধ্যে সতর্ক করে দিয়েছেন এই বলে যেসমুদ্রের পানির ক্রমাগত অম্লত্ব বৃদ্ধি সামুদ্রিক প্রাণী ও জীববৈচিত্র্যের জন্য এক মারাত্মক হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে। অত্যাধিক হারে কার্বন শোষণের কারণে সমুদ্রের পানিতে প্রবালের বংশবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। প্রবাল না থাকলে রিফও হয় না। প্রায় এক চতুর্থাংশ সমুদ্রের প্রাণীর বাসস্থান হচ্ছে প্রবাল প্রাচীর। অন্যদিকেপর্যটন স্পট হিসেবে খ্যাত গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ থেকে বছরে ৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার আয় হয়ে থাকেযা প্রায় ৬৩ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। আরও বিপুল সংখ্যক মানুষ খাদ্যের জন্যে প্রবালের ওপর নির্ভরশীল। প্রবাল বিলুপ্ত হলে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে। এর ফলে সমুদ্রের বিভিন্ন স্তরের বাস্তুতন্ত্রমাছঅপরাপর প্রাণী হারিয়ে যেতে পারেএমনকি সমুদ্রের পুরো খাদ্যশৃঙ্খলও ভেঙে পড়তে পারে।

অধিক হারে কার্বন শোষণের ফলে সমুদ্রের পানির ph কমে যাচ্ছেঅন্যদিকে হাইড্রোজেন আয়নের (H+) ঘনত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিল্প বিপ্লবের পরবর্তীকালে সমুদ্রের পানির উপরের ph-এর মাত্রা লগারিদমের স্কেলে ০.১ ইউনিট কমেছে। অন্যদিকে, হাইড্রোজেন আয়নের (H+) ঘনত্ব বেড়েছে ২৯ শতাংশ। ধারণা করা হচ্ছে২১০০ সাল নাগাদ ph আরও ০.৩ থেকে ০.৫ ইউনিট কমবে। যদি এ হারে মনুষ্যসৃষ্ট কার্বন নিঃসরণ চলতে থাকে। ph এর মান ৭-এর নিচে গেলে পানির অম্লত্ব বৃদ্ধি পায়৭ এর ওপরে থাকলে ক্ষারত্ব বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ প্রাণের বিকাশের জন্য ph এর মান নির্দিষ্ট থাকা আবশ্যক।

পৃথিবীতে নিঃসরিত কার্বন ডাই অক্সাইডের ৩০ শতাংশ শোষণ করে আমাদের সাগর ও মহাসাগরগুলো। আবার গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরনের ফলে যে তাপ উৎপন্ন হয় তার ৮০ শতাংশ শোষণ করে এই সাগর ও মহাসাগর। তবে এর জন্য এদের বিরাট ক্ষতির সম্মুখিন হতে হচ্ছে। আমরা যে অক্সিজেন গ্রহণ করি তার ৫০ শতাংশ সরবরাহ করে সামুদ্রিক প্লাংকটন। সমুদ্রের পানির অম্লতা  বেড়ে যাওয়ার কারণে এসব ছোট ছোট আণুবীক্ষণিক প্রাণী দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে আমাদের অস্তিত্বের জন্যে সেটা কতটা মারাত্মক হবে তা বলাই বাহুল্য।

অব্যাহতভাবে কার্বন নিঃসরণের কারণে সমুদ্রের নিজস্বতা লোপ পাচ্ছে। অন্যভাবে বললেতার রসায়ন বিনষ্ট হয়ে পড়ছে। এর ফলে শক্ত খোলসঅলা সামুদ্রিক প্রাণী যেমন প্রবালকাঁকড়াক্ল্যাম প্রভৃতি প্রাণীর অস্তিত্ব বিপণ্ন হয়ে পড়ছে। সমুদ্রের পানিতে অধিক হারে শোষিত কার্বন ক্যালসিয়াম শোষণ করছে। এসব প্রাণীর খোলস ও কঙ্কাল তৈরির জন্য যা একান্ত অপরিহার্য। পরিণামেএসব প্রাণীর বংশবিস্তার করা কঠিন হয়ে পড়বে। এমনকি এ হারে যদি কার্বন নিঃসরণ চলতে থাকে তাহলে বর্তমানে জীবিত এসব অনেক প্রাণীর খোলস ও কঙ্কাল গলে যেতে পারে।

অন্যদিকেযেসব প্রাণীর এরূপ ক্যালসিয়াম প্রয়োজন নেইতারা সরাসরি বিলুপ্ত না হলেও বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে তাদের সামগ্রিক ফিটনেস ও বেঁচে থাকার ক্ষমতা হ্রাস পাবে। ফলে এসব প্রাণীর বৃদ্ধির হারবংশবৃদ্ধি ও নিশ্বাস-প্রশ্বাস ক্ষমতা প্রভৃতি হ্রাস পাবে। শেষ পর্যন্ত তাদের খাদ্য শৃঙ্খল ও বাস্তুতন্ত্রকেও ভেঙে দিতে পারে।

বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেনসমুদ্রের এই ক্রমর্ধমান অম্লতা এক দশকের মধ্যে প্রকৃতির তাপমাত্রা ও মেরুর জলজ বাস্তুতন্ত্রের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। কারণশীতল পানি উষ্ণ পানির চেয়ে অধিক হারে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে। আমাদের মেরুর সমুদ্র ইতোমধ্যে যেভাবে এসিডিক হয়ে পড়েছে তাতে সেখানে অনেক খোলসঅলা প্রাণীর খোলস গলে পড়ছে।

কুইন্সল্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অভ হোয়েগ গুল্ডবার্গ বলেছেন‘বিগত ২০ বছর প্রবাল প্রাচীর নিয়ে গবেষণা করে আমি এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যেকার্বন নিঃসরণ কমানো সম্ভব না হলে এই অপরূপ ও সমৃদ্ধ বাস্তুতন্ত্র আগামী কয়েক দশকের মধ্যে বিলীন হয়ে যেতে পারে। আমার এ হাইপোথিসিস ভুল হলে আমি খুব খুশি হতাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য;আমার এ ধারণার পেছনে প্রচুর বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত রয়েছে।’

একইসাথে ইউরোপীয়দের কাছে সামুদ্রিক খাবারের জনপ্রিয়তা রয়েছে। বিশেষত মাছসামুদ্রিক টুনা মাছ অত্যন্ত প্রিয় করে তোলা হয়েছে বিভিন্ন প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে। আর ইউরোপীয়দের এই রসনা বিলাস মেটাতে সি ফিশ কোম্পানিগুলো আটলান্টিক থেকে নির্বিচারে টুনা মাছ শিকার করছে। টুনা মাছ শিকার বন্ধে ইন্টারন্যাশনাল কমিশন ফর দ্য কনজারভেশন অব আটলান্টিক টুনাসের বিজ্ঞানীরা মাছের রাজা খ্যাত এ মাছ শিকারের বার্ষিক যে মাত্রা নির্ধারণ করেছিলেন এ সংস্থাটি ফিশিং কোম্পানিগুলোকে তার চেয়ে অধিক হারে টুনা শিকারের সুযোগ দিচ্ছে। যদিও এটা সবাই জানে বর্তমান হারে টুনা শিকার হতে থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই টুনা নিশ্চহ্ন হয়ে যাবে। তা নিয়ে অনেক শোরগোলও হচ্ছে। এতসব কিছুর পরও টুনা শিকার কোনভাবেই থামছে না। কারণ তার পেছনে পুঁজির আরেকটি সূত্র ক্রিয়াশীলটুনা মাছের সংখ্যা যত কমবে তার দাম ততই বাড়বেলাভও তাই অধিক। সেকারণেই এ প্রজাতির দু-চারটে মাছ বাঁচিয়ে রেখে লাভ কীসর্বোচ্চ পরিমাণ লাভ করে তারপর এ শিল্প থেকে পুঁজি সরিয়ে অন্য শিল্পে বিনিয়োগ করলেই তা লাভজনক। অবস্থাদৃষ্টে অন্তত তাই মনে হচ্ছে।

তিমির তেলের জন্য ব্যাপক হারে তিমি শিকার করছে মানুষ। হাঙ্গর শিকার করা হয়েছে। ফলশ্রুতিতেসমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রে এক বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে। ফলে সমুদ্রের তলদেশে বসবাসরত বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদও বিলীন হতে বসেছে। অথচ পৃথিবীতে যে পরিমাণ সামুদ্রিক শৈবাল রয়েছে তা মানুষের আমিষের প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথেষ্ট বলে মনে করা হয়।

এদিকেসুমেরুতে ক্রমাগত বরফের পরিমাণ কমছে। বিজ্ঞানীরা বলছেনগত দেড় সহস্রাব্দে যতরকম প্রাকৃতিক পরিবর্তন ঘটেছে সুমেরুর এই বরফ হ্রাস তার মধ্যে এক নম্বর। তারা বলছেনএর মধ্যে প্রাকৃতিক ব্যাপারের চেয়ে মনুষ্য হস্তক্ষেপের প্রভাবই অধিক। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে জার্মানির ব্রেমেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক রিপোর্টে বলা হয়েছেসমুদ্রের বরফ এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল স্নো অ্যান্ড আইস ডাটা সেন্টার একটি স্যাটেলাইট ডাটা সেটের ওপর ভিত্তি করে গবেষণা পরিচালনা করে বলেছে২০১১ সালে সমুদ্রের বরফের পরিমাণ দ্বিতীয় সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে২০০৭ সালে যা সর্বাধিক ছিল।

জার্মানির ব্রেমেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্রিস্টোফ কিনার্ড বলেনসবচেয়ে আশঙ্কার কথা হচ্ছে অতীতে সমুদ্রে বরফ হ্রাসের যেসকল কারণ দেখা গেছে তার সাথে বর্তমান এই বরফ হ্রাসের তেমন মিল নেই। তিনি বলেনসবকিছুই যেন বাড়ছে পানির উপরিভাগের তাপমাত্রাপ্রকৃতির তাপমাত্রা। ফলে সমুদ্র উত্তপ্ত হয়ে উঠছেআর গরম পানি ও ও লবণাক্ত পানি আরও অধিক হারে সুমেরুতে প্রবেশ করছে। এতে বরফ ভেতর থেকে ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে ও উপর থেকে গলে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেনঅতীতে সামুদ্রিক স্রোতের গতি পরিবর্তনের ফলে উত্তর আটলান্টিক সাগরের লোনা ও গরম পানি সুমেরুতে প্রবেশ করত। কিন্তু বর্তমানে বায়ুর তাপমাত্রা প্রধান কারণ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

ক্রিস্টোফ কিনার্ড তার পিএইচডি করতে গিয়ে বেশ কিছু প্রশ্নের সমাধান খোঁজেন‘বর্তমান পরিবর্তন কি একটু ভিন্নরকমএটা কি কোনো বৃহত্তর চক্রের অংশ? তা সমাধান করতে গিয়ে তিনি ৬০টি ভিন্ন উৎস থেকে ডাটা সংগ্রহ করেন। তাতে তিনি বিগত ১৪৫০ বছরের সামুদ্রিক বরফের মাত্রা পরিবর্তনের একটি ইতিহাস লিপিবব্ধ করেন। তিনি দেখেন ইতিহাসে যে সময় বরফের পরিমাণ সবচেয়ে কম ছিলতখন সুমেরুতে ৮.৫ মিলিয়ন বর্গ কিমি বরফ ছিল। বর্তমানে বরফের পরিমাণ এর চেয়েও কম। 

বরফ কমে যাওয়া যেমন তাপমাত্রা বৃদ্ধির একটি ফলাফলতেমনি এ কারণে সমুদ্রের পনির তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ বরফ স্বচ্ছ হওয়ায় তা তাপ প্রতিফলন করে। কিন্তু সমুদ্রের পানি হচ্ছে গাঢ়যার ভেতরে গেলে পাওয়া যায় অন্ধকার। এই কালো পানি অধিক হারে তাপ শোষণ করছেসমুদ্র হয়ে উঠছে তপ্ত। এর ফলে সমুদ্রের ক্রমক্ষয়িষ্ণু বাস্তুতন্ত্র আরও বিপদের মুখে পড়বে। অর্থাৎ বিপদ ঘটছে চারদিক থেকেই।

—————————————————————————————————————————

আফ্রিকান ক্লাইমেট ট্রেন

কপ-১৭ Top 4

কপ ১৭ জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলন কপ ১৭ শুরু হতে যাচ্ছে ২৮ নভেম্বর। জাতিসংঘের ১৯৪টি সদস্যদেশ এতে অংশ নেবে। ১২ দিনব্যাপী চলবে এই সম্মেলন। এবারের সম্মেলনে সদস্য দেশগুলো প্রধানত দুটি সমঝোতায় পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। একটি হচ্ছে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সহযোগিতা করার জন্য একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যা পরিবেশ বান্ধব শক্তি এবং অভিযোজন সংক্রান্ত প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দেবে। পাশাপাশি অ্যাডাপটেশন/ অভিযোজনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য একটি কাঠামোগত প্রস্তাবসহ গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড নিয়েও আলোচনা হবে। অন্যটি হচ্ছে বিশ্বের তাপমাত্রা সহনীয় মাত্রায় কমিয়ে আনার ব্যাপারে বিভিন্ন দেশের সরকারের সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করা হবে।
একমাত্র আইনগত বাধ্যবাধকতামূলক চুক্তি কিয়োটো প্রটোকল নিয়েও সম্মেলনে আলোচনা হবে। বাংলাদেশের বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী ডঃ হাছান মাহমুদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে।
কনফারেন্স অব ইয়ুথ
প্রতি বছর কপের আগেই সম্মেলনে অংশ নেওয়া তরুণদের জন্য আয়োজন করা হয় কনফারেন্স অব ইয়ুথ। তরুণদের এই সম্মেলন থেকে এডভোকেসি, নেটওয়ার্কিং, ইয়ুথ মুভমেন্ট গড়ে তোলা, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিজ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞান আর্জন, জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে আলোচনায় অংশ নেওয়া, মিডিয়া ক্যাম্পেইন, থিওরিজ় অব চেইঞ্জ, বনায়ন সহ বিভিন্ন বিষয়ে কপ থেকে দক্ষতা অর্জন করতে পারে।
সম্মেলনের শেষ দিনে পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্রিনপিসের প্রধান কুমি নাইডু তরুণদের উৎসাহ দিয়ে বলেন, ‌‌‌‌‍‌‌‌‌‌‌‍‍‍‍‍‌‌‌‌‌‌‌‌আগামী দিনের নাগরিকদের এখনই এগিয়ে আসতে হবে তাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার জন্য। এবারে দক্ষিণ আফ্রিকা ইয়ুথ ক্লাইমেট কোয়ালিশন গঠন করা হয়েছে।
আফ্রিকান ক্লাইমেট ট্রেন
মোবিলাইজেশন, ডায়ালগ ও ক্লাইমেট জাস্টিস এই স্লোগান নিয়ে আফ্রিকান ট্রেন যাত্রা শুরু করে ৩৩ দিন আগে। দক্ষিণ আফ্রিকার ১৭টি শহর ঘুরে আজ ডারবান এসে পৌঁছায় কপ ১৭ তে অংশ নেওয়ার জন্য। বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষকে নিয়ে এই ট্রেন যাত্রা শুরু করে কপ ১৭ এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে আফ্রিকান মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করার জন্য।
আয়োজনটির অন্যতম উদ্যোক্তা দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রানালয়, রেল কতৃপক্ষ, ব্রিটিশ কাউন্সিল, দক্ষিণ আফ্রিকার জার্মান দূতাবাস। এই ট্রেন যাত্রার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল পাবলিক যানবাহনের ব্যবহার বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো।
আফ্রিকান ক্লাইমেট ট্রেনকে ডারবানে বরণ করার জন্য ডারবান রেলস্টেশনে ছিলেন ডারবানের মেয়র, ব্রিটিশ কাউন্সিলের চ্যাম্পিয়নরা। আফ্রিকান গান ও সুরের তালে তাদের স্বাগত জানায় সাধারণ আফ্রিকানরা। এই ধরনের আরো মজার এবং চমৎকার আয়োজনের মধ্যে কপ১৭ কে সার্থক করে তোলার চেষ্টা করছে সুশীল সমাজ। 
বাংলাদেশকে চেনার মত যতগুলো আন্তর্জাতিক বিষয় আছে তার মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন একটি। কারণ ডারবানে এসে আফ্রিকান ক্লাইমেট ট্রেনে দেখি বাংলাদেশি একটি ছেলের আঁকা ছবি প্রিন্ট করে লাগানো হয়েছে। যেখানে সে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব তুলে ধরেছে চমৎকারভাবে।
অপরদিকে ব্রিটিশ কাউন্সিলের আরেক ক্লাইমেট চ্যাম্পিয়ন রিফাতের ভাসমান বাড়ির ছবি জায়গা করে নিয়েছে ব্রিটিশ কাউন্সিলের লিফলেটে। এসব ছবি কপ ১৭ তে অংশ নেওয়া ডেলিগেটদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এইতো গেলো ছোটদের কথা, বড়রাও কিন্তু জোরালোভাবে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরছে বিভিন্ন সেশনে।
আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে কপ ১৭। আলোচনা শুনতে শুনতে সবাই অনেকটাই ক্লান্ত। দেখা যাক, ডারবানে কিছু হয় কিনা।

…………………………………………………………………………………………………………..

জিয়ার ঘোষণাই ছিল মুক্তিযুদ্ধের তূর্যধ্বনি : টাইমস অব ইন্ডিয়া

জিয়ার ঘোষণাই ছিল মুক্তিযুদ্ধের তূর্যধ্বনি। এই ঘোষণা শুনে আকস্মিক হামলায় হতভম্ব জাতি পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। সেদিনের সেই রুখে দাঁড়ানো থেকেই বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর।’ ভারতের বহুল প্রচারিত ইংরেজি দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া-র এক রিপোর্টে একথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশের ৪০তম বিজয় দিবস সামনে রেখে পত্রিকাটির ১১ ডিসেম্বর সংখ্যায় এ রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। অনুরাধা শর্মার ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা কে ঘোষণা করেন? মুজিব অথবা জিয়াউর রহমান’ শিরোনামের এ রিপোর্টে স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে চলমান বিতর্কের বিষয়টি বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়। রিপোর্টের শেষাংশে জিয়াউর রহমানের ঘোষণা যে হতভম্ব বাঙালি জাতিকে প্রেরণা জুগিয়েছিল, সে বিষয়টিও উঠে আসে।
রিপোর্টে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ জন্ম নিয়েছে ৪০ বছর আগে। কিন্তু স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে দীর্ঘ বিতর্ক রয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমান অথবা জিয়াউর রহমান কে এর ঘোষক—এই প্রশ্নের আজও মীমাংসা হয়নি। বাংলাদেশীদের কাছে এই প্রশ্নের উত্তর দু’রকম, বিশেষ করে রাজনৈতিক মতাদর্শ অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগ তথা সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ গ্রেফতার হওয়ার আগে শেখ মুজিবুর রহমানই প্রথম স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এদিনটি পালিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস হিসেবে। বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) দাবি করে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান প্রথম স্বাধীনতা ঘোষণা করেন ২৭ মার্চ। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকায় আক্রমণ করে। শেষরাতের দিকে তারা গ্রেফতার করে শেখ মুজিবকে। এর আগেই ২৬ মার্চ তিনি ‘আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ স্বাক্ষর করেন বলে উল্লেখ করা হয়। ২৭ ও ২৮ মার্চ রেডিওতে জিয়াউর রহমানের কণ্ঠ শুনতে পায় দেশবাসী। তিনি ঘোষণা করেন, ‘এটা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। আমি, মেজর জিয়াউর রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী ঘোষণা করছি যে, আজ থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নামে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলো। এই নির্দেশনা অনুযায়ী, আমি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অস্থায়ী প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। শেখ মুজিবুর রহমানের নামে, আমি পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের মাতৃভূমি রক্ষায় শেষমুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করে যাব।’
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ভাইস প্রেসিডেন্ট বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আমি ছিলাম সিলেটের এক চা বাগানে। তখন শুনি মেজর জিয়ার ঘোষণা। তার ঘোষণাই সবাই শুনেছে। শেখ মুজিবের ঘোষণা কেউ শোনেনি।’
প্রত্যুত্তরে আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মতিন খসরু বলেন, ‘এ বিতর্ক তাদের (বিএনপি) সৃষ্টি। এর নিষ্পত্তি এর মধ্যেই সুপ্রিমকোর্টে হয়ে গেছে। শেখ মুজিব ছিলেন জাতীয় নেতা। তিনি স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছিলেন ২৬ মার্চ। জিয়াউর রহমান ছিলেন সেনাবাহিনীর একজন মেজর মাত্র, কোনো নেতা ছিলেন না। অমন একটি ঘোষণা দেয়ার মতো অবস্থান তার ছিল না। তিনি অমন দাবিও করেননি। ১৯৮১ সালে তার মৃত্যুর পর বিএনপি এই বিতর্ক শুরু করে।’
মুজিবকন্যা, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জিয়াউর রহমানের বিধবা পত্নী খালেদা জিয়া এ বিতর্ককে জাগিয়ে রেখেছেন।
তবে এটা অনস্বীকার্য, আকস্মিক হামলায় হতভম্ব জাতিকে পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে ওই বেতার ঘোষণাটিই ছিল তূর্যধ্বনি। সেদিনের সেই রুখে দাঁড়ানো থেকেই বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর।

…………………………………………………………………………………………………………..

মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য ১২৪ বিদেশী সম্মাননা পাচ্ছেন: ভারতের ৪১, রাশিয়ার ১০, যুক্তরাষ্ট্রের ১৫, যুক্তরাজ্যের ১২

Photo: Tibetan SFF Commandos in Bangladesh during the 1971
 ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় অবদানের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বরেণ্য রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতিবিদ, দার্শনিক, শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, বিশিষ্ট নাগরিক এবং সংগঠনকে সম্মননা দিতে ১২৫ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা চূড়ান্ত করেছে সরকার। আগামী ১০ জানুয়ারি থেকে ২৬ মার্চ এ সময়ের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য এসব বিদেশি নাগরিকদের সম্মাননা দেয়া হবে।
বিদেশি বরেণ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভারতের রয়েছে ৪১ জন, রাশিয়ার ১০ জন, যুক্তরাষ্ট্রের ১৫ জন, যুক্তরাজ্যের ১২ জন, জার্মানের ৪ জন, পাকিস্তানের ৫ জন। ব্যক্তির পাশাপাশি ৭টি প্রতিষ্ঠানকেও সম্মাননা প্রদান করা হবে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে বিবিসি, আকাশবাণী, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সহায়ক সমিতি, বিশ্ব শান্তি পরিষদ ইত্যাদি।
ভারতের যেসব নাগরিক সম্মাননা পাচ্ছেন তারা হলেন- শচীন্দ্র লাল সিংহ, রাজ্যেশ্বর রাও, সিদ্ধার্থ শংকর রায়, পি এ সাংমা, বিচারপতি সা’দাত আবুল মাসুদ, মহারানী বিভা কুমারী দেবী, প্রফেসর দিলীপ চক্রবর্তী, সমর সেন, দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, প-িত রবিশংকর, ওস্তাদ আলী আকবর খাঁ, মাদার তেরেসা, ওয়াহিদা রেহমান, সুনীল দত্ত, নার্গিস দত্ত, কাইফি আজমী, ভূপেন হাজারিকা, অ্যাডভোকেট সুব্রত রায় চৌধুরী, ফিল্ড মার্শাল এসএএম মানেক শ, লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা, লেফটেন্যান্ট জেনারেল জ্যাকব, ল্যান্স নায়েক আলবার্ট এক্কা, নারায়ণ দেশাই, মানিক সরকার, আই পি গুপ্ত, জি. বি. হাসপাতাল ও সার্জন সুপারিনটেন্ডেন্ট ডা. রথিন দত্ত, রওশন আরা বেগম সাংমা, দশরথ দেব বর্মণ, লতা মঙ্গেশকর, ডিপি ধর, জেনারেল উবান, গোলক মজুমদার, পিএন হাকসার, ড. করণ সিং, সরদার শরন সিং, শরৎ চন্দ্র সিংহ, ভারতীয় জনগণ ও মিত্র বাহিনী।
রাশিয়ার যেসব ব্যক্তি সম্মাননা পাচ্ছেন তারা হলেন- নিকলাই ভিক্টরভিচ পডগোরনি, আদ্রেঁ গ্রোমিকো, ইয়াকভ আলেকজান্ডারভিচ মালিক, আলেক্সি নিকোলেভিচ কোসিগিন, প্রফেসর ভস্নাদিমির স্টানিস, লিওনিদ ব্রিজনেভ, নিকলাই ফ্রিউবিন, আনাতলি ডবরিনিন, অ্যাডমিরাল জুয়েনকো ও তার দল ও সিপিএসইউ’র ১৭ সদস্য বিশিষ্ট পলিটব্যুরো।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছেন-অ্যানা ব্রাউন টেইলর, আর্চার কে বস্নাড, সিনেটর এডওয়ার্ড মুর কেনেডি, রিচার্ড টেইলর, লিয়ার লেভিন, ফাদার ইউলিয়াম বি টিম, সিনেটর ফ্রেড রয় হ্যারিস, ডা. জোসেফ গার্স্ট, ইউলিয়াম গ্রীনো, এডওয়ার্ড সি মেসন, প্রফেসর এডওয়ার্ড সি ডিমক, ডেভিড ওয়াইজব্রড, অ্যালেন গিনসবার্গ, শহীদ ফাদার ইভান্স, প্রফেসর জে কেনেথ গলব্রেথ। ব্রিটিশ নাগরিকদের মধ্যে রয়েছেন-স্যার এডওয়ার্ড রিচার্ড জর্জ হিথ, লর্ড হ্যারল্ড উইলসন, লর্ড পিটার ডেভিড শোর, মাইকেল বার্নস, সায়মন ড্রিং, জর্জ হ্যারিসন, ব্রুস ডগলাস মান, জুলিয়াস ফ্রান্সিস, পল কানেট, এলেন কানেট, বিমান মলি্লক, মার্ক টালি। ফরাসি নাগরিক আন্দ্রে মার্লো।
জার্মান নাগরিকদের মধ্যে রয়েছেন-উইলি ব্র্যান্ট, বারবারা দাশগুপ্ত, সুনীল দাশগুপ্ত, এরিক হোয়েনকার। অস্ট্রেলিয়ার উইলিয়াম এ এস ওডারল্যান্ড, অস্ট্রিয়ার ব্রুনো ক্রেইস্কি, কানাডিয়ান নাগরিক পিয়ের ট্রুডো, আইরিশ নাগরিক শন ম্যাকব্রাইড, ব্যারিস্টার নোরা শেরিফ, যুগোশ্লাভিয়ার মার্শাল জোসেফ ব্রজ টিটো, ইতালির ফাদার মারিও রিগন। জাপানির তাকাশি হায়াকাওয়া, প্রফেসর নারা, তাকামাসা সুজুকি, নাওয়াকি উসুই। নেপালের ড. রাম বরণ যাদব ও বিপি কৈরালা। পাকিস্তানের আহমদ সলিম, কাজী ফয়েজ মোহাম্মদ, নাসিমা আক্তার, খান আব্দুল গাফ্ফার খান, খান আব্দুল ওয়ালি খান, কিউবার প্রেসিডেন্ট ফিদেল ক্যাস্ট্রো। আর্জেন্টিনার ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো, জর্জ লুইস বর্গেস, ভেনিজুয়েলার কার্ডিয়ান হোসে উমবার্তো কুইনতেরো, সুইজারল্যান্ডের প্রফেসর জিয়ান জিগলার, ভুটানের লিউনপো উজিয়েন শেরিং, সুইডেনের ওলফ পামে, ডেনিশ নাগরিক ড. কার্সটিন ওয়াস্টার গার্স্ট, মালয়েশিয়ার ড. এ সুরিয়ান, শ্রীলঙ্কার স্যার সেনারত্ন গুণবর্ধন, ডাচ নাগরিক কিনটেন ওয়াটে বাগ, দক্ষিণ কোরিয়ার হং সুক জা, পোল্যান্ডের অগাস্ট জালেস্কি, ভিয়েতনামের মাদাম বিন।
এছাড়া ৭টি প্রতিষ্ঠান পাচ্ছে সম্মাননা। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে বিবিসি, আকাশবাণী, ইউএনএইচসিআর, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সহায়ক সমিতি, বিশ্ব শান্তি পরিষদ, অক্সফাম ও আইসিআরসি।

…………………………………………………………………………………………………………..

Bangladesh war: The article that changed history

Anthony Mascarenhas' article in the Sunday Times

Anthony Mascarenhas

Anthony Mascarenhas
  • July 1928: Born in Goa
  • 1930s: Educated in Karachi
  • June 1971: Exposes war crimes in East Pakistan that alter international opinion
  • 1972: Wins international journalism awards
  • 1979: Reports that Pakistan has developed nuclear weapons


On 13 June 1971, an article in the UK’s Sunday Times exposed the brutality of Pakistan’s suppression of the Bangladeshi uprising. It forced the reporter’s family into hiding and changed history.

Abdul Bari had run out of luck. Like thousands of other people in East Bengal, he had made the mistake – the fatal mistake – of running within sight of a Pakistani patrol. He was 24 years old, a slight man surrounded by soldiers. He was trembling because he was about to be shot.

So starts one of the most influential pieces of South Asian journalism of the past half century.

Written by Anthony Mascarenhas, a Pakistani reporter, and printed in the UK’s Sunday Times, it exposed for the first time the scale of the Pakistan army’s brutal campaign to suppress its breakaway eastern province in 1971.

Nobody knows exactly how many people were killed, but certainly a huge number of people lost their lives. Independent researchers think that between 300,000 and 500,000 died. The Bangladesh government puts the figure at three million.

The strategy failed, and Bangladeshis are now celebrating the 40th anniversary of the birth of their country. Meanwhile, the first trial of those accused of committing war crimes has recently begun in Dhaka.

There is little doubt that Mascarenhas’ reportage played its part in ending the war. It helped turn world opinion against Pakistan and encouraged India to play a decisive role.

Prime Minister Indira Gandhi told the then editor of the Sunday Times, Harold Evans, that the article had shocked her so deeply it had set her “on a campaign of personal diplomacy in the European capitals and Moscow to prepare the ground for India’s armed intervention,” he recalled.

Not that this was ever Mascarenhas’ intention. He was, Evans wrote in his memoirs, “just a very good reporter doing an honest job”.

He was also very brave. Pakistan, at the time, was run by the military, and he knew that he would have to get himself and his family out of the country before the story could be published – not an easy task in those days.

“His mother always told him to stand up and speak the truth and be counted,” Mascarenhas’s widow, Yvonne, recalled (he died in 1986). “He used to tell me, put a mountain before me and I’ll climb it. He was never daunted.”

Pakistan before the war in 1971
A map of Pakistan before the 1971 war

When the war in what was then East Pakistan broke out in March 1971, Mascarenhas was a respected journalist in Karachi, the main city in the country’s dominant western wing, on good terms with the country’s ruling elite. He was a member of the city’s small community of Goan Christians, and he and Yvonne had five children.

“Quote

Yvonne Mascarenhas

It was terrifying – I had to leave everything behind”
Yvonne Mascarenhas

The conflict was sparked by elections, which were won by an East Pakistani party, the Awami League, which wanted greater autonomy for the region.

While the political parties and the military argued over the formation of a new government, many Bengalis became convinced that West Pakistan was deliberately blocking their ambitions.

The situation started to become violent. The Awami League launched a campaign of civil disobedience, its supporters attacked many non-Bengali civilians, and the army flew in thousands of reinforcements.

On the evening of 25 March it launched a pre-emptive strike against the Awami League, and other perceived opponents, including members of the intelligentsia and the Hindu community, who at that time made up about 20% of the province’s 75 million people.

In the first of many notorious war crimes, soldiers attacked Dhaka University, lining up and executing students and professors.

Their campaign of terror then moved into the countryside, where they battled local troops who had mutinied.

Initially, the plan seemed to work, and the army decided it would be a good idea to invite some Pakistani reporters to the region to show them how they had successfully dealt with the “freedom fighters”.

Foreign journalists had already been expelled, and Pakistan was also keen to publicise atrocities committed by the other side. Awami League supporters had massacred tens of thousands of civilians whose loyalty they suspected, a war crime that is still denied by many today in Bangladesh.

Eight journalists, including Mascarenhas, were given a 10-day tour of the province. When they returned home, seven of them duly wrote what they were told to.

But one of them refused.

Yvonne Mascarenhas remembers him coming back distraught: “I’d never seen my husband looking in such a state. He was absolutely shocked, stressed, upset and terribly emotional,” she says, speaking from her home in west London.

“He told me that if he couldn’t write the story of what he’d seen he’d never be able to write another word again.”

Clearly it would not be possible to do so in Pakistan. All newspaper articles were checked by the military censor, and Mascarenhas told his wife he was certain he would be shot if he tried.

Pretending he was visiting his sick sister, Mascarenhas then travelled to London, where he headed straight to the Sunday Times and the editor’s office.

Pro-independence Mukti Bahini fighters on their way to the front line in East Pakistan during the 1971 conflict
Indians and Bengali guerrillas fought in support of East Pakistan

Evans remembers him in that meeting as having “the bearing of a military man, square-set and moustached, but appealing, almost soulful eyes and an air of profound melancholy”.

“He’d been shocked by the Bengali outrages in March, but he maintained that what the army was doing was altogether worse and on a grander scale,” Evans wrote.

Mascarenhas told him he had been an eyewitness to a huge, systematic killing spree, and had heard army officers describe the killings as a “final solution”.

Evans promised to run the story, but first Yvonne and the children had to escape Karachi.

They had agreed that the signal for them to start preparing for this was a telegram from Mascarenhas saying that “Ann’s operation was successful”.

Yvonne remembers receiving the message at three the next morning. “I heard the telegram man bang at my window and I woke up my sons and I was: ‘Oh my gosh, we have to go to London.’ It was terrifying. I had to leave everything behind.

“We could only take one suitcase each. We were crying so much it was like a funeral,” she says.

To avoid suspicion, Mascarenhas had to return to Pakistan before his family could leave. But as Pakistanis were only allowed one foreign flight a year, he then had to sneak out of the country by himself, crossing by land into Afghanistan.

The day after the family was reunited in their new home in London, the Sunday Times published his article, under the headline “Genocide”.

‘Betrayal’

It is such a powerful piece of reporting because Mascarenhas was clearly so well trusted by the Pakistani officers he spent time with.

I have witnessed the brutality of ‘kill and burn missions’ as the army units, after clearing out the rebels, pursued the pogrom in the towns and villages.

I have seen whole villages devastated by ‘punitive action’.

And in the officer’s mess at night I have listened incredulously as otherwise brave and honourable men proudly chewed over the day’s kill.

‘How many did you get?’ The answers are seared in my memory.

“Quote: This was one of the most significant articles written on the war”

Mofidul Huq, Liberation War Museum

His article was – from Pakistan’s point of view – a huge betrayal and he was accused of being an enemy agent. It still denies its forces were behind such atrocities as those described by Mascarenhas, and blames Indian propaganda.

However, he still maintained excellent contacts there, and in 1979 became the first journalist to reveal that Pakistan had developed nuclear weapons.

In Bangladesh, of course, he is remembered more fondly, and his article is still displayed in the country’s Liberation War Museum.

“This was one of the most significant articles written on the war. It came out when our country was cut off, and helped inform the world of what was going on here,” says Mofidul Huq, a trustee of the museum.

His family, meanwhile, settled into life in a new and colder country.

“People were so serious in London and nobody ever talked to us,” Yvonne Mascarenhas remembers. “We were used to happy, smiley faces, it was all a bit of a change for us after Karachi. But we never regretted it.”

The India-Pakistan War, 1971 At A Glance

Soldier
  • Civil war erupts in Pakistan, pitting the West Pakistan army against East Pakistanis demanding autonomy and later independence
  • Fighting forces an estimated 10 million East Pakistani civilians to flee to India
  • In December, India invades East Pakistan in support of the East Pakistani people.
  • Pakistani army surrenders at Dhaka and its army of more than 90,000 are Indian prisoners of war
  • East Pakistan becomes the independent country of Bangladesh on 16 December 1971

……………………………………………………………………………………………………………………………………………..

Martyred Intellectuals’ Day Special Isue

Martyred Intellectuals’ Day

Intellectuals: The Martyred and the Living

Serajul Islam Choudhury
————————————-

The martyred intellectuals of 1971 did not belong to the same profession, nor were they of equal eminence, but all of them had one thing in common, they were patriotic nationalists. The Pakistani hordes that killed them too declared themselves to be patriotic and nationalistic; but were poles apart from the Bengali intellectuals in their idea of patriotism and nationalism. Buoyed up by their patriotism of plunder, the armed Pakistanis subjected the Bengalis to one of the worst genocides in history.

Our martyred intellectuals belong to the people of East Bengal, who had discarded the two-nation theory of nationalism. The rejection was not merely theoretical; its practical significance was disastrous for the Pakistani ruling class whose intention was to turn East Bengal into their colony. To say not to Pakistani nationalism and turn to Bengali nationalism, which is what the martyred intellectuals had done, meant removing the very raison d’etre of the Pakistani state, asking the people to rise in rebellion against national oppression. And that is precisely what the Bengalis eventually did in 1971.

The process started with language discontent and movement which began right at the inception of Pakistan as a state. Initially it was an intellectual movement, but soon it took on a political character. The intellectuals had protested against the state’s presumptuous move to impose Urdu as the state language on the Bengalis; and the entire population of East Bengal lent their support to that protest. The toiling masses had their own disappointments, and they found in the new movement an outlet for their grievances. Step by step the movement grew and was strengthened by popular discontent. The design of the rulers to keep East Bengal as a rich field of exploitation became clearer with the passage of time and the demand for autonomy continued to gain momentum. The majority of the Pakistani population lived in East Bengal, and to deprive them of their rightful share of state power a curious, and totally undemocratic, system of parity was devised. The intellectuals and political leaders demanded universal adult suffrage, which the rulers had to concede, finally clearing, without their knowing it, the way for the breaking-up of the unnatural state that Pakistan was.

The contradiction between the state and the intellectuals was beyond resolution. Needless to say, all our intellectuals did not promote Bengali nationalism; there were some who clung to the establishment and acted in a manner which was reactionary. The intellectuals come from the middle class, which class is well-known for its wavering on ideological issues. But those who saw the national question from the historical and objective point of view were on the side of Bengali nationalism and felt the irresistible urge to take up a position which the state found intolerable. The intellectual, we know, is a person who interprets the world and engages himself/herself in the dissemination of the interpretation to the people. This is what the intellectuals who had rejected Pakistani nationalism had done, earning undisguised state hostility.

The martyred intellectuals have played their role; they have influenced the movement of history and become a part of it. But the important question is what the living intellectuals have been doing since independence. To be precise, the intellectuals have not explained what went wrong with the state and society in Bangladesh, not to speak of taking that explanation to the public. In fact most of them have affiliated themselves in varying degrees to the ruling class, a class that comprises contending parties, but is in reality a conglomerate of selfish interests. The leadership of the major political parties makes use of the public but remain far removed from them.

To put it in unmistakable terms, what ails Bangladesh — economically as well as ideologically — is capitalism. Capitalism had had its virtues, most of which it has lost in the process of its development. Capitalism in Bangladesh today is without enterprise and entrepreneurship; it relies on the gaining of riches through plunder and clings to the world capitalist system, even if marginally. It is certainly not without significance that the capitalist world was prepared to support our agenda of autonomy but not that of independence, fearing that the independence, movement would be led by extremists. By extremists they meant the leftists. India herself was interested in a quick ending of the Bengalis’ war against the Pakistanis not only because of the heavy pressure of refugees but also in the apprehension that a protracted war might result in a leftist take-over of leadership. And the way the capitalist world which opposed the liberation war has established its control over Bangladesh is a proof, if any be needed, of the surrender of our rulers to capitalism.

The emancipation that has been the dream of the people depended on a social revolution; but the class that took over state power did not believe in that kind of a revolution. For them the gaining of power was nothing short of a revolution and, in the interest of their security and continuity, they had pledged to themselves to keep the state and society as it was before.

The original constitution of Bangladesh had socialism as one of the regulating state principles. That, however, was more of a compromise than a pledge. The Awami League was not known for its faith in socialism; it was only in the 1970 Election Manifesto that the party promised to establish socialism, in view of the popular expectation.

Not to speak of a particular party, Bengali nationalism itself has been perceived by the bourgeois leadership in control of the nationalist movement as compounded of two elements — one explicit, the other implicit. Explicitly its leadership believed in linguistic nationalism, but implicitly it had nurtured its trust in capitalism. This became clear when the leadership took over state power. The rulers displayed their acceptance, in some form or other, of the idea of nationalism, but remained believers in capitalism. In other words, despite their rejection of the two-nation theory, they continued to be capitalist in ideology and outlook.

We have been experiencing the outcome of this clinging to capitalism. Socialism has been successfully driven out from the list of state principles; even secularism has not returned, having been thrown overboard for reasons of political expediency. Since 1972 inequality, which is direct result of the capitalist dispensation, has been continually rising, forcing patriotism to decline. The collective dream of a truly democratic state and society has been shattered by the phenomenal rise of the greed for personal aggrandizement. In almost all spheres of life, the national interest has been made subservient to personal interest. Privatization continues to threaten public property, including rivers and wetland. Education and healthcare have become commodities.

National wealth is being cheerfully handed over to foreigners. Human rights-violation and extra-judicial killing have reached a magnitude never known before. Ecologically the country is facing many dire threats. The fair name that Bangladesh had owned through the liberation war has been darkened by corruption and nepotism. In the comity of nations Bangladesh is being perceived as a country of natural disaster and political mismanagement. Within the country there is despair prevailing everywhere. Behind all these it is capitalism of a peculiar kind that is operative.

The intellectuals are not silent. One hears their voices in talk shows, round tables, occasional gatherings, press conferences; they sign statements and write in newspapers. More often than not, they speak about the symptoms, ignoring the disease. They demand reforms and corrections, and are oblivious of the fact that what we need is a social revolution that has been pre-empted by the ruling class. What is worse, many of our intellectuals are tied to the apron strings of the two major political parties and their views conform to the party line. In a word, their role remains very different from that of the martyred intellectuals, and their isolation from the people makes them ineffective. The root cause is their acceptance of the capitalist ideology. In this crucial respect there is no divergence between them and the ruling class. Not unlike the political leaders of the ruling class, they too support capitalism, although they would not confess to it publicly.

This ideological weakness holds them back and does not allow them to participate in the people’s movement for emancipation in the manner the martyred intellectuals did. In the inevitable contradiction between the state and the public, the living intellectuals serve the state and not the public. Political independence is a significant achievement, because among other gains it has resolved the national question and allowed the class question to come to the fore. And it is the class question that has to be addressed now by those who believe in the emancipation of the entire people, including that of their own.

The martyred intellectuals have left a legacy that they would expect us to carry forward. Those who are living can be vitally alive, effective and worthy of being called intellectuals if they join the people in the way their noble predecessors have done. For this it is imperative that they disaffiliate themselves from their capitalist moorings. This is the primary task, others would follow.

The writeris a leading intellectual and Professor Emeritus, Dhaka University.


Who carries their torch?

Rashid Askari
————————————-

The killing of the Bengali intellectuals during 1971 is, in some sense, far more premeditated than the notorious Holocaust. Although the Holocaust claimed twice as many lives compared to our Liberation war, the murderous Nazi did not pick and kill hundreds of top-notch intellectuals in such a short time span as did the bloodthirsty Pakistan occupation army and their local collaborators the Razakar, Al-Badr and Al-Shams. Why did they murder the best brains in the country? Although a few could escape by pure chance, the mission was the elimination of all the intellectuals from Bangladesh with a view to cripple the country with ignorance and eternal backwardness. The assassinated intellectuals were the highly educated academics, writers, physicians, engineers, lawyers, journalists, and other eminent personalities of the country who helped liberate the nation from prolonged Pakistani subjugation.

The martyred intellectuals were a very great wealth of talents. The French Enlightenment figures, Voltaire, Rousseau, Montesquieu, and John Locke kindled popular interest in the three basic principles of French Revolution Liberty, Equality, and Fraternity. Similarly, our intellectuals ignited masses of people in the spirit of freedom which resulted in gaining independence through a liberation war. They were the voice of conscience in all the scenes of the independence struggle. They were no less than Socrates, killed by vested interests for showing his people the right way or Galileo, condemned to life imprisonment for his so-called heretical beliefs or Bruno, burnt alive at the stake for telling the truth. Our intellectuals, too, were butchered by the neo-colonial forces for showing us the road to liberation and inspiring us to fight for our freedom of thought and expression. They were fully successful in instilling their own thoughts and ideas in the people who had been blinded to the real needs of their country for ages.

But what kind of legacies do our present-day intellectuals carry from our history? It is hard to believe that they are left with any legacy from the martyred intellectuals who had laid down their lives for their country. On the contrary, most of today’s intellectuals have chosen a different path. They may fall roughly into three groups. The first group consists of the self-centred intellectuals who are only concerned with their own wants and needs, and never think about other people’s good. They are mostly varsity academics and work part-time with different private institutions, NGOs, multinational companies, and projects to earn a fortune. Most of their time is spent juggling between their workplaces, and no spare time is left to think about their country and its people.

The second-group of intellectuals are highly politicised. They are the intellectual vanguards of their party, and see everything around them with a partisan eye. They are social climbers, and their sole aim is personal aggrandizement. They wait their turn in order to grab the chance of holding high office. They suck up to people in authority for achieving goals. They toe the party line so strongly that they often give highly lopsided views on even undisputed facts and common public interests ignoring objective truth. The events of our art, culture, literature and history are also split by these one-eyed intellectuals. Years of polarisation have sapped them of their integrity and moral standards.

The third group comprises of the seeming nonpartisan intellectuals who love being called ‘civil society’. Most of them are the hired hands of international hierarchies working in their native country. It is a part of their job to pick holes in political affairs. They give voice to different national crises in such a grave manner as if the country has completely gone to the dogs, and there is no escape from it. The implication written all over their faces is that the nation would have its best governance only at the hands of these civil society guys. Although they put on an air of neutrality, they must be working willy-nilly to realise Colonial mandate. One may reasonably smell a hidden agenda behind their activities.

These three groups of intellectuals have nothing common in them other then ignoring true love for the country. Be that as it may, one must ask what the responsibilities of today’s intellectuals are. Noam Chomsky has said, “It is the responsibility of intellectuals to speak the truth and to expose lies.” Antonio Gramsci, a theorist on intellectual exercise argued: “Intellectuals view themselves as autonomous from the ruling class.” Jean Paul Sartre considered intellectuals as the moral conscience of their age, and the observer of the political and social situation of the moment, and urged them to speak out freely in accordance with their consciences.

Do our intellectuals speak the truth and expose lies? Are they able to do things and make decisions of their own accord? Do they have a voice of conscience? The bulk of our present intellectuals in Bangladesh are far away from these basic tenets of true intellectuals.

There are, however, some good intellectuals who, amid the razzmatazz of the fake intellectuals’ activities, are working steadily to voice the thoughts and needs of mass people. It is they who cherish the true ideals of the martyred intellectuals from the bottom of their heart. If good triumphs over evil in the end, all the three groups of pseudo-intellectuals must be overshadowed by these few, for they are carrying the torch for the martyred intellectuals.

The writer teaches English Literature at Kushtia Islamic University.

Dead body of Shilalipi editor Selina Parvin with telltale marks of brutal torture. Photo: Archive

Reflections on a picture

Shahid Alam
————————————-

Ever since I first saw that photograph, I have never failed to be moved by it. I am talking about Rashid Talukdar’s picture of a head lying amidst a scattered pile of bricks and mortar in what appears to be a pool of brackish water. The picture is vivid, and, while the colours involved cannot be discerned, the black-and-white composition (as is often the case) tells more than it shows and allows the imagination so much room to soar. Talukdar’s photo appears surreal, almost like a Salvador Dali painting transformed and adjusted for a still camera shoot, and it brilliantly portrays the day that is being observed this day: Shaheed Buddhijibi Dibosh, or, Martyred Intellectuals Day. It is at once poignant, somber, ghastly, and a mute story of what the intellectuals sacrificed, their today, so that the nation could see the light of freedom and independence tomorrow.

At first glance, you could not be faulted if you did not take any notice of the head and thought it to be a somewhat bizarre part of the view. On a closer look, however, the image of the head will more likely than not be forever etched in your head, and will give a fair indication of the way many of the intellectuals died. The face could so easily be mistaken for a mask, pale, expressionless, detached from a body, hollowed-out eye sockets. There! The blank eye sockets and head minus body! That is how that poor man was horribly tortured, and, eventually, killed. The eyes were gouged out, almost certainly when he was alive, and his head severed from his body, probably after he was killed. All the intellectuals who were prematurely removed from the land of the living, thereby abruptly depriving all those that they had been enlightening, were thus murdered. No, not in exactly the same fashion; some in a hail of bullets in the heat of frenzied assault by the Pakistan army, others cold-bloodedly, selectively, by right-wing Bengali religious fundamentalist-extremists who tortured their victims in a gamut of horrific ways before dispatching them, also by a variety of means.

They were university teachers, journalists, writers, doctors, engineers, and artists. They were not killed in one fell swoop. The army had engaged in methodical killing of several in the initial stages of the liberation war, and, as it was winding down to its denouement of the birth of Bangladesh as a sovereign, independent nation-state, the army and its local henchmen, in a planned ritual, disposed of the rest. They had committed what someone has called “cerebrogenocide” on the Bengali nation. The intellectuals, because of their higher enlightenment, are regarded as guides of a nation’s ethos. Furthermore, they are seen as the custodians of a nation’s history and culture. That is why, when they become a part of history by having their lives cut short violently for being ethical guides and custodians of culture and history, that is tantamount to carving out a piece of a nation’s soul.

I knew some of them, heard of a few, while the rest, probably because they had not attained nation-wide fame, I had not heard of. That is poignant. They were not allowed to realize their full potential. Maybe not all, or any, would have succeeded in going beyond respectable obscurity, but, we will never know now, will we? We will never know the putative impact for the good they could have had on the fledgling nation-state. My father was a student in the History department of Dhaka University in the late 1930s. That consideration, plus my own keen interest in the subject, directed me to take it up as one of my two subsidiary subjects in Dhaka University. And I had two of the best teachers that the department could offer to guide me through the long winding intricacies of South Asian history and modern European history. Prof. Santosh Bhattacharjee was excitable as he delivered his lectures in a somewhat high-pitched voice. The man was encyclopedic. Prof. Giasuddin Ahmed was equally knowledgeable, but his voice was measured, sonorous, commanding. He was unforgettable in hammering into our heads a defining event in human history, the French Revolution. Oh, those being the days, they lectured in impeccable English, but reverted to the familiar Bengali outside of class. And they were equally adept at both.

Prof. Munier Chowdhury was the father of a friend and basketball teammate at Notre Dame College as well as of his younger brother, who was my cameraman in a telefilm that I had directed and acted in and which was broadcast from 2001 to 2004 over India’s Alpha (now Zee) Bangla TV; and was tragically killed in a recent road accident. Prof. Serajul Huq Khan was the father of another friend and neighbour across a wide field in those days of livable Dhaka. Prof. G.C. Dev I had heard of before taking admission in Dhaka University, Prof. Jyotirmoy Guhathakurta shortly after. How can I forget Prof. Dev, with his Einstein-like head of hair, not quite Einstein-like moustache, in dhoti and, during winter, a somewhat faded black coat encompassing his considerable bulk, slowly trudging along, the very picture of the proverbial absent-minded philosophy professor?

None of the martyred intellectuals willingly sacrificed themselves. They were forced to embrace martyrdom for what they symbolized. They were sacrificed at the altar of a shared vision. That vision was that of a nation at one, striving for a sovereign independent homeland. Theirs was a vision of a nation equated with a nation-state. The nation! That, to reiterate, was the ideal of the martyred intellectuals! But we find ourselves increasingly a nation divided, against itself, along entrenched fault lines that, sadly, seem to be widening with each passing year, with no end in sight for the foreseeable future. As if to reinforce this conclusion, we find many of today’s intellectuals as fiercely divided as any other group, along the same fault lines, and, in certain cases, even having contributed towards some of it. Know what? The intellectuals martyred forty years back could be proverbially turning in their graves, real or symbolic. And they would have every reason to do so.

The writer is head, Media and Communication department, Independent University, Bangladesh.


We still hope for justice

Roquaiy Hasina Neely
————————————

Rashidul Hasan with her daughter

Despite being a lecturer in the English department of Dhaka University, my father martyred intellectual S M A Rashidul Hasan had a deep love for and attachment towards Bengali culture and literature. From his behavior to attire, everything reflected Bengali tradition. Tagore literature and Tagore songs were his favourite. This is why I became a Tagore singer. It was his dream that his daughter would sing Tagore songs. In those times prior to the liberation, singing Tagore songs on TV and Radio was banned by the government. Even so, my father enrolled me at a music school so that I could learn to sing his favourite songs. He believed that nourishing Tagore literature and practicing Tagore songs are vital to keep Bengali culture alive. I have always seen that whatever he thought was good, he tried his best to abide by it and implement it in his life and surroundings. Hence, my musical education continued despite government obstructions. His vision got me where I am today.

The ability to retain and practice our own cultural values is a great achievement of our independence. Today we are free to exercise our cultural rights as a nation. We are free to talk, write and sing in Bangla. A Tagore song is our national anthem. In the past 40 years our country has developed much in terms of culture and education. Bengali singers are famous all over the world. Bengali students and teachers could be found in the top universities of the world. We are moving towards becoming a technologically developed country as well. But with advancement of science and technology we sadly notice that our young generation, being heavily influenced by foreign culture, is slowly diverting from our own traditions. These subtle shifts in the young ones pose a great threat to our unique entity. Bengali culture itself is very rich and exquisite. We do not need adaptations of different cultures, instead it is our responsibility to make this culture known to our young generation the same way our parents upheld its beauty and depth to us. It is our duty to give a clear and precise idea about our nation’s history to the young ones. Through proper guidance and enlightenment we Bengalis as a nation can hold our heads high before the whole world well without being jingoistic.

Our nation was freed from our Pakistani oppressors with the hope of building a golden nation. Maybe we have achieved quite a lot in the 40 years but still I feel that we have not become the nation that my father had dreamed of. The people who had laid down their lives for our country did not envision a country as it is now and I believe the politicians are largely to blame for this. After the liberation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman called in the widows of the martyred intellectuals to ask what they wanted from an independent Bangladesh. Everyone answered that they wanted justice brought to the murderers of their husbands. Sadly enough, even after 40 years their demand has not been met with. Murder of intellectuals was a planned event. National traitors known as Rajakar, Al-badar, and Al-shams joined forces with the Pakistani army and executed the massacre. With defeat banging on their door their last desperate act of crippling our nation was to kill our intellectuals who provided us with hopes and dreams of a new Bangladesh.

What I still do not understand is how such a heinous act goes unpunished for four decades? Why is not justice being delivered? How long will the political leaders put it off for their own benefits? Is it not embarrassing enough to see that the ones who didn’t want a `Bangladesh’ in the first place somehow ended up being a minister of Bangladesh, riding in cars bearing the country’s flag? The culprits are not unknown. So what is it that is keeping the authority from punishing them?

I have lost my father, the person I held dearest to my heart, in the hands of the traitors of Bangladesh. My mother has struggled and sacrificed enough to raise her three children alone, without much help from the government. It is about time we saw justice being served. After 40 years I still dream of a nation my father had dreamt of. But in order to establish that country, the murderers of my father and other intellectuals must be brought to justice because I believe that even after 1000 years people of Bangladesh will not forgive the traitors.

The writer is a Tagore song artist and daughter of S M A Rashidul Hasan.


Massacre of the Bengali intellectuals in 1971

Rafiqul Islam
————————————

On the 25th March night of 1971 the Pakistan Armed Forces unleashed their ‘Operation genocide’ at the Dhaka University campus, EPR headquarters in Pilkhana and Rajarbag police headquarters simultaneously with full force. At that time I was a resident of the University quarters, Nilkhet, adjacent to Iqbal Hall (Zahurul Haq Hall) and witnessed the brutality of the Pakistan Army. At the outset Pak Army used heavy machinegun, mortar, rocket launcher and artillery fire on the residential quarters and halls of the Dhaka University particularly in Iqbal and Jagannat Hall areas.

In the early hours of 26th March, heavily armed Pakistani troops entered the residential halls and quarters situated in and around Iqbal and Jagannat halls. Pakistani soldiers massacred the teachers, students and employees in their own quarters throughout the day and night of 26th March and set the rooms of the residential hall in blaze. On 26th March, they dragged the corpses to the ground of Iqbal and Jagannat Hall and buried them in mass graves. They forced the students and employees to carry the bodies of the killed students and teachers, dig mass-graves and throw them into the graves. Later on they shoot and kicked them into the mass-grave. The barbarity perpetuated by the Pakistan Army on 25th and 26th March 1971 in Dhaka University campus has no parallel in the history of our time.

Between 25th and 27th March, 1971 the Pakistani solders brutally killed the following Dhaka University teachers inside their own house; Dr. G C Dev of philosophy, Prof Muniruzzaman of Statistics, Dr. Jotirmoy Guha Thakurta of English, Dr. Fazlur Rahman Khan of Soil Science, Prof. Sharafat Ali of Mathematics, Prof. Abdul Muktadir of Geology, Prof. A.R. Khadim of Physics, Prof. Anudaipayan Battacharja of Applied physics and Mr. Mohammad Sadeque, a teacher of the University Laboratory School. Among them Prof. Muniruzzaman, Dr. Fazlur Rahman and Dr. G C Dev were killed along with their family members. A large number of students and employees of the Iqbal, Jagannat and Rokeya Hall, Dhaka University teacher’s club were also killed. Among them were Madhuda (the owner of Madhu’s canteen) and his family. The inhabitants of the nearby slumps along the old railway track were gunned down mercilessly by Pakistan troops. The dead bodies from the slumps were heaped in front of the Nilkhet petrol pump and burnt to ashes. About a thousand unarmed E.P.R recruits in Pilkhana were slaughtered mercilessly. Only in Rajarbag police line the invading Pak Army faced stiff resistance and tanks were brought in. A large number of resisting police personnel were butchered.

The entire Ramna and adjacent areas turned into burning inferno on 25th and 26th March, 1971. Besides Dhaka University campus, EPR and police headquarters, the invading Pakistan Army systematically destroyed all the slumps, bazars, fire brigade and police stations, newspaper offices, political parties’ headquarters, residences of political leaders and the Shahid Minar in Dhaka city. Pakistan Army also launched a genocide campaign on the inhabitants of old Dhaka particularly in Shakhari Bazar, Tanti Bazar, Luxmi Bazar, Narinda, Moishandi etc. Kamalapur railway station and Sadarghat launch terminal also came under Pakistani campaign. Thus Dhaka witnessed the greatest exodus of the city dwellers in its history from 27th of March. By the end of March 1971, Dhaka became an empty and ghost city.

During the nine months of siege Dhaka city became a battlefield between occupying Pakistan Army and the valiant guerilla forces of the Bangladesh Muktibahini. The guerrillas launched assaults on Hotel Intercontinental and D.I.T Bhaban, and also at Farmgate area and different electric sub-stations. On the other hand, the Bihari areas, particularly Mirpur and Mohammadpur, became a slaughter house for the Bengalis. Thousands of Bengali young men and professionals were rounded up and thrown into torture camps in Dhaka cantonment. Hundreds of Bengali girls were abducted and kept in Pakistani camps for sexual abuse with the help of local collaborators.

During 1971, Pakistan Marshal Law authority raised several collaborating forces namely Peace Committee, Rajakar Bahini, Al-Shams and Al-Badar Bahini. Among the collaborators most ferocious was the secret Al-Badar Bahni whose duty was to trace the Bengali intellectuals, teachers, writers, scientists, doctors, journalists etc. and pick them up from their hiding places; then torture and kill them in a hideous process.

Thousands of Bengali intellectuals lost their lives in 1971. Among the Pak Army and Al Badar victims, the most prominent were poet Meherunnessa, jouranlist Shahid Saber, singer Altaf Mahmud, journalist Sirajuddin Hossain, journalist and writer Shahiddulla Kaisar; journalists Syed Nazmul Haq, Nizamuddin Ahmed, ANM Golam Mustafa and Selina Parveen; scientists Abul Kalam Azad, Siddique Ahmad and Amin Uddin; physicians Dr. Fazle Rubbi and Dr. Alim Choudhury. Among the Dhaka University teachers the Al-Badar killers abducted Prof Munier Choudhury, Prof Mofazzal Haider Choudury, Prof. Anwar Pasha, Prof. Rashidul Hasan, Prof. Santosh Bhattacharja, Prof. Abul Khair and Prof. Giashuddin Ahmed; and Dr. Mortuja (physician), Dr. Faizul Mahi and Dr. Sirajul Haq Khan.

These intellectuals were taken to Al Badar torture-camp situated in Mohammadpur Physical Training College. They first inflicted physical pains and then took them to Rayer Bazar slaughter house and Mirpur graveyard. In these two places the great minds of Bengal were brutally killed on 14th December just before the defeated Pakistan Army surrendered to the joint command of Bangladesh and Indian army. Thus the Pakistan Army and their local collaborators concluded their ethnic cleansing of the Bengali people in 1971. Though the Pakistan armed forces conceded defeat and surrendered, the Bangladeshi collaborators never surrendered. They are still active even after 40 years of independence.

The writer is Professor Emeritus, University of Liberal Arts.


My brother Munier Chowdhury

Shamsher Chowdhury
————————————

Photo: Archive

During those dreadful days of Pakistani occupation, BBC became the most popular form of media for the entire nation. People relied more on the BBC than any other news service. About 48 hours before the surrender of the Pak army, my brother Munier Chowdhury and I were listening to the BBC, sitting on the outer balcony. When the commentator over the radio announced, “ The guns of India are rattling 28 kilometers from the capital Dhaka at a place called Daudkandi,” my brother embraced me and said, in a voice choked by emotion, “ Look, brother, our independence is irresistible.” Little did I know then that this was the last day of his life and that he would be kidnapped never to be seen again. 40 years have passed since the day he was taken away by some members of the infamous Al-Shams and Al-Badar, two of the collaborating wings brought up by the then occupation forces of Pakistan.

They came around 11:30 a.m. on 14 December and began to fiercely hammer on the iron-grilled gate of the main entrance to the compound of our residence. I came out of the house and, on their repeated insistence, opened the gate. Three of them came in with their faces covered, wearing black shelwar and kameez, a popular dress worn by both men and women in West Pakistan. They asked for my brother who along with me was getting ready for a quick lunch since there was a lull in the bombing by Indian MIG 29. We already had our bath and were getting ready to join our mother at the dining table, where she was anxiously waiting for us. She hardly knew what was going on outside the house only 30 yards away from the room in which she was waiting with my sister-in law Lily Chowdhury, who was on the second floor of the house with her twelve year old son Mishuk Munier. Mishuk, very recently, met an untimely death in a gruesome road accident.

In just about ten minutes, these hyenas took away my brother Munier Chowdhry right in front of my eyes. And there I stood, dumbfounded, for a very long time. I went to mother first, and as soon as I told her what had happened she broke down in tears. Mother passed away about 12 years ago, and every time I used to go near her, until the day she died, she used to say to me, “Son, why did Allah take his life instead of mine? My son was a gem of a boy; ever so clean of heart, kind and generous. Who would kill a man like him, who had never raised a finger against anyone?” She used to ask me the same question, over and over again, to which I had no answer.

My sister- in- law always felt that had I been a little more alert, I could have found a way out for my brother to escape. I do not know the answer to that too, except for the fact that I have since that fateful day been living with that burden in my chest for 40 long years. Forty years have passed since that day; we neither found his dead body nor did we know how brutally he had met his death. For two of the longest days of my life, after the surrender of the Pak occupation forces, with the help of a Colonel of the Indian Army and two soldiers, I went through every nook and corner of the city and its outskirts trying to find my brother’s body. Finally, after two days of failed search, on the evening of 18 December, my mother called me to her bedside and said, “Son, abandon the search, even if you find the body it must be in a mutilated condition in a ditch beyond recognition. I have lost one son and do not wish to lose another one. They say that some of those killers are still prowling around.” As for me, I no more have a howling pain but the deep scar lingers on.

To be honest, the death of Munier Chowdhury has influenced my life in more ways than one. He was a giant of a man, in every sense of the term, and yet so humble, and extremely tolerant of others’ views. He treated his students as members of his family. He was a visionary and a thinking man way ahead of his times.

Like our father, he believed in the eternal power of education and education alone. Contrary to popular belief, he was a man who had an unflinching faith in his Creator.

During the last days of his life from October 1971 till the day he was kidnapped, he routinely sat beside my mother close to her prayer mat with a book or a pen and a copy scribbling and reading at the same time. One of those days, a group of young men came to the house to escort him across the border into India. They were sent by his eldest son, who was then in India, getting ready to join the Liberation Forces. Mother, with tears in her eyes, tried to persuade him to go, but he stood his ground and refused to leave by saying, “Look, mother, how can you say this being a staunch Muslim and a God fearing individual. You know too well that each individual is destined to die wherever God wills.”

In reference to this, I would also like to recall yet another shining aspect of Munier Chodhury’s character. My father, even in his last days, used to go for his Juma prayers to the nearby Paribagh Masjid. My brother, each Friday, took him to the mosque, waited until the prayer was over and then brought him back to the house. He used to come to the house from his residence at Nilkhet to pick up my father. On arrival at the mosque, he used to park his car under the shade of a flame tree (Krishnachura) close to the mosque, take out a book from the glove compartment of the car and begin to read until the prayer was over. Imagine a man doing that religiously every Friday who never said prayers in all his life. Being asked, he told me that he believed more in living religion rather than practicing religion as a mere ritual. His religion consisted of serving humanity in all conceivable ways.

He taught each one of us all about plain living and high thinking. Till the last days of his life, Munier Chowdhury was seen in the corridors of the University dressed in a set of clothing made of khaddar. He loved his country most dearly and was always thinking how to do something new and innovative. He was the inventor of a typewriter key board in Bangla, in collaboration with a German typewriter manufacturing outfit known as the Optima, which still bears his name. He was the pioneer of modern day theatre through his groundbreaking plays.

Munier Chowdhury was a living legend. He was gentle, polite and a speaker of exceptional calibre. During his teaching career, students from other classes studying different subjects used to flock together to listen to his lectures. He treated his students like his family. I have never seen him being angry at anyone, no matter what.

This is the image and memory of my brother I continue to cherish and will do so for as long as I live.

The writer is a columnist and younger brother of Munier Chowdhury.

…………………………………………………………………………………………………………..

পাকি পত্রিকা ‘দ্য ডন’-এর কান্ড ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল ৩০ বছর আগে!!!’

“IT is deeply unfortunate that the trials of alleged war criminals in Bangladesh, 30 years after the war of liberation, have been mired in controversy. There are two levels at which this has occurred.”

আঁতকে ওঠার মতো ব্যাপার। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ নাকি হয়েছিল আজ থেকে ৩০ বছর আগে! হ্যাঁ, একথা লিখেছে পাকিস্তানের সবচেয়ে প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য ডন’। ডন-এর  মতো  দেশটির সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিকটি আজ বুধবার ১৪ ডিসেম্বর এই কা-টি ঘটিয়েছে ওপিনিয়ন কলামে ‘দ্য সেকেন্ড পার্টিশন’ নামের একটি লেখা প্রকাশ করে।

উপরের উদ্ধৃতিটি সেই অভিমতের সূচনা অনুচ্ছেদ। বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যার কলংকময় কালো দিনটিতে ‘৩০ বছর আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ’ হওয়ার তথ্য ছাপিয়ে ‘ডন’ যা করেছে তাকে হাস্যকর না বলে বলা উচিত বালখিল্যতা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের  ৪০ বছরপূর্তি পাকিস্তানিদের জন্য মোটেই সুখকর নয় ‘ডন’ পত্রিকার এই কা-ই তা প্রমাণ করে। অথচ একাত্তর (১৯৭১) সালকে ভুলে গিয়ে কলমের এক খোঁচায় তাকে একাশি(১৯৮১) বানিয়ে ‘ডন‘ পত্রিকা সেই বাংলা প্রবাদটিকেই মনে করিয়ে দিল: ‘গরু হারালে গো মা এমনই হয়’। পূর্ব পাকিস্তান নামের ডিমপাড়া রাজহংসটিকে হারিয়ে পাকিস্তানি এলিটদের মনে যে চোট লেগেছিল তা এখনও পূর্ণিমা অমাবশ্যায় তাদের কাতর করছে বেশ।

এখানেই শেষ নয়। Mahir Ali` নামের এই কলাম লেখক “The second partition” নামের অভিমতটি কেন লিখেছেন সে উদ্দেশ্যট্ বুঝতে রকেট বিজ্ঞানী হওয়ার দরকার নেই।

তিনি বলতে চাচ্ছেন,  বাংলাদেশে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের  বিচারের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা বিতর্কবিদ্ধ। এ প্রসঙ্গে তিনি রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্টতার অভিযোগও তুলেছেন:On the one hand, there is the charge that the court proceedings are motivated by partisan political considerations, with those in the dock being members or allies of the opposition Bangladesh Nationalist Party and its allies.

লেখাটির অন্যত্র তিনি বলেছেন, ৭১ সালে বাঙালিরা বিহারিদের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছিল যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল তা আমলে নেয়নি। তার ভাষায়:On the other, it is claimed that the Bengali nationalists who participated in reprisals against non-Bengalis — mainly Biharis — in 1971 have not been called to account..

ইতিহাসের দোহাই দিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে তিনি আরও বলতে চেয়েছেন, ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে দেখা গেছে বিদেশি দখলদার বাহিনীর যারা দালালি করে পরিবর্তিত রাজনৈতিক অবস্থায় In the second context, it could of course be pointed out that, historically, in countries under foreign military occupation, perceived collaborators have often fared poorly at the hands of single-minded resistance movements.

ইতিহাসের খরবালুতে মুখ লুকিয়ে তিনি ইতিহাসের যে ছবি তিনি দেখতে ও দেখাতে চাইছেন সে-ও এক বালখিল্যতা।

আবার আরেক জায়গায় তিনি লিখেছেন:উর্দুভাষীদেও নাকি ঢালাওভাবে দালাল হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে বাংলাদেশে। কিন্তু উর্দুভাষী বিহারিরা বাংলাদেশে কী করেছিল সে ব্যাপারে তিনি ওকপ্রকার হিন্দুকুশ পর্বতের চেয়েও নীরব। যুদ্ধাপরাধী রাজাকার আল বদও আল শামস আর উর্দুভাষী বিহারিদেও জন্য তার দরদ উথলে উঠেছে। কিন্তু তার দেশ পাকিস্তান কিন্তু সে বিহারিদেও ফিরিয়ে নেবার বেলায় একদমই চুপ। আশির দশকে রাবেতা নামের সংগঠনটি এক্ষেত্রে অনেক দৌড়ঝাঁপ করেও ইসলামাবাদেও মন গলাতে পারেনি। সে অন্য প্রশ্ন।

তিনি অপাত্রে তার আলগা দরদ দেখাতে গিয়ে আটকে পড়েছেন স্ববিরোধিতার জালে।

পাকিস্তানি জাতির পরাজয়ের তিক্ত স্মৃতি ‘দ্য ডন’ এর মতো পত্রিকাকেও কত হাস্যকর কও তুলতে পারে তা এই ভাড়াটে কলামিস্ট নিয়োগের মধ্যেই স্পষ্ট। এখানে এত বড় ভুলটিও সম্পাদনা পর্যদেও দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। কিন্তু ইতিহাসতো ছেলের হাতের মোয়া নয় যে যেমন ইচ্ছে তা জনে জনে চিনির প্রলেপ দিয়ে গেলানো যাবে।

…………………………………………………………………………………………………………..

১৩ অনারারি কনসাল জেনারেল ঢাকায়

ঢাকা: বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বের ১১টি দেশে দায়িত্বপালনকারী ১৩ জন অনারারি কনসাল জেনারেলকে তিনদিনের সফরে ঢাকায় এনেছে সরকার।
ফিনল্যান্ড, নরওয়ে, আইসল্যান্ড, সাইপ্রাস, নিউজিল্যান্ড, তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়া, বেলজিয়াম, ইতালি, ভুটান ও মরক্কো থেকে তারা এসেছেন।
এদের মধ্যে একজন নারী অনারারি কনসাল জেনারেল এসেছেন তার স্বামীকে নিয়ে। তিনি ইজমির তার্কির মিসেস জেরিন চাকমোগলু।
ফ্যামিলিয়ারাইজেশন অব বাংলাদেশ প্রকল্পের আওতায় এর আগেও দুই দফায় ১৩ জন কনসাল জেনারেলকে ঢাকায় আনা হয়।
বুধবার বিকেলে ১৩ জন কনসাল জেনারেল পররাষ্ট্রসচিব মোহাম্মদ মিজারুল কায়েসের সঙ্গে দেখা করেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বাংলানিউজকে এ তথ্য জানান।

বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ এবং দেশের বিনিয়োগ ও বাণিজ্য পরিবেশ কাজে লাগিয়ে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্যই বাংলাদেশের এই সাম্মানিক রাষ্ট্রদূতদের সফরে নিয়ে আসার পরিকল্পনা নেয় সরকার।

দেশে আসা অনারারি কনসাল জেনারেলরা হলেন, ফিনল্যান্ডের হেলসিংকি শহরে নিযুক্ত দুইজন হ্যারি ব্ল্যাসার (সস্ত্রীক) ও তৌমাস বিলজো (সস্ত্রীক), নরওয়ের ওসলোতে পিটার দাইয়ি (সস্ত্রীক), আইসল্যান্ডের রিকইয়াভিকের স্টিফেন এস গুডজনসন (সস্ত্রীক), সাইপ্রাসের পেগি কালায়েডজান (বান্ধবীসহ), নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডের আতাউর রহমান, তুরস্কের ইস্তাম্বুলের কাজিম ওজের (ব্যবসায়িক সহযোগীসহ), ইজমির তার্কিতে মিসেস জেরিন চাকমোগলু (স্বামীসহ), কোরিয়ার ইনচিওনের ডেভিড কিম, বেলজিয়ামের অ্যানটরেপের প্যাট্রিক স্লভস, ইতালির জেনোয়াতে ক্রিস্টিয়ানো পেলো, ভুটানের ফুনসিলিংয়ে দাশো রিনচন দর্জি (পুত্রসহ) এবং মরক্কোর ক্যাসাব্ল্যাঙ্কায় আমিনি(সস্ত্রীক)।

অনারারি কনসাল জেনারেলরা ওই দেশগুলোতে বাংলাদেশের সাম্মানিক রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করছেন। তারা মূলত দেশগুলোতে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছেন।
বাংলাদেশ সরকার এদের নিয়োগ দিলেও তাদের জন্য বেতন-ভাতা বরাদ্দ করা হয় না। অবশ্য অনারারি কনসাল জেনারেলরা অনেকটা নিজ উদ্যোগেই এদেশের কনসাল জেনারেল হয়েছেন। যেমন, এদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন সেক্টরের প্রথিতযথা ব্যক্তিত্বরা অনেকেই ঢাকায় বিভিন্ন দেশের অনারারি কনসাল জেনারেলের দায়িত্ব পালন করছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল বুধবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন পদ্মায় কনসাল জেনারেলদের এদেশে সফরে আনার কারণ ব্যাখ্যা করেন।
তাদের নিজ নিজ দেশে বাংলাদেশের সুনাম রক্ষা, ভাবমূর্তি বাড়ানো এবং বিনিয়োগের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর পক্ষে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
পররাষ্ট্রসচিবও অনারারি কনসাল জেনারেলদের এসব কথা বলার পাশাপাশি, বাংলাদেশের সঙ্গে ওই দেশগুলোর সামাজিক যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন।
পররাষ্ট্রসচিব বর্তমান সরকারের সাম্প্রতিক অর্জন ও রূপকল্প ২০২১ সম্পর্কে কনসাল জেনারেলদের ধারণা দেন। সফরকারীদের এ বছর বিজয় দিবস উপলক্ষে এদেশে আনা হয়েছে।
ঢাকার বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন ছাড়াও তাদের ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামে আনন্দ শিপ ইয়ার্ড পরিদর্শনে নিয়ে যাওয়ার সূচি রয়েছে। এছাড়া ঢাকায় মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের সঙ্গে তাদের একটি মতবিনিময় কর্মসূচি রয়েছে।
‘ফ্যামিলিয়ারাইজেশন অব বাংলাদেশ’ প্রকল্পের আওতায় এর আগে গত ২১ ফেব্র“য়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আটজন এবং বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে পহেলা বৈশাখের আগের দিন ৫ জনকে দেশে আনা হয়।
এর আগে ঢাকা এসেছিলেন বুলগেরিয়া, নরওয়ে, ইয়েমেন, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, আজারবাইজান, লেবানন, সিরিয়া, উগান্ডা, কেনিয়া, পোল্যান্ড ও স্পেনের বিভিন্ন শহরে নিযুক্ত কনসাল জেনারেলরা।

…………………………………………………………………………………………………………..

৮ ডিসেম্বর মৌলভীবাজারমুক্ত দিবস

মৌলভীবাজার: আজ ৮ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালের এ দিনে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনীর কবল থেকে মুক্ত মৌলভীবাজার।
ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ হামলার মুখে চরমভাবে মার খেয়ে পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটতে থাকলে প্রতিদিনই বিজয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল বাংলার আকাশে।
ডিসেম্বরের ২ তারিখ রাতে মৌলভীবাজারের পূর্ব সীমান্তে শমসেরনগর বিমানবন্দর ও চাতলাপুর বিওপিতে হানাদারদের ওপর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর মিলিত আক্রমণ শুরু হয়। তীব্র আক্রমনের মুখে শত্রুসেনারা টিকতে না পেরে মৌলভীবাজার শহরে তাদের ব্রিগেড হেড কোয়ার্টারে ফিরে যায়।
মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী মৌলভীবাজার দখলের উদ্দেশে চার ডিসেম্বর বিকেল ৪টার দিকে শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে কালেঙ্গা পাহাড়ে অবস্থান নেয়। এখানে বড়টিলা এলাকায় পাকিদের সঙ্গে  তাদের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে মিত্রবাহিনীর ১২৭জন সেনা শহীদ হন।
পাঁচ ডিসেম্বর থেকে হানাদার বাহিনীর প্রতিরক্ষা ব্যূহ ভেঙে পড়তে শুরু করে। ফলে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর যৌথ হামলা প্রতিরোধ করতে তারা ব্যর্থ হয়। এঅঞ্চলের পরাজিত পাকি সৈন্যরা তখন সিলেট অভিমুখে পালাতে শুরু করে। এসময় তাদের এলোপাতাড়ি গুলিতে বহু সাধারণ মানুষ নিহত ও জখম হয়।
সিলেটে যাওয়ার পথে তারা শেরপুরে অবস্থান নেয়। পরে অবস্থান নিরাপদ নয় মনে করে সিলেট চলে যায়। ঘাতক বাহিনীর পিছু হটার ফলে আট ডিসেম্বর ঊনিশশ’ একাত্তর পুরো মৌলভীবাজার হানাদারমুক্ত হয় এবং আকাশে ওড়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা।
আট ডিসেম্বরের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মৌলভীবাজার-রাজনগরের সাংসদ বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মহসীন আলী জানান, ঊনত্রিশ নভেম্বর ঊনিশশ একাত্তর সাল। ভারতীয় বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা সম্মিলিতভাবে পূর্বের পরিকল্পনা অনুযায়ী চাতলাপুর বিওপি, আলীনগর বিওপি ও টিলাবাড়ি কালিপুর থেকে ২ ব্যাটারি আর্টিলারী গান দিয়ে চাতলাপুর আলীনগর সরাসরি আক্রমণ করি। অন্যদিকে কমলপুর থেকে ধলই কুরমা যৌথভাবে আক্রমণ করি। আট ডিসেম্বর মৌলভীবাজার মুক্ত হয়ে যায়।

…………………………………………………………………………………………………………..

ফিরে এলো বিজয়ের মাস

ঢাকা: বছর ঘুরে ফের এলো বিজয়ের মাস। বৃহস্পতিবারই পহেলা ডিসেম্বর। আর আসছে ১৬ ডিসেম্বর পূরণ হচ্ছে গৌরবময় বিজয়ের চার দশক।
অস্ত্র হাতে গৃহত্যাগী মুক্তিযোদ্ধাদের ঘরে ফেরার এ মাসে এবার অনেকটাই যেন অন্যরকম আবহ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (ডিসিসি) দুই ভাগে বিভক্ত করে সংসদের বিল পাশের ঘটনায় সবখানেই যেন দানা বাঁধছে উত্তাপ।
বিজয় মাসের প্রথম প্রহরেই বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মোমবাতি জ্বেলে ঢাকা ভাগের প্রতিবাদ জানাবেন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী সৈয়দ আবুল মকসুদ। একই সময়ে শিল্পকলা একাডেমিতে মোমবাতি প্রজ্বলন হবে বিজয়ের চার দশক পূর্তিকে স্বাগত জানিয়ে।
এদিকে বিজয়ের মাস শুরুর দিনই (বৃহস্পতিবার) টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে হরতাল হচ্ছে সিলেটে। বিজয়ের এ মাসেই বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে ভারতীয় চলচ্চিত্র প্রদর্শনের আয়োজনও প্রায় পাকা। আবার এ মাসেই বাংলাদেশ সফরে আসা পাকিস্তান ক্রিকেট দলের সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রাম মিলিয়ে তিন ওয়ানডে ও দুই  টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ।
ওদিকে বিজয়ের মাস শুরুর ঠিক আগের দিন বুধবার ‘পার্বত্য চুক্তি’ বাস্তবায়ন না করায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে বিশ্বাসঘাতক বলেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা। আগামী ২ ডিসেম্বর ওই চুক্তির ১৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে ভালোই উত্তাপ ছড়াচ্ছেন তিনি।
আবার বিজয় মাসের শুরুতেই দেশের ‘বিকাশমান গণতন্ত্রের’ জন্য কিছুটা ভালো খবরও আছে। শক্তিশালী প্রতিপক্ষ শামীম ওসমানকে বিপুল ভোটে হারিয়ে নারী হিসেবে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) তথা বাংলাদেশের কোন সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র হওয়া ডা. সেলিনা হায়াত আইভী শপথ নিচ্ছেন পহেলা ডিসেম্বর।
এবার বিজয়ের মাসে বরাবরের মতোই সরকারের পাশাপাশি নানা কর্মসূচি নিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বেসরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-ক্লাব-সমিতি। নতুন আঙ্গিকে ছাপা হওয়া নতুন পাঠ্যপুস্তক এই ডিসেম্বরেই উঠে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে।
অপরদিকে এবার যেন মিইয়েই গেছে স্বাধীনতা বিরোধীদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে টানাহেঁচড়ার অপচেষ্টা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তান সমর্থক জামায়াত মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা নিয়ে সোচ্চার থাকলেও এবছর তাদের এরকম কোন কর্মসূচির খবর এখনো পাওয়া যায়নি।
আত্মত্যাগের মহাপুরাণ আর স্বাধীনতা আদায়ের গৌরবগাথা বুকে ধরে অনেকটাই আজ এগিয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘে উঠেছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শান্তির মডেল। দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) থেকে শুরু করে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বেশ কিছু সংস্থায় বাংলাদেশের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।
মুক্তির মন্দির সোপানতলে বলি হওয়া অসংখ্য প্রাণের স্মরণে মুক্তি ও স্বাধীনতার মর্মবাণী উপলব্ধির মাস এই ডিসেম্বর। শত্রুর রাহুগ্রাস থেকে মাতৃভূমি মুক্ত হওয়ার এ মাসে মুক্তপ্রাণের প্রতিধ্বণি নিয়ে জেগে উঠুক বিশ্ববাঙালি। স্বাধীনতার চেতনা ছড়িয়ে পড়ুক দিকে দিকে। জনজীবনে জ্বলুক মঙ্গল আলো। সফল হোক বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়।

…………………………………………………………………………………………………………..

…………………………………………………………………………………….

বিজয়ের ৪০ বছর: বিদেশি সহযোদ্ধা যুদ্ধসাথি সায়মন ড্রিং

মশিউল আলম | তারিখ: ০১-১২-২০১১

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরু করার আগে ঢাকায় অবস্থানকারী সব বিদেশি সাংবাদিককে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে (ভূতপূর্ব শেরাটন, এখন রূপসী বাংলা) আটকে ফেলে। পরদিন তাঁদের বিমানবন্দরে নিয়ে তুলে দেওয়া হয় উড়োজাহাজে। ঢাকাকে বিদেশি সাংবাদিকশূন্য করার উদ্দেশ্য—পাকিস্তানি সেনাদের বাঙালি নিধনযজ্ঞের খবর যেন বাইরের পৃথিবীতে না পৌঁছায়।
কিন্তু পাকিস্তানিদের ওই সাধে বাদ সাধেন ২৫ বছরের এক বিলেতি তরুণ। নাম সায়মন ড্রিং। সামরিক আইনের নির্দেশ অমান্য করে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে তিনি লুকিয়ে ছিলেন হোটেলে। ২৭ মার্চ সকালে কারফিউ উঠে গেলে হোটেলের কর্মচারীদের সহযোগিতায় ছোট্ট একটি মোটরভ্যানে করে ঘুরে ঘুরে দেখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হল, রাজারবাগ পুলিশ ব্যারাক ও পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা।
ঢাকায় দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর চালানো প্রথম দফার গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের প্রত্যক্ষ চিত্র উঠে আসে তাঁর প্রতিবেদনে: ‘আল্লাহর নামে আর অখণ্ড পাকিস্তান রক্ষার অজুহাতে ঢাকা আজ ধ্বংসপ্রাপ্ত ও সন্ত্রস্ত এক নগর। পাকিস্তানি সৈন্যদের ঠান্ডা মাথায় টানা ২৪ ঘণ্টা গোলাবর্ষণের পর এ নগরের…।’ ‘ট্যাংকস ক্র্যাশ রিভোল্ট ইন পাকিস্তান’ শিরোনামের সেই প্রতিবেদন লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় ৩০ মার্চ ছাপা হয়। এ প্রতিবেদন থেকে বিশ্ববাসী জানতে পারে, পাকিস্তানি বাহিনীর সেদিনের বর্বরতার কথা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত সঞ্চারের প্রাথমিক মুহূর্ত ছিল সেটি।
ইংল্যান্ডের নরফোক এলাকার সন্তান সায়মন ড্রিং (জন্ম ১৯৪৬) বাংলাদেশকে ভালোবেসে ফেলেছিলেন। ঢাকায় তিনি প্রথম এসেছিলেন ১৯৬৮ সালে। তারপর ১৯৭১-এর মার্চে তিনি ডেইলি টেলিগ্রাফ-এর সংবাদদাতা হিসেবে যখন ভিয়েতনামে, তখন পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক ঝড় ঘনিয়ে ওঠে। সায়মন ছুটে আসেন ঢাকায়। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনেছেন মঞ্চের ঠিক পাশে দাঁড়িয়ে। ২৫ মার্চ রাত সাড়ে নয়টার দিকে টেলিফোনে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে। জিগ্যেস করেছিলেন, ‘আপনি কি আত্মগোপনে যাচ্ছেন?’ বঙ্গবন্ধু উত্তরে বলেছিলেন, ‘না। আমাকে না পেলে ওরা তো সব জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেবে।’
অবরুদ্ধ ঢাকায় বেশি দিন থাকতে পারেননি সায়মন। খুব শিগগির ফিরে যেতে হয়েছে স্বদেশে। নভেম্বরে আসেন ভারতে; কলকাতা থেকে মুক্তিযুদ্ধের খবরাখবর সংগ্রহ করে পাঠিয়ে দিতেন লন্ডনের টেলিগ্রাফ পত্রিকায়। ১৬ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনীর সঙ্গে ট্যাংকে চড়ে ময়মনসিংহ হয়ে প্রবেশ করেন মুক্ত বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়, তিনিও যেন বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধাদের একজন।
চোখের সামনে মানবতার বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হতে দেখে নিরপেক্ষ, নির্লিপ্ত খবর সংগ্রহকারীর ভূমিকায় থাকতে পারেননি সেই সময়ের ডেইলি টেলিগ্রাফ-এর সাংবাদিক সায়মন ড্রিং। একটি পক্ষে তিনি দাঁড়িয়েছিলেন—ন্যায়ের পক্ষে। সেই পক্ষপাতের জন্য তিনি মৃত্যুর ঝুঁকিও অগ্রাহ্য করেছেন। ১৬ ডিসেম্বরের পর ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা কর্মকর্তা মেজর সিদ্দিক সালিকের সঙ্গে দেখা হলে সায়মন তাঁকে জিগ্যেস করেছিলেন, মার্চে ধরা পড়ে গেলে তাঁর (সায়মনের) কী হতো? সিদ্দিক সালিক উত্তরে বলেছিলেন, ‘আপনাকে গুলি করে মারা হতো।’
সংবাদপত্র ও টেলিভিশনের সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন ১৮ বছর বয়স থেকে। দেখেছেন ২২টি যুদ্ধ, অভ্যুত্থান ও বিপ্লব। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনবাসী সায়মন ড্রিং স্বাধীন বাংলাদেশে আবার এসেছিলেন ২০০০ সালে, এ দেশের প্রথম বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একুশে টিভি গড়ে তোলার প্রধান কারিগর হিসেবে। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর একুশে টিভি বন্ধ করে দেয়। ২০০২ সালের অক্টোবরে সরকার সায়মন ড্রিংয়ের ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করে তাঁকে অবিলম্বে বাংলাদেশ ত্যাগের আদেশ দিলে তিনি চলে যান। বাংলাদেশের কাছে এই কি তাঁর প্রাপ্য ছিল?
সায়মন ড্রিং বাংলাদেশের একজন অকৃত্রিম বন্ধু, মুক্তিযুদ্ধে তাঁর ভূমিকা ছিল আমাদের সহযোদ্ধার। বাংলাদেশ তাঁর ঋণ কখনো ভুলবে না।

বিজয়ের ৪০ বছর: বিদেশি সহযোদ্ধা:দুঃসময়ের বন্ধু এডওয়ার্ড কেনেডি

পাকিস্তানি সেনা-বাহিনীর নির্মম নৃশংসতার রক্তাক্ত বিবরণ ঢাকা থেকে ওয়াশিংটনে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে পাঠিয়ে যাচ্ছেন ঢাকায় কর্মরত কনসাল জেনারেল আর্চার ব্লাড। কিন্তু তা কোনোভাবেই নিক্সন প্রশাসনকে পাকিস্তান-বান্ধব অবস্থান থেকে সরিয়ে আনতে পারছে না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার প্রকারান্তরে প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সংহতির জন্য সহিংসতাকে সমর্থন করে যাচ্ছেন, পূর্ব পাকিস্তানে ব্যবহারের জন্য মার্কিন বন্দর থেকে জাহাজে ওঠানো হচ্ছে অস্ত্র ও রসদ—একজন এডওয়ার্ড কেনেডি দাঁড়িয়ে গেলেন নিপীড়িত বাংলাদেশের পক্ষে। তাঁকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের এবং সামগ্রিকভাবে পশ্চিমের বিবেক জেগে উঠল। মার্কিন সহায়তায় পাকিস্তানের সামরিক সরকার মানবতা ও গণতন্ত্রের মানচিত্র ধূলিসা ৎ করে দিচ্ছে, ডেমোক্র্যাট সিনেটর কেনেডি শুরু থেকে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার।
কেনেডি ১৯৬২ থেকে সিনেটর। ১৯৭১-এ তাঁর বয়স ৩৯, তখন তিনি শরণার্থীবিষয়ক সিনেট জুডিশিয়ারি উপকমিটির চেয়ারম্যান। ১৯৭১-এর আগস্টে তিনি এলেন বাংলার মানুষের দুর্দশার সাক্ষী হতে, নিজ চোখে দেখে বিশ্ববিবেক জাগাতে। তিনি কলকাতা, জলপাইগুড়ি, ত্রিপুরা ও দার্জিলিংয়ের শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করলেন এবং লিখলেন: পূর্ব বাংলার ট্র্যাজেডি কেবল পাকিস্তানের জন্য ট্র্যাজেডি নয়, এটা কেবল ভারতের জন্য ট্র্যাজেডি নয়, এটা সমগ্র বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য ট্র্যাজেডি এবং এই সংকট নিরসনের জন্য একত্রে কাজ করা বিশ্ব সম্প্রদায়েরই দায়িত্ব। শরণার্থী শিবিরে ভাগ্যাহত বিপন্ন মানুষের অবস্থা দেখে তিনি যে মন্তব্য করেছেন, তা উদ্ধৃত করে লন্ডন টাইমস লিখেছে, এটা মানবজাতির জন্য আমাদের সময়ের সম্ভবত সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি।
এডওয়ার্ড কেনেডি প্রশ্ন রেখেছেন, ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে বাঙালিদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভই যদি অপরাধ হয়ে থাকে, তাহলে গণতন্ত্রের ভবিষ্য ৎ কী? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের প্রতি সমর্থন কি তাহলে প্রহসন হয়ে যায় না? কেনেডি শরণার্থী শিবির ঘুরে স্বদেশে ফিরে একই সঙ্গে মানবতার লাঞ্ছনা এবং একটি দেশের সম্ভাব্য অভ্যুদয়ের চিত্র তুলে ধরেছেন: এই কঠিন ট্র্যাজেডি পৃথিবী এখনো বুঝে উঠতে পারেনি। আমি আপনাদের বলতে পারি, যতক্ষণ না নিজ চোখে দেখছেন, এর বিশাল ব্যাপ্তি সম্পর্কে ধারণাও করতে পারবেন না। কেবল সেখানে গেলেই সেখানকার অনুভূতি আপনি আঁচ করতে পারবেন, মানুষের ভোগান্তি বুঝতে পারবেন, সহিংসতার যে শক্তি শরণার্থীর জন্ম দিচ্ছে এবং বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা বাড়িয়ে যাচ্ছে, তা অনুধাবন করতে পারবেন।
শরণার্থী শিবির ঘুরে যখন তিনি খুলনা সীমান্তে, সেদিন কমপক্ষে সাত হাজার শরণার্থী বয়রার কাছে নদী পেরিয়ে সীমান্ত ঘেঁষে স্রোতধারার মতো নেমে এসেছে। এদের প্রায় সবাই কৃষক, চাষি-মজুর, অধিকাংশই হিন্দু। ঢাকা জেলার দক্ষিণে খুলনা ও বরিশাল থেকে এসেছে। গত শরতের সাইক্লোনে বিধ্বস্ত প্রান্তবর্তী জেলা থেকে। (ষাটজনের সাক্ষ্য থেকে উদ্ধৃত)
১ নভেম্বর ১৯৭১ মূলত পূর্ব বাংলার সংকট নিরসনের জন্য কেনেডি যে সাত দফা সুপারিশ পেশ করেন, তার একটি ছিল: ‘ইসলামাবাদ সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক শক্তিগুলোর প্রতীকী নেতৃত্ব শেখ মুজিবের। এই সংকটের যেকোনো রাজনৈতিক সমাধানে তাঁর প্রতি ন্যায়বিচার এবং তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তার গুরুত্ব সর্বাধিক।’ সাত দফার একটি: দক্ষিণ এশিয়ার সংকটের মূল কারণ যুক্তরাষ্ট্রকে খতিয়ে দেখতে হবে; অপর একটি: পূর্ব বাংলা ট্র্যাজেডি অবশ্যই জাতিসংঘের সামনে উপস্থাপন করতে হবে এবং সাধারণ পরিষদের বিশেষ কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির চলমান প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন করতে হবে।
সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২-এর ফেব্রুয়ারি মাসে কেনেডি যখন সফরে এলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন চত্বরে তাঁকে নিয়ে ‘জয় কেনেডি জয় কেনেডি’ আনন্দধ্বনি উঠেছিল। দুঃসময়ের এই বন্ধুকে দিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে উ ৎপাটিত বটমূলে নতুন করে বটবৃক্ষের চারা রোপণ করানো হয়েছিল। তখন স্কুলছাত্র হলেও পায়ের আঙুলে ভর দিয়ে মাথা উঁচিয়ে এই বৃক্ষরোপণের দৃশ্যটি দেখার সুযোগ নিবন্ধকারের হয়েছিল। এডওয়ার্ড কেনেডির সঙ্গে এসেছিলেন তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্রী কেরোলিন কেনেডি। বিস্মিত চোখে তিনিও দেখছিলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে দুঃসময়ের বন্ধুকে নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের প্রবল উচ্ছ্বাস। দেশে ফিরেই তিনি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য তাঁর ওজনদার ক্রমাগত চাপ অব্যাহত রাখলেন, শরণার্থী পুনর্বাসনে আন্তর্জাতিক সহায়তা চাইলেন, পিএল ৪৮০-এর আওতায় খাদ্য-সহায়তা কর্মসূচি দ্রুত চালুর দাবি জানালেন।
‘গণতন্ত্রের আইকন’, ‘সিনেটের সিংহ’ এডওয়ার্ড মুর কেনেডির জন্ম ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৩২, মৃত্যু ২৫ আগস্ট ২০০৯। তিনি দীর্ঘ ৪৭ বছর ম্যাসাচুসেটস থেকে নির্বাচিত সিনেটর ছিলেন। আততায়ীর হাতে প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি এবং পরবর্তী সময়ে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী রবার্ট কেনেডি নিহত হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট পদে তাঁর প্রার্থিতাই যখন ছিল সবচেয়ে অনুকূল; একটি ব্যক্তিগত দুর্ঘটনা ও পারিবারিক প্রয়োজন তাঁকে এই সম্ভাবনা থেকে সরিয়ে রাখে। তাঁর উদ্যোগ এবং তাঁর সহায়তায় ৪৭ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩০০ জনকল্যাণমুখী ও শান্তি-সহায়ক আইন পাস হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তিতে এই অকৃত্রিম বন্ধুর প্রতি অশেষ শ্রদ্ধা।

………………………………………………………………………………………………………….

একাত্তরের রবিনহুড!

খানিকটা তন্দ্রার ঘোরেই ছিলেন মারিও রয়ম্যান্স। চোখ মেলতেই সামনে থাকা টিভিতে দৃষ্টি আটকে গেলো। সংবাদ পাঠকের সামান্য বর্ণনার পর পর্দায় ভেসে উঠলো কোনো মতে গা ঢাকা এক মায়ের কোলে অপুষ্ট এক শিশুর ছবি। জায়গাটা পূর্ব পাকিস্তান। সেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদ দমনের নামে ভয়াবহ এক গণহত্যা চলছে। লাশ কুকুরে খাচ্ছে। লোকজন পালাচ্ছে। গন্তব্য একটাই, সীমান্তের ওপারে ভারতে। আর সহ্য হলো না, উঠে নব ঘোরালেন। বন্ধ করে দিলেন টিভি।

কিন্তু দৃশ্যগুলো আটকে গেলো মাথায়। ঠিক কোন জায়গাটা এমন নাড়া দিয়ে গেলো এই ফ্লেমিশ (বেলজিয়ামের ডাচভাষী) তরুণকে তা নির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারবে না হয়তো। ওই শিশু কোলে বিপন্ন মা কি! সম্ভাবনাটা উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। সপ্তাহখানেক পরে টেলিফোনে লা সোয়েরে পত্রিকাকে মারিও বলছেন, ‘আমি কিন্তু পেশাদার অপরাধী নই বরং শিল্পরসিক। আমার বয়স মাত্র ২০, একজন এতিম। মা বেচে থাকলে হয়তো এই কাজটা আমি করতাম না। কিন্তু মানুষের দূর্ভোগ আমার সহ্য হয় না।…’

কি প্রসঙ্গে মারিও এই কথাগুলো বলছেন! কেনো দিচ্ছেন এই সাফাই! জানতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে চল্লিশ বছর পেছনে। ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ যখন চলছে, তখন দূরের ব্রাসেলসে বসে টিভিতে বাঙালীদের দুর্দশা দেখে অস্থির হয়ে পড়েন ২১ বছর বয়সী এই তরুণ। কিছু একটা করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর যা করলেন সেটা বেলজিয়ামের ইতিহাসে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর অপরাধের তালিকায় শীর্ষেই রয়ে গেছে। ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে ব্রাসেলসের মিউজিয়াম অব ফাইন আর্টস থেকে খোয়া গেলো ১৭ দশকের শিল্পী ইয়োহান ভারমিয়ারের আঁকা ‘দ্য লাভ লেটার’ নামের মাস্টারপিসটি। পরদিন জাদুঘর কর্তৃপক্ষের মাথায় বাজ পড়লো। বিশেষজ্ঞরা রায় দিলো এটা পেশাদার চোরদের কাজ। অপরাধীদের ধরতে অভিযানে নামলো বিশাল পুলিশ বাহিনী। তখনও কারো ভাবনাতেও আসেনি আনাড়ি এক তরুণ নিতান্তই ঝোঁকের মাথায় শিল্পমূল্যে অমূল্য এবং সেসময়কার বাজারদরে ৫ মিলিয়ন ডলারের পেইন্টিংটি দিশেহারার মতো লুকানোর পথ খুঁজছে।

ব্রাসেলসের সেই জাদুঘরে সে সন্ধ্যাতেই উদ্বোধন হয়েছিলো র‌্যঁবা এন্ড হিজ টাইম নামে ওই প্রদর্শনীটি। ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি ও ডেনমার্কের জাদুঘর থেকে বহুমূল্য সব চিত্র নিয়ে আসা হয়েছিলো ধারে। ভারমিয়ারের মাস্টারপিসটি এসেছিলো আমস্টারডামের রাইখস মিউজিয়াম থেকে। মূলত ষোড়শ ও সতেরো দশকের ডাচ শিল্পীদের নিয়েই ওই প্রদর্শনী যা উদ্বোধন করেন বেলজিয়ামের রাজকন্যা পামেলা। তিনিই দ্য লাভ লেটারকে অক্ষত দেখা শেষজন। দর্শকদের একজন হয়েই সে প্রদর্শনীতে আসেন মারিও। চিত্রকলা সম্পর্কে জ্ঞান আছে বলেই জানতেন কোনটি তার প্রয়োজন, আগেই দেখে রাখেন তার লক্ষ্যের অবস্থান। অবশ্য সাইজও একটা ব্যাপার ছিলো। লাভ লেটার আঁকা হয়েছে ১৫ বাই ১৭ ইঞ্চি ক্যানভাসে। দর্শকরা যেখন বের হচ্ছে, মারিও তখন লুকিয়ে পড়েন এক দেরাজে। জাদুঘরের নিরাপত্তাব্যবস্থা এখনকার মতো এমন আহামরি ছিলো না সে সময়। চার জন পুলিশ ভেতরে টহল দিতেন কোনো অস্ত্র ছাড়াই। রাত একটু গভীর হলেই বেরিয়ে আসেন মারিও। এরপর চলে যান ভারমিয়ারের ছবির সামনে। কিন্তু সেটা বেশ শক্ত করেই সাটানো ওয়ালে। এবার পকেট থেকে একটা আলু কাটার ছুরি বের করলেন। তারপর চারপাশ থেকে কেটে নিলেন ক্যানভাসটা। মুড়িয়ে ভাজ করে পকেটে ভরলেন। তারপর ভেন্টিলেটার বেয়ে বাইরে বেরিয়ে ট্যাক্সি চড়ে সোজা বাসায়। টঙ্গারেনের এক কয়লাখনির পাশে।
হাতে তো পেলেন। এবার এটা কোথায় রাখবেন এনিয়ে শুরু তার টেনশান। প্রথমে ঘরে রাখলেন, তারপর সেখানে নিরাপদ নয় ভেবে পাশের জঙ্গলে গিয়ে মাটি চাপা দিলেন। রাতে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আবার সেটা তুলে আনলেন ঘরে। নিজের ও কব্জায় থাকা সম্পদের নিরাপত্তাহীনতায় আতঙ্কিত মারিও পরদিন বল্ডারবার্গের হোটেল সিতেওয়েতে কাজের জন্য যোগাযোগ করলেন। তাকে ওয়েটার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলো। ভবিষ্যতে তার পরিচয় দেওয়ার সময় এই পেশাটাই উল্লেখ হবে বারবার। ইতিহাসে ভারমিয়ারের নাম ও সেরা কীর্তিটির সঙ্গে উচ্চারিত হবে অনামা এক বেলজিয়ান ওয়েটারের কথাও। যাহোক, কাজটা পেয়ে অনেকখানি নিশ্চিন্ত হলেন মারিও। কারণ তাকে থাকার জন্য একটা ঘরও দেওয়া হয়েছে। সেখানে তোষকের নিচে একটা বালিশের কভারের মধ্যে ঠাই নিলো ভারমিয়ারের প্রেমপত্র। এর হদিশ পেতে বড় অংকের পুরষ্কার ঘোষণা করা হয়েছে ইতিমধ্যে।

এভাবেই সপ্তাহখানেক কেটে গেলো। মারিও এদিকে রেডিওতে শুনে যাচ্ছেন পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা। কিরকম নৃশংসতা চললে লাখে লাখে মানুষ অজানার উদ্দেশ্যে সীমান্তপাড়ি দেয়! ১ অক্টোবর রাতে ফোন করলেন লা সয়ের পত্রিকায়। নিজের পরিচয় দিলেন থিল ফন লিমবার্গ বলে। ইংরেজীতে যা থিল অব লিমবার্গ। থিল উইলেনস্পিজেল হচ্ছেন ফ্লেমিশ লোকগাঁথার রবিনহুড (জার্মানি-হল্যান্ডেও যার সমান মর্যাদা)। তাসের গায়ে জোকারের যে ছবিটা থাকে সেটা কিন্তু এই থিলেরই প্রতিকৃতি। প্রচলিত আছে তিনি হাসি এবং মজার ছলে দূর্নীতিবাজদের মুখোশ খুলতেন একইসঙ্গে ধনীদের সর্বস্ব লুটে তা বিলিয়ে দিতেন গরীবদের। লা সয়েরের সাংবাদিক ওয়াল্টার শুল্ডেনকে মারিও জানালেন যে চুরি যাওয়া ভারমিয়ার এখন তার কাছে। এটা ফেরত পেতে হলে কর্তৃপক্ষকে ২০০ মিলিয়ন ফ্রাংক (চার মিলিয়ন ডলার) মুক্তিপণ দিতে হবে। তবে শর্ত আছে। টাকাটা তাকে নয়, দিতে হবে ক্যাথলিক দাতব্য সংস্থা কারিতাসে। আর সেটা খরচ করতে হবে পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীদের পেছনে!
ওয়াল্টার তার পরিচয় জানতে চাপাচাপি করেছিলেন। জবাবে নিজেকে লিমবার্গের থিল হিসেবেই দাবি করেন মারিও। পাশাপাশি একটা হুমকিও দেন, মুক্তিপণ ছাড়া পেইন্টিংটা উদ্ধারের চেষ্টা করা হলে এটা চিরতরে হারিয়ে যাবে। তার কাছে ল্যাটিন আমেরিকার এক ক্রেতার হদিস আছে, প্রয়োজনে সেটা তার কাছে বিক্রি করে দেবেন। আর বাকি যে ৩৯টা ভারমিয়ার আছে, সেগুলোও চুরি করবেন। স্বাভাবিকভাবেই ওয়াল্টার তার কাছে জানতে চান পেইন্টিংটা তার কাছে আছে এর প্রমাণ কি। তখন তাকে গোপন এক জায়গায় দেখা করার প্রতিশ্রুতি দেন মারিও, সঙ্গে ক্যামেরাও নিয়ে আসতে বলেন। ভোরের আলো ফোটার ঘণ্টাখানেক আগে লিমবার্গের ওই জঙ্গলের পাশে দেখা হয় দুজনের। প্লাস্টিকের একটা মুখোশ পড়ে ওয়াল্টারের মুখোমুখি হন মারিও। তারপর তাকে চোখবেধে নিয়ে যান গন্তব্যে। সেখানে গাড়ির হেডলাইটের আলোয় ফ্লাশ জালিয়ে ছবি তোলেন ওয়াল্টার। রোববার দুটো ছবি সহ লিমবার্গের থিলের দাবিনামার খবর ছাপায় লা সয়ের। সাথে সাথে সাড়া পড়ে যায় গোটা বেলজিয়ামে। 
এদিকে বেলজিয়ান রেডিও জানায় দু’দিন আগে তারা একই দাবিনামার চিঠি পেয়েছিলো। কিন্তু সেটা বিশ্বাসযোগ্য না হওয়ায় তারা প্রচার করেনি, বরং পুলিশকে দিয়েছে তদন্ত করতে। লা সয়েরের খবরে ডাচ জাদুঘর কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে ব্রাসেলসে আসে। তবে পেইন্টিংটা সত্যিই আসল কিনা সেটা যাচাই করার জন্য তারা একজন বিশেষজ্ঞ দিয়ে তা পরীক্ষা করার আবেদন জানায়। এসময় কোনোধরনের পুলিশি বাধার মুখে তাকে পড়তে হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেয় তারা। টোপ গেলেননি মারিও। দু’দিন পর ‘হেট ফক’ নামে আরেকটি পত্রিকায় টেলিফোন করেন তিনি। এবার সময়সীমা বেধে দেন। ৬ অক্টোবরের মধ্যে মুক্তিপণ বাবদ ২০০ মিলিয়ন ফ্রাঙ্ক পরিশোধ না করলে তিনি পেইন্টিংটি বিক্রি করে দেবেন বলে হুমকি দেন। শুধু তাই নয়, পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীদের জন্য এই মুক্তিপণ পরিশোধের ঘটনাটা টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করতে হবে- এই শর্তও জুড়ে দেন। সেখানে প্রেমপত্রের বীমার দায়িত্বে থাকা ব্রিটিশ কোম্পানি গ্রায়েম মিলারকে উপস্থিত থাকতে হবে চুক্তিপত্রে সই করার সময়। প্রস্তাব শুনে হতভম্ব হয়ে পড়ে কর্তৃপক্ষ। এত অল্প সময়ে এতটাকা সরাসরি সম্প্রচার করা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হস্তান্তরকে অসম্ভব বলে জানায় তারা।

বিআরটি রেডিওতে এই বক্তব্য শুনে ৬ তারিখ সকালে সেখানেই ফোন করলেন মারিও। সেসময় চলছিলো জনপ্রিয় শো ‘টু বেড অর নট টু বেড’, মারিওকে সেখানেই সরাসরি এন্ট্রি দেওয়া হয়। নিজের দাবি এবং এর প্রেক্ষাপট হাজার হাজার তরুণ-যুবার সামনে তুলে ধরেন লিমবার্গের রবিনহুড। তার সোজাসাপ্টা কথাবার্তা, মহত্ব ও সরলপনায় মুগ্ধ বনে যায় তারা। এদিকে কিন্তু সর্বনাশ হয়ে গেছে। হ্যাসেটের একটি পেট্রোলপাম্প থেকে ফোন করেছিলেন মারিও। সেটা পাম্পের অপারেটর শুনে ফেলেন। পুরষ্কারের লোভে খবর দেন পুলিশে। মপেডে চড়ে বেশীদূর যেতে পারেননি। ধাওয়ার মুখে আশ্রয় নেন এক গোয়ালে। লিমবার্গের রবিনহুডকে দুটো গরুর মাঝখানে গোবরের স্তুপে কয়েকটা খড় দিয়ে ঢাকা অবস্থায় আবিষ্কার করে পুলিশ। হোটেল সিতেওয়ের রান্নাঘরের পেছনে শোবার ঘর থেকে উদ্ধার হয় দোমড়ানো প্রেমপত্র। জানা যায় ট্যাক্সিতে বাড়ি ফেরার পথে ওটার ওপর বসেছিলেন মারিও। মাসছয়েক পর মার্কিন বিশেষজ্ঞ শেলডন কেকের তত্বাবধানে খানিকটা চেহারা ফেরে দ্য লাভ লেটারের। জোড়া লাগে ক্ষতস্থান। স্বস্তি ফেরে শিল্পরসিকদের মনে। মন্দের ভালো প্রেমপত্রকে ফিরে পাওয়াটাকেই বিশাল কিছু বলে প্রবোধ মানেন তারা।
লিমবার্গের থিলের গ্রেফতারের খবরে জনগনের মধ্যে কিন্তু উল্টো প্রতিক্রিয়া ঘটে। একটা মহৎ লক্ষ্যে তার মতো সরল-সিধে তরুণের এমন বেপরোয়া ও অভিনব উদ্যোগকে অপরাধ বলে মানতে অস্বীকার করে তারা। সংবাদপত্রগুলো, রেডিও-টিভি তার পাশে দাঁড়ায়। এমনকি তার হোটেলের মালিক-কর্মচারিরাও রাস্তায় নামেন মারিওর নিঃশর্ত মুক্তিদাবি করে পিটিশনে সাক্ষর সংগ্রহে। সেই সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে দাতব্য সংস্থাগুলো। মারিওর আসল পরিচয় ছাপিয়ে সবার মুখে থিল অব লিমবার্গই ব্যাপ্তি পায়। পাবলিক সেন্টিমেন্টে প্রশাসন নরম হতে বাধ্য হয়। দুবছরের কারাদন্ড হয় মারিওর, কিন্তু ছয়মাস সাজা খেটেই মুক্তি পেয়ে যান তিনি।

ট্রাজেডির সেটা শুরু মাত্র। কারাবাস তার ওপর প্রচণ্ড মানসিক আঘাত হয়ে এসেছিলো। তার প্রায় সব চুলই পড়ে যায়। অপ্রকৃতস্থ মারিও হোটেলে কাজে ফিরলেও মাসখানেক পর কাউকে কিছু না বলে উধাও হয়ে যান। পরিচিত এক মেয়েকে বিয়ে করেন, তার একটি মেয়েও হয়। কিন্তু দু’জনের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। জানা যায় মারিও স্ত্রীকে মারধোর করতেন, তার ওপর শয়তান ভর করেছে এই অভিযোগে। শোনা যায় ল্যুভর থেকে দ্য ভিঞ্চির মোনালিসা চুরি করার পরিকল্পনা করেন মারিও এবং গ্রেফতার হন প্যারিসে। সময়টায় পুরোপুরি ভবঘুরে তিনি। রাস্তায় রাস্তায় কাটাতেন, শুতেন গাড়িতে। ১৯৭৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর লিজে এক রাস্তার পাশে পার্ক করে রাখা গাড়িতে মুমূর্ষ অবস্থায় পাওয়া যায় মারিওকে। বলা হয় তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। আভ্যন্তরীন রক্তক্ষরণে দশদিন পর ১৯৭৯ সালের ৫ জানুয়ারি মারা যান লিমবার্গের রবিনহুড। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের এক অজানা-বেনামী সুহৃদ। জন্মস্থান টঙ্গারেনের নেরেমে এক পুরোনো কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে।

কিন্তু এখানেই শেষ নয় মারিও উপাখ্যান। বছর দুয়েক আগে হ্যাসেল্টের কুরিঞ্জেন ব্রিজের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন এক প্রেমিকজুটি। স্যু সমার্সের জন্ম ‘৭১য়ে, দ্য মর্ণিং পত্রিকার আদালত প্রতিবেদক। একটু ফিকে হয়ে আসা বিশাল এক গ্রাফিটি (আমরা যাকে চিকা বলি) তার নজর কাড়লো, লেখা- লং লিভ থিল। এর মানে কি জানতে চাইলেন চালকের আসনে থাকা স্টিন মিউরিসের কাছে। স্টিন একাধারে গায়ক, সঙ্গীতকার এবং টিভিঅনুষ্ঠান নির্মাতা। চলচ্চিত্রও বানিয়েছেন কয়েকটা। স্টিন পুরো ঘটনাটা বলতে পারলেন না, আবছা কিছুটা জানেন লোকশ্রুতি হিসেবে। কারণ ১৯৭১ সালে তারও বয়স ছিলো মাত্র ৬। এরপর দুজন ঠিক করলেন ঘটনাটা জানতে হবে। ঘাটতে ঘাটতেই পুরো ইতিহাসটা তাদের সামনে চলে এলো। পাশাপাশি জানলেন ওই গ্রাফিটি হোটেল সিতেওয়ের মালিকের ছেলের হাতের আঁকা। জানলেন ২০০৭ সালে দ্য কোয়েস্ট নামে একটি থিয়েটার গ্রুপ মারিওকে নিয়ে একটি নাটক করেছে।

চমকিত এই জুটি ঠিক করলেন লিমবার্গের রবিনহুডকে আবার জনসমক্ষে আনার, তাকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার। স্টিন সিদ্ধান্ত নিলেন মারিওর ঘটনা নিয়ে একটা তথ্যচিত্র বানাবেন আর স্যু ঠিক করলেন বই লিখবেন। মারিওর অভিযাত্রার ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে মুক্তি দেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও গত বছর ১০ অক্টোবর হোটেল সিতেওয়েতে একটি প্রিমিয়ার হয়েছে ‘থিল ফন লিমবার্গ’ নামের ডকুমেন্টারিটির। অবশ্য একই নামে একটি শর্টফিল্মও তৈরি করেছেন আরেক ডাচ পরিচালক থমাস বিয়ারটেন। তবে তারটার সঙ্গে গুণগত মানে ব্যাপক পার্থক্য স্টিনের তথ্যচিত্রের। সেখানে আর্কাইভাল ফুটেজ, পত্রিকার কাটিং এবং সংশ্লিষ্ঠদের সাক্ষাতকার দিয়ে মারিও রয়ম্যান্সের তখনকার মনোজগতটা উম্মোচন করেছেন তিনি। একইদিন স্যু সমার্সও প্রকাশ করেছেন তার বই ‘মারিও’।

কি দূর্ভাগা জাতি আমরা। মুক্তিযুদ্ধের এক পরম সুহৃদের নামটাই জানতে চল্লিশ বছর চলে গেলো আমাদের!

স্টিন মিউরিসের ডকুমেন্টারির প্রিভিউ দেখতে পারবেন এখানে:
http://video.canvas.be/documentaire-tijl-van-limburg

…………………………………………………………………………………………………………..

BANGLADESH GENOCIDE ARCHIVE

শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা

…………………………………………………………………………………………………………..

Dear reader sent your writing we will published in this page.

Discussion

No comments yet.

Leave a comment